ব্যারিস্টার আবু সায়েমঃ ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান ভালগার নাটক ছাড়া আর কিছুই নয়- আমার সাম্প্রতিক লেখাগুলোতে আমি এমনটাই বলার চেষ্টা করেছি।
শেখ হাসিনার নিজেরই কোন বৈধতা নেই; তিনি একজন অলআউট দুর্নীতিবাজ, মিথ্যাচারিণী ও অশ্লীল রাজনীতির জন্মদাত্রী। তার কাছ থেকে নীতিকথা শোনা কেবল ভূতের মুখে নয়, ‘পিশাচের মুখে রাম নাম’। তথাকথিত দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পশ্চাতে তার যে বদ মতলব আছে, সেটা আমি গোড়াতেই বুঝতে পেরেছি। সেলিম প্রধানের গ্রেপ্তারের পর এখন তা আরও স্পষ্ট। প্রথমে বলা হলো, বিএনপির শাসনকালে ক্যাসিনো চালু হয়েছে, তারেক রহমান ক্যাসিনোর বখরা পান। তারপর যুবলীগের জুয়াড়িদের সাথে বিএনপি নেতাদের নাম ট্যাগ করে দেওয়া হলো। তাদেরকে যুবদলের প্রডাক্ট বলে চাপানোর চেষ্টা চলছে। সর্বশেষ, সেলিম প্রধানকে প্লেন থেকে উঠিয়ে এনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে মাঠে অরুচিকর স্টোরি ছাড়া হচ্ছে।
আমি শিশুও নই, বেওকুফও না। আমার জানা আছে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সর্বশেষ অস্ত্রটির নাম চরিত্রহনন। কখনো কখনো তা কাজে লাগে, তবে সবসময় নয়। শীতল যুদ্ধকালে কেজিবির সুন্দরী স্পাইরা বিশ্বের ডাকসাইটে রাষ্ট্রনেতাদের বিছানাসঙ্গী হয়ে গোপন তথ্য বাগিয়ে নিতো। সেরকম স্ক্যান্ডালে বহু রথীমহারথীর পতনের গল্প আমরা শুনেছি। ২০১০ সালে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসেন্জের বিরুদ্ধে সুইডিশ অথরিটি ধর্ষণের যে মামলা করে, তার সত্যতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা আছে। আইএমএফ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডমিনিক স্ট্রস-কানকে যুক্তরাষ্ট্র অথরিটি এয়ার ফ্রান্সের একটি প্লেন থেকে অফলোড করে ২০১১ সালের মে মাসে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ম্যানহাটানের এক হোটেলমেইডের উপর যৌন আক্রমণ করেছিলেন! বাষট্টি বছর বয়েসী ডমিনিক ছিলেন সোশ্যালিস্ট পার্টির টিকিটে ফ্রান্সের পরবর্তী সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট। মি. কান ভয়ংকর চক্রান্তের শিকার- এ বিষয়ে কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। তার বিরুদ্ধে আনা সবগুলো চার্জ শেষ পর্যন্ত খারিজ হয়ে যায়। এমনকি পাবলিক প্রসিকিউটরও ত্রিশোর্ধ গিনিয়ান মেয়েটির কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়, ঘটনার অব্যবহিত পূর্বে মেয়েটির অ্যাকাউন্টে অজানা উৎস হতে ১০০ হাজার ডলার জমা পড়ে। তবে ততোদিনে কানের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে নারীঘটিত কেলেংকারির মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে নিউ ইয়র্কের গভর্নর ইলিয়ট স্পিৎজারকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, ইলিয়ট ও ডমিনিক উভয়ের ক্ষেত্রেই একটি কমন চরিত্র, ম্যানহাটানের মক্ষিরাণী, ক্রিস্টিন ড্যাভিসকে ব্যবহার করা হয়েছিলো। সুতরাং রসালো গল্প শুনলেই বিবেকের শিরদাঁড়া বাঁকিয়ে ফেলার কিছু নেই। দেখতে হবে, বুঝতে হবে- জাদুর বাক্সে কী আছে। গল্পের আদলে অনেক রচনাই নাটক, উপলব্ধি করা নিয়ে হলো কথা।
জগতের মাতাল, দাঁতাল সব শাসকের ইতিহাসই এক। দেশপ্রেমিকের কন্ঠরোধে আর সব অস্ত্র যখন ব্যর্থ হয়ে যায়, তখন বেজন্মাদের একমাত্র অবলম্বন থাকে চরিত্রহরণ। তারেক রহমান একজন দেশপ্রেমিক ও শুদ্ধ জাতীয়তাবাদী নেতা। তিনি কেবল তৃণমূল রাজনীতির প্রবক্তাই নন, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সকল মন্ত্রও তার জানা আছে। তার দৃঢ়চেতা মনোভাব, হার না মানার সংকল্প ও অসামান্য জনপ্রিয়তায় উপমহাদেশের রাজনীতি আজ এক ভিন্ন মেরুকরণে এসে দাঁড়িয়েছে। ব্লকের কর্তারা জানে, তারেক রহমানের সুস্থ-স্বাভাবিক অস্তিত্ব মানে বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা। তাই তাকে নানাভাবে আঘাত করা হয়েছে। কোন প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও তাকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে রূপায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের কাল্পনিক অভিযোগ আনা হয়েছে। তাকে শারীরিকভাবে অক্ষম করার জন্যে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে, জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে দেশছাড়া করা হয়েছে। আদালতের ফরমানে তার বক্তব্যপ্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবুও ভাঙা যায়নি তারেক রহমানকে। দিনকে দিন মানুষ তাকে আরও আপন করে নিচ্ছে। তিনিও তার মানবিকতা ও নেতৃত্বের দ্যুতি ছড়িয়ে সকলের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। সম্প্রতি আদালতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ও অবৈধ সরকারের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে ছাত্রদলের কাউন্সিল সম্পন্ন করে ফেললে তারেক রহমান নতুন করে শাসকগোষ্ঠী ও তাদের প্রভুদের মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন। তাকে নিয়ে তাই শুরু হয়েছে নতুন গেম। উত্তরের অনুগত একটি বিশেষ পত্রিকাকে ব্যবহার করা হচ্ছে তার চরিত্রহননের কাজে। এটিই প্রতিক্রিয়াশীলদের শেষ অস্ত্র, আর অস্ত্রটি ব্যবহার করা হচ্ছে তথাকথিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের নামে।
আমি আবারও বলছি, ক্যাসিনোবিরোধী চলমান অভিযান একটি ফলস ফ্ল্যাগ। শেখ হাসিনা যদি সব ক্যাসিনো গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে মসজিদ-মক্তবও প্রতিষ্ঠা করেন, তথাপি আমি বলবো, তার মন কলুষিত। তিনি অপরাধী, তার প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতির সুযোগ নেই। তিনি ও তার প্রভুদের অন্য এজেন্ডা আছে এবং ঘুরেফিরে তাদের কমন টার্গেট তারেক রহমান। আমার সাফ কথা- সমস্যা ক্যাসিনোতে নয়, সমস্যা অবৈধ সরকারে। দেশে দুর্নীতি বলুন, খুনাখুনি বলুন, অরাজকতা বলুন- সবকিছুর মূলে শেখ হাসিনা, তার দল ও প্রভুরা।
শুদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে অভিযানটি এখন সময়ের দাবি, তা হলো হাসিনাবিরোধী অভিযান।
আবু সায়েমঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী আইনজীবি,বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের উপদেষ্টা।