ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এর বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টার ভ্রান্ত এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছে পুলিশ।
তিনি দলীয় চেয়ারপারসনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ইসাহাক মিয়ার সঙ্গে যোগসাজশ করে দেশবিরোধী এ ষড়যন্ত্র করছিলেন বলে তার বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
গত শনিবার (১২ অক্টোবর) সকালে মিরপুরের ডিওএইচএস থেকে প্রথমে কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ইসাহাক মিয়াকে আটকের পর পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মামলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদসহ ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন নামে আরেকজনকেও আসামি করা হয়। শনিবার রাতেই সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে হাফিজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে গ্রেফতারের একদিন পরই জামিন পেয়েছেন তিনি।
মামলার এজাহার ও ফরোয়ার্ডিংয়ে বলা হয়েছে, শনিবার সকালে র্যাব ৪-এর একটি দল পল্লবী এলাকায় ডিউটি করা কালীন জানতে পারে, গত ২ মে সকাল ১১টা ৫৭ মিনিটে কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ইসাহাক মিয়া তার বাসায় অবস্থান করে নিজের ইমেইল থেকে হিরেন মুখার্জী নামে এক ব্যক্তিকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, পুলিশসহ অন্যান্য সরকারি সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পাঠায়। যা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তার এসব কার্যকলাপে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে দেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। আসামির এসব উত্তেজনাকর ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ সামরিক বাহিনীতে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার বিভিন্ন হীন অপপ্রয়াশের প্রচেষ্টা।
এতে আরও বলা হয়েছে, আসামির এসব কার্যকলাপ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ২৭, ৩১ ও ৩৫ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হওয়ায় তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ডে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও ব্যারিস্টার এম সারোয়ারসহ অজ্ঞাতনামা অনেকেই জড়িত রয়েছেন।
তবে হাফিজকে আদালতে সোপর্দ করে শুনানিতে পর্যাপ্ত নথি উপস্থাপন করতে না পারায় জামিন হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে একদিন আগে-পরে আদালতে সোপর্দ করা দুই আসামির জন্য আদালতে দেওয়া ফরোয়ার্ডিংও একই বিষয়বস্তু হওয়ার কারণও উল্লেখ করেছিলেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার এজাহারে ঘটনা যেভাবে উল্লেখ করা ছিল আদালতে পাঠানো ফরোয়ার্ডিংয়ে সেভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল।
পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) এসএম শামীম বলেন, ‘র্যাব তাদের দুজনকে গ্রেফতার করে আমাদের কাছে সোপর্দ করেছে। আমরা তাদের রিমান্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালত জামিন দিয়েছেন। মামলার এজাহারে যা ছিল সে বিষয়ে অধিকতর তদন্তের জন্য আমরা রিমান্ড চেয়েছিলাম।’
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথমে কর্নেল (অব.) ইসাহাক মিয়াকে আটকের পর পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ শনিবারই তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই দিন রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরলে মেজর (অব.) হাফিজকে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার হাফিজকে আদালতে সোপর্দ করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
তবে আদালতের শুনানিতে হাফিজ উদ্দিন আহমেদের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার দুই আসামিকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হলেও একই ধরনের ফরোয়ার্ডিং ও জব্দ তালিকা দেওয়ার বিষয়টি আদালতের কাছে তুলে ধরেন। এছাড়া হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম উল্লেখ করে তার রিমান্ড বাতিল করে জামিন আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের দুই কৌঁসুলি হেমায়েত উদ্দিন ও আজাদ রহমান জামিন বাতিল করে রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। আদালত শুনানি শেষে পরবর্তী কার্যদিবস পর্যন্ত দশ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিনের আদেশ দেন।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, শুনানির সময় আদালত ষড়যন্ত্র করে আসামিরা যে ইমেইলটি পাঠিয়েছিলেন সেই ইমেইলের একটি কপি দেখতে চান। কিন্তু আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা তা উপস্থাপন করতে পারেননি। একই ধরনের ফরোয়ার্ডিং ও নথি উপস্থাপন না করতে পারায় আদালত জামিন দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক নূরে আলম বলেন, ‘মামলার এজাহারের বিষয়বস্তু আদালতে দেওয়া ফরোয়ার্ডিংয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। দুজন একই মামলার আসামি হওয়ায় ঘটনার বিবরণ একই হয়েছে। আদালত মনে করেছেন জামিন দেওয়া যায়, এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। আমরা আবারও তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানাবো।’
এদিকে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, চিকিৎসা শেষে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই সাজানো মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এ গ্রেফতার সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানুষের চোখকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপকৌশলমাত্র। সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী হিসেবে তিনি পানির ন্যায্য হিস্যা ও দেশের স্বার্থেও পক্ষে একজন নির্ভীক ভাষ্যকার। পানির চুক্তির চক্রান্তের নানাদিক তুলে ধরতে পারতেন সাবেক এ পানিমন্ত্রী। দেশবিরোধী চুক্তি করে দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার বিরুদ্ধে সোচ্চার মেজর হাফিজের কণ্ঠকে স্তব্ধ করানোর জন্যই এই মামলা ও গ্রেফতার। তার গ্রেফতার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।