ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অনেক অসঙ্গতি থাকার দাবি করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী।
তিনি বলেছেন, ‘এসব অসঙ্গতি আগামী ১ মাসে দূর করা সম্ভব না হলে ৮ জুন এ ফ্রন্ট থেকে আমাদের দলকে প্রত্যাহার করে নেব।’ বৃহস্পতিবার মতিঝিলে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাদের সিদ্দিকী এ আলটিমেটাম দেন।
এর আগে একই স্থানে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বর্ধিত সভা হয়। সভায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে না থাকার পক্ষে মত দেন বেশিরভাগ নেতা।
বিশেষ করে বিএনপির সঙ্গে আপাতত একসঙ্গে চলার যৌক্তিকতা নেই বলেও দাবি করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা। তারা বলেছেন, ‘বিএনপির কথা কাজে কোনো মিল নেই। দলটির ভবিষ্যৎও নেই। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গ ত্যাগ করাই ভালো।’
একাধিক সূত্রে জানা যায়, নেতাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে আরও কিছুদিন সময় নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় দলের এক নেতা বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আদর্শিক কারণে জোট করিনি।
জোট করেছি নির্বাচন সামনে রেখে। নির্বাচনে ভরাডুবির পেছনে বিএনপির সাংগঠনিক ব্যর্থতা আছে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপিতে এখন কোনো চেইন অব কমান্ড নেই।
এক নেতা একরকম কথা বললেও পরক্ষণেই আরেক নেতা আরেক রকম বলেন, যার খেসারত ভোটে দিতে হয়েছে।’ একজন নেতা বলেছেন, ‘বিএনপির জনসমর্থন থাকলেও মনোনয়ন বাণিজ্যসহ নানা কারণে দলটি পিছিয়ে পড়েছে।
এরসঙ্গে ছিল দলটির শীর্ষ নেতাদের ছলচাতুরী।’ পরে বৈঠকে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘রাজনীতিতে ভুল হয়। সেই ভুল শুধরে নিতে হয়।
একটি অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম, নানা কারণে ব্যর্থ হয়েছি। এর দায়ভার মাথায় নিয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি নিজেই ক্ষত-বিক্ষত। আরও আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’
পরে কাদের সিদ্দিকী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ৫ নভেম্বর আমরা যোগদান করি।
কিন্তু জোটে নির্বাচনের পর অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী ঐক্যফ্রন্টের কিছু কাজ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
তারা সঠিকভাবে চলতে পারেনি। নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি ঐক্যফ্রন্ট। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল শাহবাগে গণজমায়েত করতেও ব্যর্থ হয়েছি আমরা।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের নামে জঘন্য নাটক হয়েছে। পৃথিবীতে এমন নজির নেই। নির্বাচন পরবর্তী ঐক্যফ্রন্ট থেকে বলা হয়েছিল, আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি।
রাজনৈতিক স্বার্থে সেটা ছিল যথার্থ। কিছু সময় যেতে না যেতেই গণফোরাম সদস্য সুলতান মুনসুর সংসদে যাওয়ার জন্য পাঁয়তারা করলেন, তাকে বারণ করা হল।
কিন্তু তিনি শপথ নিলেন এবং সংসদে গেলেন। তাকে বহিষ্কার করা হয়। আবার মোকাব্বির খান শপথ নিলে ড. কামাল হোসেন তাকে গেটআউট বলেন।
পরে দেখা যায় গণফোরামের বিশেষ সভায় মোকাব্বির খান উপস্থিত। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মানুষ জানতে চাইলে আমরা জবাব দিতে পারি না।’
কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বিএনপির তথাকথিত নির্বাচিত ৬ জনের মধ্যে প্রথম যখন একজন শপথ নিলেন, তখন তাকে বহিষ্কার করা হল। পরে যখন ৪ জন শপথ নিলেন তাদের স্বাগত জানানো হল।
কিন্তু মির্জা ফখরুল শপথ থেকে বিরত থাকলেন। এসব মানুষকে বিভ্রান্ত করে।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার আলটিমেটাম দেয়ার আগে জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মাহমুদুর রহমান মান্না, মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের জোটের মধ্যে অসঙ্গতির কথা বলেছি।’ বর্ধিত সভায় কি আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়নি, বিশেষ করে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের পর কারও সঙ্গে আলোচনা না করে সাতজনের শপথ গ্রহণ, কেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিচালনায় এত দুর্বলতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না- এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জোটকে এক মাস সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে যারা সংসদে গেছেন ভবিষ্যতে এরা সবাই মীরজাফরের চেয়েও ঘৃণিত হিসেবে বিবেচিত হবেন।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তার মুক্তি জনগণের আদালতেই হবে। প্যারোলে বা অন্ধকারে তার মুক্তি দাবি করি না। তার এমনিতেই জামিন পাওয়ার কথা