DMCA.com Protection Status
title="৭

আজ পবিত্র হজ্জঃ লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফাতের ময়দান।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  আজ পবিত্র হজ্জ । আরাফাতের ময়দানে থাকার দিন। সেলাইবিহীন শুভ্র কাপড়ে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারা বিশ্ব থেকে সমবেত মুসলমানরা আজ থাকবেন সেখানে।

 

আকুল হৃদয়ে মহান রাব্বুল আলামিনকে বলবেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক।’ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির। তোমার কোনো শরিক নেই; সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

মিনায় অবস্থান নেয়ার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হয়েছে পবিত্র হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা। শুক্রবার সারা দিন ও রাত তারা মিনায় কাটান ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে। আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মশগুল ছিলেন জিকির ও তালবিয়াতে।

নামাজ আদায় করেন জামাতের সঙ্গে। সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজিরা দিয়ে আত্মশুদ্ধি, মাগফিরাত ও রহমত চাইতে আসা এই মুসলমানরা আজ জড়ো হবেন আরাফাতের ময়দানে, যাকে হজের মূল অনুষ্ঠান বলা হয়।

হজ মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম সম্মেলন। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হাতিম বিন হাসান কাদি সৌদি গেজেট ও এএফপিকে জানান, এ বছর প্রায় ২৫ লাখ মুসল্লি হজব্রত পালন করবেন। এর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন ১৮ লাখ ব্যক্তি। বাংলাদেশি রয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার।

সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বিনতেন বলেছেন, এবার বিভিন্ন দেশের ১৮ লাখ ৬০ হাজার ব্যক্তি হজ ভিসা নিয়েছেন। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মুসল্লি মিলে মোট ৪০ লাখ মুসল্লি শুক্রবার মিনায় ছিলেন। এরা কাল সূর্যোদয়ের পর অবস্থান নেবেন আরাফাতের ময়দানে।

সৌদি আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ আরাফাতের ময়দান ও আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার সামান্য বেশি। এদিন এখানে বাতাসের গতিবেগ থাকবে ১৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।

শুক্রবার মিনায়ও একই তাপমাত্রা ছিল। মুজদালিফায় তাপমাত্রা তেমনই থাকবে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানায়, মিনার তাঁবুগুলো ঠাণ্ডা রাখতে শুক্রবার সাড়ে তিন লাখ এসি ব্যবহার করা হয়েছে।

সৌদি আরবের ই-হেলথ ও ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন উপমন্ত্রী ড. আহমেদ বলখির জানিয়েছেন, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে এবার ১৬টি হাসপাতাল হজযাত্রীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এবার প্রথমবারের মতো অসুস্থ মুসল্লিদের সেবায় রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহার হচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি-সেবা। মক্কা ও মদিনা মিলিয়ে প্রায় ৩১ হাজার চিকিৎসক-নার্স সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

মিসর থেকে আসা ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ জাফর বলেন, আমরা অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দ বোধ করছি এ জন্য যে, ইসলামের একটি স্তম্ভ পরিপালনের জন্য এখানে আসতে পেরেছি। সারা বিশ্বের মানুষের সঙ্গে মিলিত হয়েছি। এটা বিস্ময়কর, দারুণ।

আলজেরিয়া থেকে আসা ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বলেন, কেমন লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। জীবন দিয়ে দিলেও এটা বোঝানো যাবে না। প্রথমবার হজে আসা তার স্ত্রী বলেন, এটা সুবর্ণ সুযোগ ও অসাধারণ মুহূর্ত।

পবিত্র হজ ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটি। আর্থিকভাবে সমর্থ ও শারীরিকভাবে সক্ষম পুরুষ ও নারীর জন্য তা ফরজ। এবার যারা হজে এসেছেন তারা আজ সূর্যোদয়ের পর সমবেত হবেন মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে বিদায় হজের স্মৃতি জড়িত আরাফাতের ময়দানে।

তিন দিকে পাহাড়ঘেরা প্রায় চার বর্গমাইল আয়তনের এ বিশাল সমতল মাঠের এক প্রান্তে জাবালে রহমত। অর্থাৎ রহমতের পাহাড়। ১৪শ’ বছরের বেশি সময় আগে এখানেই ইসলামের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) দিয়েছিলেন তার বিদায় হজের ভাষণ।

এ পাহাড়টিকে কেউ কেউ দোয়ার পাহাড়ও বলে থাকেন। বলা হয়ে থাকে, আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে পুনর্মিলনের পর এই আরাফাতে এসে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।

আরাফাতের ময়দানে বা এর পাশের পাহাড়ে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে আজ মুসল্লিরা ‘হে আল্লাহ, আমি হাজির’ জানিয়ে অতীতের সব গুনাহ মাফের জন্য কায়মনোবাক্যে ফরিয়াদ জানাবেন মহান আল্লাহর কাছে।

কেঁদে বুক ভাসিয়ে চাইবেন আল্লাহর রহমত, জীবনের বাকি দিন ইসলামের পথে চলার সহায়তা। আকুতি জানাবেন প্রকৃত সফলতা অর্জনের, জান্নাতের বাসিন্দা হওয়ার। মাঠ, পাহাড়, পথ- সবখানে আজ থাকবে সেই রোনাজারি। মসজিদে নামিরায় তারা জোহর ও আসরের নামাজ আদায় করবেন। এ নামিরা থেকেই দেয়া হবে হজের খুতবা।

এই আরাফাতে উপস্থিত না হলে হজ পূর্ণ হয় না। তাই হজে এসে যারা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদেরও অ্যাম্বুলেন্সে করে আজ আনা হবে এখানে। ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হল হজ।

সারা দিন আরাফাতে অবস্থানের পর বিকালে মুসল্লিরা পা বাড়াবেন মিনার পথে। প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের মুজদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়বেন তারা। সেখানেই রাতে খোলা আকাশের নিচে থাকবেন। এটি ওয়াজিব। এ সময়েই তারা প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাথর সংগ্রহ করবেন, যা মিনার জামারায় প্রতীকী শয়তানকে উদ্দেশ্য করে ছোড়া হবে।

মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায়ের পর হাজিরা কেউ ট্রেনে, কেউ বাসে, কেউ হেঁটে মিনায় ফিরে নিজ তাঁবুতে ফিরবেন। মিনায় বড় শয়তানকে সাতটি পাথর মারার পর পশু কোরবানি দিয়ে মাথার চুল ছেঁটে (ন্যাড়া) গোসল করবেন।

এরপর পবিত্র কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করবেন। এটি হজের আরেকটি ফরজ। কাবার সামনের দুই পাহাড় সাফা ও মারওয়ায় সাঈ (সাতবার দৌড়ানো) করবেন। মিনায় তারা যতদিন থাকবেন ততদিন প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারবেন। সবশেষে কাবা শরিফ বিদায়ী তাওয়াফের (ওয়াজিব) মধ্য দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।

কাবায় পরানো হবে নতুন গিলাফ : সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, প্রতিবছরের মতো আরাফাতের দিনে (৯ জিলহজ) আজ পবিত্র কাবা আচ্ছাদিত হবে নতুন গিলাফে। পবিত্র মসজিদের (মসজিদুল হারাম) ও মসজিদে নববীর সভাপতি শেখ ড. আবদুল রহমান বিন আবদুল আজিজ আল-সুদাইসের তত্ত্বাবধানে আজ ফজরের নামাজের পর নতুন এ গিলাফ পরানো হবে।

এবারের গিলাফটি তৈরি করা হয়েছে সিল্কের ৬৭০ কেজি সুতা, স্বর্ণের ১২০ কেজি সুতা এবং রুপার ১০০ কেজি সুতা দিয়ে। কালো জমিনের ওপর অঙ্কিত হয়েছে সোনালি আরবি হরফে কোরআনের আয়াত। বাদশাহ আবদুল আজিজ কমপ্লেক্সে ১৬০ শিল্পী ও কারিগর এ গিলাফটি তৈরি করেছেন।

নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরনো গিলাফ সরিয়ে ফেলা হয়। তা কেটে মুসলিম বিশ্বের সরকারপ্রধানদের দেয়া হয় উপহার। বাংলাদেশে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গিলাফের একটি টুকরো টানানো রয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!