ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বরগুনায় দেশ কাঁপানো রিফাত হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্যে আসে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর জন্য। কিন্তু সেটা ছিল ঘটনার শেষ দৃশ্য, ঘটনার শুরু হয় আরো আগে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে তারা ছাড়াও ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের অন্য সদস্যরাও এ ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল।
বরগুনা সরকারি কলেজের ভেতরে নোটিশ বোর্ডের সামনে রিফাতকে প্রথম পেটানোর সময় সিসি ক্যামেরায় ছবিগুলো থাকার কথা। কলেজের অধ্যক্ষের দাবি ঘটনার দুই দিন আগে বজ্রপাতে সিসি ক্যামেরাগুলো অকেজো হয়ে গেছে।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ দিনের পর দিন কলেজ ক্যাম্পাসে ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের অপরাধ আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন। এদিকে তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হয়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, বরগুনা সরকারি কলেজ মাদক মুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, বহিরাগত মুক্ত। কলেজের বাইরে কোথায় কি ঘটে এইটা তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে না।
বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কলেজের পরিবেশকে খুব ভালোভাবে উপস্থাপন করলেও শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের বক্তব্য কলেজের পরিবেশ ছিল রীতিমত ভীতিকর ও ভয়ংকর। সবার সাথে কথা বলতে গেলে এখনও উঠে আসে কলেজ ক্যাম্পাসে ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপের নানা নির্যাতনের চিত্র। আর কলেজের অধ্যক্ষের প্রশ্রয়েই বহিরাগতরা এক প্রকার অফিস খুলে প্রভাব বিস্তার করতো বলে দাবি তাদের।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানান, লেখাপড়া হতো না এখানে, বহিরাগতরা কলেজের ভেতর রাজনীতি করে, এগুলো বন্ধ না হলে শিক্ষার পরিবেশ ফিরবে না। রিফাত ফরাজি ছাত্র হোস্টেলে গিয়ে ছেলেদের হুমকি দিতো ও মাদকের টাকা চাইতো বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।
একইভাবে কলেজের পাশে বসবাসকারীরাও মাদকসেবী ও বহিরাগতদের তান্ডবের কথা জানান।
স্থানীয় এলাকাবাসী বলেন, কলেজের সামনে মেয়েদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হতো। ধামা চাপা দেয়া হয়েছে রিফাতকে কোপানোর ঠিক আগ মুহূর্তের ঘটনা। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যারা রিফাতকে কুপিয়েছে তাদের বাইরেও ‘বন্ড ০০৭’ গ্রুপটি কাজ করেছে কলেজের ভেতরে। ওইদিন নোটিশ বোর্ডের সামনে থেকে তারা রিফাত শরীফকে মারতে মারতে কলেজ গেটের বাইরে নিয়ে যায়। আর সেখানেই পরবর্তীতে নয়ন, রিফাত ফরাজি ও রিশান ফরাজিসহ সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করে।
অথচ নোটিশ বোর্ডের সামনে রিফাতকে প্রথম যেখানে পেটানো হয়েছে, সেখানে লাগানো আছে দুটি সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরা দুটিতে অবশ্যই ধরা পড়ার কথা কলেজ ক্যাম্পাসে মারধরের ঘটনা। তবে অধ্যক্ষ জানান, ঘটনার দুদিন আগে বর্জপাতে কলেজের সব ক্যামেরা বিকল হয়ে যায়।
অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, ক্যামেরাগুলো সব ভালোই ছিল। ২৪ তারিখে বজ্রপাতের কারণে মনিটরটা নষ্ট হয়ে গেছে।
অন্যদিকে কলেজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীরা বলছে, বজ্রপাতের কোন ঘটনাই ঘটেনি সে সময়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গত এক মাসেও আমরা কোন বজ্রপাতের আওয়াজ শুনিনি, কলেজে আরও আগেও যদি কোনো বজ্রপাত হতো, তাহলে তা আমরা শুনতে পেতাম। কিন্তু এখানে এধরণের কোন কিছু ঘটেনি।
তবে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে ও বাকি আসামীদের ধরতে অনেক বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।
বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বলেন, তদন্ত চলমান আছে। কার তথ্যের ভিত্তিতে কাকে ধরা হবে না হবে, সেগুলো এখানে বলে দিলে আমি আসামি ধরবো কি করে? তারা তো আমার নজরদারির বাইরে চলে যাবে।