ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বহুল আলোচিত-সমালোচিত রূপপুর বালিশকান্ডকে হার মানিয়ে এবার দুর্নীতির নতুন নজির গড়েছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালটির যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটাতেই অন্তত ৪১ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
জানা যায়, দুর্নীতির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স অনিক ট্রেডাসের প্রায় ১০ কোটি টাকার বিল বছর খানিক আগে আটকে দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরে বিল পরিশোধের আবেদন জানিয়ে ২০১৭ সালের ১ জুন রিট করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে আসে সাপ।
পরে জানা যায়, হাসপাতালের রোগীর বেড আড়ালে ব্যবহৃত একটিমাত্র পর্দা কেনা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এছাড়া উঠে আসে আরও অবিশ্বাস্য সব তথ্য।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনায় ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে এসব দুর্নীতি হয়েছে।
এরমধ্যে ১১ কোটি ৫৩ লাখ ৪৬৫ টাকার মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিল দেখানো হয়েছে ৫২ কোটি ৬৬ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা। এই একটি কেনাকাটাতেই মেসার্স অনিক ট্রেডার্স বাড়তি বিল দেখিয়েছে ৪১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৭ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইসিইউতে ব্যবহৃত একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড়াও একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ দেখানো হয়েছে ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা। একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার, একটি বিএইইস মনিটরিং প্ল্যান্ট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার, তিনটি ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার, আর একটি হেডকার্ডিয়াক স্টেথোসকোপের দাম ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এমন অবিশ্বাস্য দামে ১৬৬টি যন্ত্র ও সরঞ্জাম কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, মেসার্স অনিক ট্রেডাসের রিটের পর প্রকাশ পায় ওই সময়কালে হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই অবস্থায় ছয় মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ মাহমুদ বাশার বলেন, এক রোগী থেকে আরেক রোগীকে আড়াল করার পর্দার দাম ধরা হয়েছে ৩৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বাজার মূল্যের সাথে কোনোভাবেই এটি সঠিক মূল্য নির্ধারণ বলা যাবে না।
তিনি বলেন, যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিলেন তারা ঘটনায় সম্পৃক্ত। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক নয়, আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। তবে সেটা দুদক তদন্ত সাপেক্ষে নির্ধারণ করবে।
জানতে চাইলে মেসার্স অনিক ট্রেডাসের রিট পিটিশনার ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।