ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বহুল আলোচিত ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত হত্যাকাণ্ডে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ব্যপক ভাবে সমালোচিত এবং নিন্দিত সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের দেশ ছেড়ে পালানোর যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রোববার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, এ ঘটনায় নুসরাত হত্যাকাণ্ডে ওই পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে পুলিশ কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, যা দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটা রীতিমতো অশনিসংকেত।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে আমরা জেনেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় সাবেক ওসির বিরুদ্ধে গত ২৭ মে পরোয়ানা জারির পর তা ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয় হয়ে রংপুর রেঞ্জে পৌঁছাতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় লেগে যায়। এখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি। এ সুযোগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন পালিয়ে গেলেন বলা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে যেখানে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া আটক করাই স্বাভাবিক, সেখানে বহুল আলোচিত একটি মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব পালনে এ ধরনের দৃশ্যমান ব্যর্থতার ফলে যৌক্তিকভাবেই নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে পুলিশের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।’
এর আগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দেয়া অভিযোগপত্র থেকে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসির অব্যাহতিও প্রশ্নবিদ্ধ ছিল উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা এবং হত্যাকারীদের সুরক্ষা প্রদানে যোগসাজশের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার পরও অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ রয়েছে কি না বা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য হওয়ায় তাকে দায়মুক্তি দেয়া হচ্ছে কি না- আমরা সেই প্রশ্ন তুলেছিলাম। এখন তার পালিয়ে যাওয়ার খবরে আমাদের সেই আশঙ্কা আরও জোরালো হলো। ঘটনাপ্রবাহ থেকে তাকে কার্যত পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।’
নুসরাত হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আবারও বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘দেশে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা গভীরতম উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমন অবস্থায় পুলিশ বাহিনীর কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ভূলুণ্ঠিত হবে। তাই ওসি মোয়াজ্জেমকে দ্রুত আটক করে বিচারের মুখোমুখি করার পাশাপাশি নুসরাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের নিরপেক্ষ বিচারবিভাগীয় তদন্তের বিকল্প নেই।’
২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যায় নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন। এর আগে গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে গায়ে কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাত জাহান রাফিকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে মারা যান তিনি।
ওসি মোয়াজ্জেমের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পিবিআই। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানা জারির দুদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে ১১ জুন।