DMCA.com Protection Status
title="৭

এবার ভারতের পরিত্যক্ত পুরাতন ইঞ্জিনে চলবে আমাদের নতুন ট্রেন।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  আমাদের নতুন ট্রেন চালাতে এবার ভারত থেকে অতি পুরাতন এবং পরিত্যক্ত ইঞ্জিন ভাড়া করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ জন্য দেনদরবার করতে একটি প্রতিনিধিদল গত সপ্তাহে ভারতে গেছে।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, নতুন ট্রেন চালু করতে ইঞ্জিন সংকট থাকায় ভারত থেকে ২০টি ইঞ্জিন ভাড়া আনার প্রক্রিয়া চলছে। এজন্য ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষের সাথে প্রাথমিকভাবে কয়েক দফা আলোচনা করা হয়েছে। 

ওই কর্মকর্তা বলেন, ভারতও ইঞ্জিন দিতে সম্মত আছে। কারণ ভারতে বিভিন্ন রুটে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন চালু করায় বেশ কিছু ইঞ্জিন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া দেশটির সব রেলপথ ব্রডগেজে রূপান্তর করায় মিটারগেজ ইঞ্জিনও অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। এসব ইঞ্জিন ভাড়া আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, ইঞ্জিনপ্রতি প্রতিদিন ৩০ হাজা টাকা ভাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। এ নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে, নতুন ইঞ্জিনের পরিবর্তে ভারতের পুরাতন ইঞ্জিন ভাড়া নেয়াকে খুব একটা ভালো চোখে দেখছেন না রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা। রেলের একজন প্রকৌশলী বলেন, ভারতের পুরাতন ইঞ্জিনের উপর নির্ভর করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হবে। যেগুলো ইঞ্জিন আনা হচ্ছে বলে জেনেছি সেগুলো বহুদিন ধরে পড়ে আছে। সেগুলো চালু করলেও কদিন চলার পর এগুলো নানা সমস্যার সৃষ্টি করবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তখন এগুলো ‘বিষফোঁড়া’ হয়ে দেখা দিবে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রেলওয়ের সচল ইঞ্জিন রয়েছে ২৭৩টি। এসব ইঞ্জিন দিয়ে সারা দেশে ৩৪১টি যাত্রীবাহী এবং বেশ কয়েকটি পণ্যবাহী ও তেলবাহী ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। এসব ইঞ্জিনের মধ্যে আয়ুষ্কাল পেরিয়ে যাওয়া তথা ২০ বছরের বেশি বয়সী রয়েছে ১৯৫টি। এগুলোর বয়স ২১ থেকে ৬৫ বছর। মাত্র ৭৮টির আয়ুষ্কাল ২০ বছরের কম।

 

পুরোনো এসব ইঞ্জিনের মধ্যে ১৩৬টির সময়মতো মেরামত (ওভারহোলিং) করা হয়নি। অথচ প্রতিটি ইঞ্জিন তিন ও ছয় বছর পর পর হালকা ও মাঝারি মানের ওভারহোলিং করা জরুরি। আর ১২ বছর পর করতে হয় ভারি ওভারহোলিং। সময়মতো ওভারহোলিং না করায় ইঞ্জিন বিকলসহ এগুলোর পরিবহন সক্ষমতা কমে গেছে। এতে সেবা প্রদান বিঘি্নত হচ্ছে রেলওয়ের। বেশ কয়েক বছর রেলের বহরে যুক্ত হয়নি নতুন কোনো ইঞ্জিন। যদিও এর মধ্যে নতুন কোচ যুক্ত হয়েছে ২৭০টি। আরও নতুন ৭৫০টি কোচ কেনার প্রক্রিয়া চলমান আছে। এগুলো দ্রুতই যুক্ত হবে রেলের বহরে। এ অবস্থায় চরম ইঞ্জিন সংকটে পড়েছে রেলওয়ে। পুরাতন ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালাতে গিয়ে প্রায়ই বিকল হয়ে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। গত ঈদুল ফিতরের আগে ইঞ্জিন বিকল হয়ে সিউিউল বিপর্যয়ে পড়ে নীলসাগর এক্সপ্রেস। গত মঙ্গলবার সিলেট রুটে কালনী এক্সপ্রেসের তিনটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করে ট্রেনটি। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ১২০টি ইঞ্জিন কেনার জন্য চুক্তি করেছে রেলওয়ে। তবে এসব ইঞ্জিন রেলের বহরে যুক্ত হতে কমপক্ষে দুবছর লাগবে। তাই অন্তর্বতীকালীন সময়ে সংকট মেটাতে ভারতের পরিত্যক্ত ও পুরোনো ইঞ্জিন ভাড়া আনার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে। এ জন্য একটি প্রতিনিধিদল গত সপ্তাহে ভারতে গেছে।

রেলওয়ের তথ্যমতে, বর্তমানে রেলওয়ের মিটারগেজ ইঞ্জিন রয়েছে ১৭৯টি। এর মধ্যে ৪০টির আয়ুষ্কাল ২০ বছরের কম। ৪৫টির আয়ুষ্কাল ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ইঞ্জিন রয়েছে ৩১টি আর ৪১ বছরের বেশি বয়সের ইঞ্জিন ৬৪টি। আর সারা দেশে চলাচলরত ব্রডগেজ ইঞ্জিন রয়েছে ৯৪টি। এর মধ্যে ৩৯টির আয়ুষ্কাল ২০ বছরের কম। ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ইঞ্জিন রয়েছে ২৪টি আর ৪১ বছরের বেশি বয়সের ইঞ্জিন ৩১টি।

 

এদিকে ১৭৯টি মিটারগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে ১৪টির হালকা ও ১০টির মাঝারি ওভারহোলিং দরকার। আর ৬১টির ভারী ওভারহোলিং দরকার। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জনবল ও অর্থ সংকট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে এ ৮৫টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ওভারহোলিং করা যাচ্ছে না। আর ৯৭টি ব্রডগেজ ইঞ্জিনের মধ্যে তিনটির হালকা, সাতটির মাঝারি ও ৪১টির ভারি ওভারহোলিং দরকার। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও এগুলো ওভারহোলিং করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, রেলের বহরে যুক্ত হওয়া নতুন কোচ দিয়ে স¤প্রতি ঢাকা-রাজশাহী ও ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চালু করা হয়েছে বিরতিহীন নতুন দুটি ট্রেন। ঈদুল আযহার আগেই ঢাকা-রংপুর রুটে আরও একটি নতুন ট্রেন চালুর ঘোষণা দিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। জাতীয় সংসদে তিনি বলেছেন, কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকা- বেনাপোল রুটে দুটি নতুন ট্রেন চালু করা হবে। একই সঙ্গে ঢাকা-সিলেট, সিলেট-চট্টগ্রাম, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে আরও তিনটি নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। এছাড়া নতুন কোচ রেলবহরে যুক্ত হলে ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-চট্টগ্রাম, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের পুরোনো ও জরাজীর্ণ কোচ পাল্টে আধুনিকায়ন করা হবে।

এর বাইরে চলতি বছরে জামালপুরবাসীর জন্য আরও চারটি নতুন ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন ট্রেনগুলো বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশন, তারাকান্দি, সরিষাবাড়ি, জামালপুর ও ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকা আসবে। আবার ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, সরিষাবাড়ি, তারাকান্দি হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশনে যাবে। এছাড়া ঢাকার আশেপাশের জেলার সঙ্গে স্বল্প দূরত্বের বেশ কয়েকটি নতুন ট্রেন চালু করা হবে।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ( রোলিং স্টক) শামছুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, কয়েক মাসের মধ্যে অন্তত ১৫টি নতুন ট্রেন চালুর নির্দেশনা রয়েছে রেলমন্ত্রীর। তাই সাধারণ মানুষের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে ২০টি ইঞ্জিন ভাড়ায় আনা হচ্ছে। এসব ইঞ্জিন দ্বারা নতুন ট্রেন চালানো হবে। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব ইঞ্জিন পাওয়া যাবে।

ইঞ্জিনপ্রতি প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকা ভাড়া হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেছেন, পৃথিবীর অনেক দেশে ইঞ্জিন ভাড়া দেয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। দু’দেশের সরকার পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে নতুন কেনা ইঞ্জিন দেশে চলে এলে ভারতীয় ইঞ্জিনগুলো ফেরত দেওয়া হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!