ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অন্যায় ভাবে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য অবস্থা নিয়ে পিজি হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে পরিবর্তন করার হীন উদ্দেশ্যেই আরো সময় চাইছে সরকার এমন অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবীরা। এ কারণেই আদালতের আদেশ থাকা সত্ত্বেও মেডিকেল রিপোর্ট আজ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি বলে মনে করছেন বিএনপির আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় বক্তৃতা করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও সাবেক বার সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সুপ্রিমকোর্ট বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট তৈরি হয় আছে। সেই রিপোর্টে ব্যপক পরিবর্তন আনতে চাইছে হাসিনা সরকার। এ কারণেই আজ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানিতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন দাখিল করেননি অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ১০০ভাগ জামিনের হকদার। তার জামিন আটকাতে সরকারি ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নেবে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, আদালত আজ আমাদের আর্জি আমলে নেননি, অ্যাটর্নি জেনারেলের কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আশাবাদী।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনজীবীর আর্জি আমলে নেননি আদালত। অ্যাটর্নি জেনারেলের কথার ওপর ভিত্তি করে আদেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা এখনও বিশ্বাস করি– দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে খালেদা জিয়ার জামিন হবে।
আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা নিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এর জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল দায়ী। তার কথা শুনে আদালতের একতরফা সিদ্ধান্তে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, আমরা সিনিয়র আইনজীবীরা তা সামাল না দিলে পরিস্থিতি কোন দিকে যেত তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের বাড়াবাড়িতে জুনিয়র আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আমরা আদালতের প্রতি সম্মান রেখে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের বরাত দিয়ে আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাকি আছে, সেগুলো করতে সময় লাগবে। খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন এবং শুনানির জন্য দুই সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত আগামী ১১ ডিসেম্বর মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল এবং শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ অন্যরা আজকের মধ্যেই শুনানি করার দাবি জানান। এ সময় দুপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে চরম উচ্চবাচ্য শুরু হয়। জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, আগে তার জামিন দেন, প্রয়োজনে শুনানি পরে হোক। তিনি খালেদা জিয়ার অন্তর্বর্তী জামিন প্রার্থনা করেন। এর বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
তখন আদালত জানান আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। এর পর বিএনপির আইনজীবীরা কোর্টে হট্টগোল শুরু করেন।
কয়েক মিনিট ধরে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলার পর আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতিসহ ছয় বিচারপতি এজলাস ছেড়ে খাসকামরায় চলে যান। এ সময় আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শেইম শেইম বলে চিৎকার করতে থাকেন।
বিচারক কোর্ট থেকে উঠে চলে গেলেও আইনজীবীরা কেউ কারও জায়গা ছাড়েননি, যে যার জায়গায় বসে আছেন। তারা জামিন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার কথা বলেন। দুপক্ষের আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বন্ধ ছিল বিচারিক কাজ।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দীন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সগীর হোসেন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপির শতাধিক আইনজীবী।