ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পতিত স্বৈরাচার,সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বয়োবৃদ্ধ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘লাইফ সাপোর্টে’ থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন।
সোমবার বিকালে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এরশাদকে দেখে আসার পর তিনি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, জাপা চেয়ারম্যানের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
গত ২২ জুন থেকে সিএমএইচে ভর্তি এরশাদ। রবিবার রাতে তার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। তবে পরদিন তার ভাই জি এম কাদের বলেন, জাপা চেয়ারম্যানের অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও তিনি বেঁচে আছেন। তাদের বা সিএমএইচের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না এলে শারীরিক অবস্থা নিয়ে কিছু প্রকাশ না করারও অনুরোধ করেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী এরশাদকে দেখে এসে বলেন, ‘ওনার অবস্থা ক্রিটিক্যালই বলা যায়। লাইফ সাপোর্টে আছে। ওভারঅল সিচুয়েশন ক্রিটিক্যাল।…ডাক্তাররা সকলেই মত দিয়েছেন, এ মুহূর্তে বাইরে নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। এখন যত ধরনের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব, তা এখানেই দেওয়া সম্ভব। এখন বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
এদিকে এরশাদের শারিরীক অসুস্থতার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাঁর দুই স্ত্রীকে নিয়ে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোর কারণে প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদের হাসাপাতালে যাতায়াতের খবর পাওয়া গেলেও মিলছে না দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশার কোনো খবর। যদিও এরশাদের অসুস্থতার পর থেকেই নিজের ফেসবুক পেজ থেকে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস দিচ্ছেন বিদিশা। সেখানে তিনি দাবি করছেন, এরশাদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না তিনি এবং তাঁর ছেলে এরিক।
এদিকে ১ জুলাই সোমবার দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন এরশাদের শয্যা পাশে বসে প্রায় ঘণ্টাখানেক কোরআন তেলাওয়াত করেছেন তাঁর প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ। অন্যদিকে ৩০ জুন রবিবার বিদিশা এক স্ট্যাটাসে প্রশ্ন করেছেন- ‘জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কি এরিক তার বাবাকে দেখতেও পারবে না? পারবে না কি শেষবারের মতো একবার বাবা বলে ডাকতে?’
বিদিশার ফেসবুকের সম্পূর্ণ স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো-
"এই নির্মমতার শেষ কোথায়? স্ত্রী দেখতে পারছেনা তার স্বামীকে সন্তান দেখতে পাচ্ছ না তার পিতা কে, এরকম এক নির্মমতার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হচ্ছে আমার দিনগুলো। সবসময়ই বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠছে এই বুঝি কোন দুঃসংবাদ শুনি, আর কারো কথা বলছিনা আমি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবের কথা বলছি l তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। অথচ তাকে নিয়ে চলছে রাজনীতি, কেউ বা চায় তার পদ দখল করতে, কেউ বা তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। কি নির্দয় এ সমাজের মানুষগুলো? যাদের জন্য জীবনে এত কিছু করে গেলেন তিনি, তারাই আজ তার মৃত্যু কামনা করছেন। বাবার মৃত্যু ক্ষণে ছেলেকে সুকৌশলে দূরে রাখা হচ্ছে, কেউ কেউ তাকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখাও শুরু করেছেন।
আমি অতো সাত, পাঁচ বুঝিনা, আর এগুলো বুঝতে চাইও না, আমি চাই আমার ছেলেটা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠুক, বাবার স্বপ্ন পূরণে সেও এক সময় দেশ ও জাতির জন্য কাজ করবে, কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে আমার ছেলেকে নিয়ে, ও যেন আমার মত কোনো ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়। তাই আমি এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টির সকল নেতা কর্মীদের অনুরোধ করবো, আপনাদের নেতার এই দুঃসময়ে তার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান সত্য উদঘাটন করুন, ষড়যন্ত্র হাত থেকে এরিকে বাঁচান।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কি এরিক তার বাবাকে দেখতেও পারবে না ? পারবে না কি শেষবারের মতো একবার বাবা বলে ডাকতে ? এই প্রশ্ন জাতীয় পার্টির প্রতিটি নেতাকর্মীর কাছে আমার রইল, পাশাপাশি ওনার সুস্থতার জন্য সকলকে দোয়া করার অনুরোধ রইলো। বিদিশা।"