DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বাংলাদেশে ঢুকে কোটি কোটি টাকার মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ভারতের জেলেরা


ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ঢুকে হাতমাইকে ঘোষণা দিয়ে ভারতীয় জেলেরা মাছ লুটে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি তারা বাংলাদেশি ট্রলারগুলো ডুবিয়ে দিচ্ছে বলেও জানা গেছে।

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাসুম সিকদার বলেন, সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে নানা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রলারগুলো। মাছ ধরার সময় ট্রলারগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্যে তাদের যেমন রয়েছে ওয়্যারলেস তেমনি সাগরে মাছের ঝাঁকের অবস্থান বুঝতে তারা ব্যবহার করে ইকোসাউন্ডার।

 

২০০-৩০০ ট্রলার একসঙ্গে দলবদ্ধ মাছ ধরাই তাদের পদ্ধতি। সাগরে মাছ ধরার ক্ষেত্রে ইকোসাউন্ডার ব্যবহার করে তারা প্রথমে মাছের ঝাঁকের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। তারপর সে অনুযায়ী ফেলে জাল। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ উপকূলে ধরা পড়ছে বিপুলসংখ্যক ইলিশ। আর এই ইলিশের লোভেই বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে তারা।

 

বরগুনা জেলা মাঝি-মাল্লা সমিতির সভাপতি সিদ্দিক জমাদ্দার বলেন, মোংলা বন্দরের পশ্চিমে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় ঢোকে ভারতীয় ট্রলার। এরপর মাছের ঝাঁক খুঁজে জাল ফেলতে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার সোনার চর পর্যন্ত চলে আসে তারা। মাছের ঝাঁকের সন্ধান পেলে নিজেদের মধ্যে ওয়াকিটকির মাধ্যমে যোগাযোগ করে এক জায়গায় জড়ো হয় শতাধিক ভারতীয় ট্রলার। আলোচ্য জায়গায় যদি বাংলাদেশি কোনো ট্রলার থাকে তাহলে হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে সরে যেতে বলা হয় তাদের। সরে না গেলে চলে হামলা-মারধর। বাংলাদেশি ট্রলার সরিয়ে দিয়ে জাল ফেলে মাছ ধরে তারা। সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস পায় না বাংলাদেশি জেলেরা।

আরও পড়ুন: একদিন বলল, আমাকেও ঐভাবে আদর করবে

পাথরঘাটা উপজেলার বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা এফবি সীমা ট্রলারের জেলে জাকির বলেন, ‘বিষখালী-বলেশ্বর মোহনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ভারতীয় ট্রলারের ঝাঁকের কবলে পড়ি আমরা। আমাদের সীমানার প্রায় ১০০ কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে হ্যান্ডমাইকে ঘোষণা দিয়ে জাল উঠিয়ে আমাদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলে তারা। বিপদ বুঝে আমরা জাল তুলে চলে আসি।’

পাথরঘাটার বাসিন্দা এফবি বনফুল ট্রলারের মালিক সগির হোসেন বলেন, প্রতিবছর ইলিশ মৌসুমে বাংলাদেশি জলসীমায় ঢুকে কোটি কোটি টাকার মাছ লুট করে নিয়ে যায় ভারতীয় জেলেরা। বাধা দিলেই আমাদের জেলেদের ওপর নেমে আসে হামলা নির্যাতন। মাঝ সমুদ্রে মাঝি-মাল্লাসহ বাংলাদেশি ট্রলার ডুবিয়ে পর্যন্ত দেয় তারা। গেল বছর আমার এ রকম একটি ট্রলার ডুবিয়ে দেয় ভারতীয় জেলেরা। ওই ঘটনায় মুসা নামের এক জেলের মৃত্যু ঘটে।

 

কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন এম মোফায়েদ হোসেন বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে মংলার দক্ষিণে ফেয়ারওয়ে বয়া এলাকা দিয়ে ভারতীয় ট্রলার ঢোকার যে দাবি করা হচ্ছে সেটা মোটেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেননা সেখানে নৌবাহিনীর টহল জাহাজ সার্বক্ষণিকভাবে টহল দেয়। তারপরও যদি কোনো ভারতীয় ট্রলার নৌবাহীনির জাহাজের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে মাছ ধরে তাহলে সেক্ষেত্রে কোস্টগার্ডকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয় না বাংলাদেশের জেলেরা।

তিনি আরো বলেন, ‘এই যে আপনি সোনার চরের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ভারতীয় ট্রলারের অনুপ্রবেশের কথা বললেন এই তথ্যটি যদি ওই ট্রলারের জেলেরা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের দিত তাহলে আমরা সেখানে গিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের হাতেনাতে ধরতে পারতাম। এভাবে উড়ো কথা বললে তো কিছু করা সম্ভব নয়। জেলেরা আমাদের যথাযথ তথ্য দিলে আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব এবং অবৈধ অনুপ্রবেশের কোনো ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!