ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এই মুহুর্তে চরম সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে এগুচ্ছে। মন্দা এমন পর্যায়ে গেছে যে এরকম সঙ্কট বিগত ৭০ বছরে আসেনি বলে মন্তব্য করে বড়সড় আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ভারতের অর্থনীতিবিষয়ক সংস্থা নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার।
বস্তুত অর্থনীতির সঙ্কটের আভাস অনেক আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। জিডিপি বৃদ্ধির হার ক্রমাগত কমেছে বিগত কয়েক বছরে। উৎপাদন শিল্প থেকে কৃষি এবং অর্থনীতির কোর সেক্টরের বৃদ্ধিহারের লাগাতার মন্দা একেবারে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। মন্দা এতটাই প্রভাব ফেলেছে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ শিল্পে যে, দেশজুড়ে কর্মসংস্থানের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। একের পর এক সংস্থা ঘোষণা করছে কর্মী ছাঁটাইয়ের। অটোমোবাইল থেকে বিস্কুট প্রতিটি শিল্প এতটাই ধাক্কা খেয়েছে যে বহু ইউনিট বন্ধ হয় যাচ্ছে।
পার্লে জি কোম্পানি জানিয়েছে, তারা ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে যাবে। ব্রিটানিয়া সংস্থা জানিয়েছে পরিস্থিতি সত্যিই উদ্বেগজনক। হিরো, মারুতি, টাটা মোটরস, হন্ডা প্রতিটি সংস্থারই গাড়ি বিক্রি বিপুলভাবে কমে গেছে এবং উৎপাদন ইউনিট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে কর্মীদের ছুটিতে যেতে বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেও এতদিন সরকার স্বীকার করেনি অর্থনীতির মন্দার কথা। কিন্তু এবার কখনো রিজার্ভ ব্যাংক, কখনো নীতি আয়োগ সরাসরি জানিয়ে দিচ্ছে যে অর্থনীতির বেহাল দশা উদ্বেগজনক জায়গায় পৌঁছেছে। আর তাই শুক্রবার মোদি সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তড়িঘড়ি অসংখ্য নতুন ঘোষণা করে ড্যামেজ কন্ট্রোলের মরিয়া চেষ্টা করেছেন। ঘোষণা করেছেন, ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থাগুলোকে ৭০ হাজার কোটি রুপি দেয়া হবে অবিলম্বে।
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মানিটারি পলিসি কমিটির বৈঠকে বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার মার্কেট তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই মন্দা দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। খোদ রিজার্ভ ব্যাংক কর্মকর্তার ওই মন্তব্য নিয়ে আলোড়নের রেশ মেটার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান বলেছেন, মরিয়া কোনো ব্যবস্থা না নেয়া হলে এই আর্থিক মন্দা ঠেকানো যাবে না। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না। নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যানের এই মন্তব্যে অস্বস্তিতে পড়ে সরকার দ্রুত ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়ে। ফলস্বরূপ শুক্রবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা। যদিও শুক্রবার দৃশ্যতই নার্ভাস অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা থেকে স্পষ্ট, রাজনীতিতে অবিরত জয়ী হওয়া মোদি সরকার অর্থনীতিতে যথেষ্ট ব্যাকফুটে।