ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির সংসদ সদস্যদের অবিলম্বে জাতীয় সংসদ থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। আজ শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় তিনি এই পরামর্শ দেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘মোশাররফ (বিএনপির সাংসদ মোশাররফ হোসেন) বলেছে, পার্লামেন্টে কথা বলব। সেখানে তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেবে কেন? এই পার্লামেন্ট তাদের, এই পার্লামেন্ট তো জনগণের না। তাই বলি, পার্লামেন্টে যাওয়ার নিয়ম আছে, পার্লামেন্টের বাইরে আসারও তো নিয়ম আছে। আমাদের যারা পার্লামেন্টে গেছেন, কথা যখন বলতে পারেন না তখন সেখানে যাওয়ার দরকারটা কী?’
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘শেখ হাসিনা যদি ১৪৭ জন নিয়ে, ১১ জন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সবাইকে নিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বিএনপি সরকারকে বেকাদায় ফেলতে পারেন। তাহলে আপনারা ছয় থেকে সাত জন থেকে কী করবেন? কিছুই করতে পারবেন না। তার থেকে দেশটার কথা একবার ভাবেন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আপনারা বলেছেন, ঘরে-বাইরে আন্দোলন। ঘরে বা পার্লামেন্টে আমাদের সেই অবস্থা নেই, সেই শক্তিও নেই। তাই ঘরের আন্দোলন বাদ দিন, আসুন আমরা রাস্তার আন্দোলন করি।’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আমরা জাতীয়তাবাদী দল রাজনীতিতে ডিফেন্সিভ। সুতরাং সেখানে সফলতা আশা করা যায় না। কারণ আমরা প্রত্যেকেই ডিফেন্সিভ। অর্থ্যাৎ আমি আত্মরক্ষা করতে চাই। সবার বিরুদ্ধে মামলা আছে, আমার সম্পত্তি নিয়ে টান দিছে, দুর্নীতি দমন কমিশন ডাক দিছে। এটা যদি মোকাবিলা করতে চাই তাহলে আমি সম্পত্তি এবং দল রক্ষা করতে পারব না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে (জাতীয় প্রেসক্লাব) যারা বক্তব্য দিলেন, বিপ্লবী কথাবার্তা বললেন। ভালো কথা, শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু যা করতে চান তা করতে পারলে আরও ভালো লাগে। আর এখানে বক্তব্য দিয়ে কিছু হবে না। কিন্তু এখানে বক্তব্য দিতে না পারলে আপনি ছোট হয়ে যান, আপনার মান-সম্মানে লাগে!’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতা ও নেত্রীর মুক্তি কখনো আদালত নির্ভর হয় না। সুতরাং রাজনীতির মাধ্যমেই রাজনৈতিক নেতার মুক্তি হয়। তাই আদালতের ওপর নির্ভর করা বাতুলতা। কারণ আদালত আদালতের জায়গায় নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিচারবিভাগ সরকারের আওতামুক্ত। কথা সত্য। কিন্তু শেখ হাসিনার হাতের মুঠোর বাইরে না। সরকারের অধীনে না তবে শেখ হাসিনার অধীনে। এটা প্রতিদিন প্রতিটি রায়ের মধ্যে দিয়ে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি। সুতরাং সরকারের ইচ্ছার বাইরে খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের মাধ্যমে হবে না।’
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে গেলাম। নির্বাচনের সময় আমরা সাতটা দফা দিয়েছি। কোন দফাটা প্রায়োরিটি? নির্বাচনে যাওয়াটাই প্রায়োরিটি ছিল। আর ছয় দফা নয়, শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া নির্বাচনে যাব না, এই একটি দফা থাকলেই বেগম জিয়ার মুক্তির মাধ্যমেই নির্বাচন হতো। আর শেখ হাসিনা আমাদের দাওয়াত করেন নাই, ড. কামাল হোসেন দাওয়াত চাইছেন। সেখানে তো খালি হাতে বিদায় দিয়েছেন।’
প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরে তাকে ‘সার্বজনীন নেতা’ হিসেবে অভিহিত করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের কারসাজি বলে অভিযোগও করেন গয়েশ্বর।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। সভার পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির সাংসদ মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহ নেছারুল হক, ফরিদ উদ্দিন, কাজী মনিরুজ্জামান, মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য দেন।