ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ জাতীয় সংসদের নিজস্ব ২২ উপসচিব এবার গাড়ি কিনতে বিশেষ সুবিধায় ঋণ পাচ্ছেন। সরকারের অন্যান্য বিভাগের মতো তাদেরও সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়িসেবা নগদায়ন সুবিধা দেয়া হবে।
তবে প্রেষণে আসা কোনো কর্মকর্তা এ সুবিধা পাবেন না। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ সচিবালয় কমিশনের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বর্তমানে কর্মরত নিজস্ব ২২ উপসচিব বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাদের অনুকূলে গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম বাবদ জনপ্রতি ত্রিশ লাখ টাকা হারে মোট ছয় কোটি ষাট লাখ টাকা (এককালীন) বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর বাইরে গাড়িসেবা নগদায়ন বাবদ জনপ্রতি মাসিক পঞ্চাশ হাজার টাকা হারে বছরে এক কোটি বত্রিশ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।
এ ছাড়াও আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় সংসদের জন্য ৩২৮ কোটি ২২ লাখ টাকার বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। যা চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বেশি।
কমিটির সদস্য প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতার পক্ষে বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং বিশেষ আমন্ত্রণে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা সরকারি গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা পেলেও এতদিন সংসদের কর্মকর্তারা তা পেতেন না।
এখন সেই সুবিধা সংসদের নিজস্ব কর্মকর্তারাও পাবেন। তবে প্রেষণে যাওয়া কর্মকর্তারা এ সুবিধা পাবেন না। বর্তমানে সংসদের ২২ জন উপসচিব রয়েছেন। তারা আবেদন করলে গাড়ি বা গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম পাবেন।
এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা ২০১৮ (সংশোধিত) জারি করে। সরকারের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, সচিব/সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা আগে থেকেই সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি ব্যবহারে প্রাধিকার ভোগ করে আসছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২০১৭ সালের ১১ জুন সরকারের উপসচিবদের এবং গত ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর মেজর/সমর্যাংক ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল/সমর্যাংক কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক সরকারি গাড়ি ব্যবহারের প্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সংসদ সচিবালয় ছাড়া এই পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এসব সুবিধা পান। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা এসব প্রাধিকারের দাবি করলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছিল না। এ জন্য বিষয়টি কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার ব্যবস্থা করছিলেন তারা। এর অংশ হিসেবে সংসদ সচিবালয় কমিশন সভায় বিষয়টি কার্যপত্র হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, সার্বভৌম প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্টদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতিবছরই কমিশন বৈঠকে বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়। পরে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ের নতুন পদ সৃষ্টি, প্রকল্প প্রণয়নসহ বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিশন বৈঠক শেষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বরাদ্দ অনুমোদনের তথ্য জানান।
বৈঠকে সংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন বিভাগে নতুন পদ সৃষ্টিসহ পদোন্নতির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনাগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। এ ছাড়া সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, মেরামতসহ সংসদ ভবনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করে কমিটি। বৈঠকে সংসদের লেক সংস্কারের সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দফতরের আপ্যায়ন ভাতা মাসে ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে বিশ হাজার টাকা, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে জনপ্রতি আপ্যায়ন ভাতা ১০০ টাকার জায়গায় ২০০ টাকাসহ কয়েকটি খাতে ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্পিকার জানান। বর্তমানে স্পিকার ঢাকার বাইরে গেলে ১৯৯৬ সালে কেনা একটি নিশান পেট্রল কার ব্যবহার করেন। এ গাড়িটির পরিবর্তে একটি নতুন গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সংসদের জন্য নতুন ১০টি পাজেরো গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত হয়।