ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে মনোনয়ন বাণিজ্যটা করেছে সেই টাকাগুলো কোথায় রেখেছে খোঁজ নিলেই সুইচ ব্যাংকের হিসাবটা মিলে যাবে। বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বলেছেন দেশের টাকা সুইচ ব্যাংকে যাচ্ছে। উনি যাদের (বিএনপি) যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকেন, যাদের কথা এত বেশি বলেন, তাদের কথাটিই বেশি এসেছে। এমনও তথ্য এসেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচন যারা (বিএনপি) ৩০০ সিটে ৬৯২ জন মনোনয়ন পেল, একটা আসনের বিপরীতে ৩ জনের অধিক বা দুই জনের অধিক মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে যে বিশাল বাণিজ্যটা করা হলো, মনোনয়ন বাণিজ্যের সেই টাকাগুলো তারা (বিএনপি) কোথায় রাখলো?
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ব্যাংকের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হবে। কারণ ব্যাংকে উচ্চহারে সুদ থাকলে শিল্পখাত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বিকশিত হয় না। আর খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনতে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা যুগোপযোগী।
শনিবার বিকালে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের ওপর সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা রয়েছে। যা পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ যদি কল্যাণ রাষ্ট্রই না হবে, দারিদ্রমুক্ত না হবে, মানুষের দৌড়গোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা না পৌছায়- তবে দেশের এতো উন্নয়ন-অগ্রগতি হলো কীভাবে?
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হওয়ায় তাঁর অনুরোধে এবারই প্রথম অর্থ বিল পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে জনবান্ধব, উন্নয়নমুখী ও সুষম বাজেট হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এই বাজেটে দেশের প্রত্যেকটি জনগণ উপকৃত হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারা ও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।
আরো পড়ুন: ইরানকে ভয় দেখাতে মার্কিন যুদ্ধবিমান কাতারে
তিনি বলেন, অতীতের সকল সরকারের আমলের বাজেট ছিল বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর। উন্নয়ন বাজেটও ছিল বিদেশ নির্ভর। কিন্তু আমরা দক্ষতার সঙ্গে প্রতিবার বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছি বলেই এবারের বাজেটে বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ মাত্র দশমিক ৮ শতাংশ। আর উন্নয়ন বাজেটও আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এর মাধ্যমে আমাদের আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মমর্যাদাশীলতা প্রমাণ করেছে। প্রতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাও আমাদের অন্যতম সাফল্য। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা (সামরিক স্বৈরশাসক) ক্ষমতায় থেকে শুধু নিজেরা দুর্নীতি করেনি, দুর্নীতিকে সমাজে ব্যাধির মতো ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান বা নীতি হচ্ছে জিরো টলারেন্স। দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠনে আমাদের প্রচেষ্টা ও অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বাজেটের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। সমৃদ্ধির আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের- শিরোনামে এবার ৫ লাখ ২৩ লাখ ১৯০ কোটি টাকার সর্ববৃহত্ বাজেট দেয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে সারাদেশেই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। এবার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের হিসাব অনুযায়ী সারাবিশ্বে প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে ২০টি দেশ অবদান রাখছে, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। টানা দুই মেয়াদে দেশের উন্নয়ন-সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মানুষের গড় আয়ু ৬৫ থেকে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, মানুষের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ থেকে ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। অতি দরিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে ১১ ভাগে নামিয়ে এনেছি, ৪৫ ভাগ দারিদ্র্যতাকে ২১ ভাগের নীচে নামিয়ে আনতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দারিদ্র্যের হার আগামীতে ১৬/১৭ ভাগে নামিয়ে আনবো।
সংসদ নেতা বলেন, বর্তমান সরকার চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার, জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকরের মাধ্যমে জাতিকে ভার ও দায়মুক্ত করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে শক্তহাতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে।