ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বীর মুক্তিযোদ্ধা ,অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেসনের সর্বশেষ সফল মেয়র এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার নামাজে জানাজা নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় সোমবার বাদ এশা জামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী স্বতস্ফুর্তভাবে খোকার জানাজায় শামিল হয়ে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম আবু জাফর বেগ নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন। জানাজার পর মুক্তিযোদ্ধা কামাল সাইদ মোহন ও আবদুল মুকিত চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা মুড়িয়ে সাদেক হোসেন খোকাকে গার্ড অব অনার দেন।
এর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সাদেক হোসেন খোকার দুই সন্তান এবং বিএনপি নেতা আবদুস সালাম। বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা পুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন সবার কাছে পিতার জন্য দোয়া চান এবং সাদেক হোসেন খোকা ও তার স্ত্রীর ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
এছাড়া নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনসুলেটের পক্ষ থেকে ফাস্ট সেক্রেটারি শামীম হোসেন বক্তব্য রাখেন। তবে বক্তব্যে তিনি সাদেক হোসেন খোকাকে মুক্তিযোদ্ধা এবং কোন রাজনৈতিক পরিচয় না বলায় কিছুটা হট্টগোল শুরু হয়। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রবাসীরা এর প্রতিবাদ জানাতে থাকে।
পরিস্থিতি শান্ত করতে মসজিদের ইমাম ও বিএনপি নেতাদের বেগ পেতে হয়। এক পর্যায়ে সাদেক হোসেন খোকার পুত্র প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানালে পরিস্থিতি শান্ত হয়। জানাজায় নিউইয়র্কের সর্বস্তরের রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা অংশ নেন।
জানাজা শেষে আবারও সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ মর্গে রাখা হয়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১ টায় এমিরাটসের ফ্লাইট ২০২তে করে সাদেক হোসেন খোকার লাশ দেশে পাঠানো হবে। লাশের সঙ্গে যাবে সাদেক হোসেন খোকার দুই পুত্র এবং স্ত্রী। জানাজায় বিএনপি নেতারা এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও দলের অনেক নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
স্থানীয় সময় রোববার দিবাগত রাত ২টা ৫০ মিনিটে ম্যানহাটানের মেমোরিয়াল স্লোয়েন ক্যাটারিং ক্যানসার হাসপাতালে তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন বাংলাদেশের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। নিউইয়র্কে চিকিংসাধীন খোকার শাররীক অবস্হার অবনতি হলে গত ১৮ অক্টোবর তাকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাদেক হোসেন খোকার জন্ম ১৯৫২ সালের ১২ই মে। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা।
১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন।
এ সময় তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫শে এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।