DMCA.com Protection Status
title="৭

ব্যাংকের টাকা মেরে কানাডায় বাড়ি-ব্যবসা কিনেছেন বিবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ নেতা!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান রতন ব্যবসার কথা বলে  সোনালী ব্যাংক থেকে চার কোটি ১২ লাখ টাকা ঋণ নেন ১৯৯৯ সালে।

পরে চলতি মূলধন ঋণ নেন আরও তিন কোটি টাকা। এর খুব সামান্য অংশ দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিকে কারখানা নির্মাণ করেন। বাকি টাকায় কেনেন জমি। বছর কয়েক পর সেই জমির দাম কয়েকগুণ হলে তা বিক্রি করে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে যান কানাডায়।

পাচারের টাকায় বাড়ি কেনেন সেখানে। তাও একটি নয়, ২০১৭ সালে কানাডার টরন্টোতে তিনটি বাড়ি ও একটি রেস্তোরাঁর মালিক হন।

ব্যাংকের টাকা মেরে বিদেশে বিত্তবৈভব গড়ে তোলা এই ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হান্নান রতন। সরকারি রাস্তায় নিজের নামকরণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল হান্নান রতন সমকালকে বলেন, 'কানাডায় আমার বাড়ি থাকলে, আপনি নিয়ে নেন।'

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৯ ও ২০০১ সালে দু'দফায় সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে নেওয়া ঋণের ৭ কোটি ১২ লাখ টাকা হাতে আসার পর বিসিকের কারখানায় রহস্যময় অগ্নিকাণ্ডকে কারণ দেখিয়ে রতন খেলাপি হন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রতনের হাত ছিল বলে সোনালী ব্যাংক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা রতন শুধু ব্যাংকের টাকা মারেননি, গায়ের জোরে সরকারি টাকায় নির্মিত তিনটি রাস্তার নামকরণ করেছেন নিজের নামে। যে কারণে এলাকাবাসী বলেন, 'রাস্তা সরকারের, নাম রতনের'। নিজের নামে রাস্তা করলেও দেশের বা এলাকার জন্য বিশেষ কোনো অবদানের কথা জানা যায়নি তার। যদিও রতনের দাবি এলাকার উন্নয়নে বিভিন্ন কাজ করায় লোকজন খুশি হয়ে এসব রাস্তায় তার নাম বসিয়েছে। অবশ্য এলাকার উন্নয়নে কী করেছেন তা বলেননি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও তার নিজ এলাকা আশুগঞ্জের অনেকেই জানান, ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিতে ২০০২ সালে কারখানায় আগুন লাগার কাল্পনিক গল্প সাজান তিনি। রাতের আঁধারে রতন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ থেকে সব মালপত্র সরিয়ে নেওয়ার পর কারখানার ভেতরে পরিত্যক্ত কাগজে আগুন ধরানো হয়। পরে রতন নিজেই রটাতে থাকেন, অগ্নিকাণ্ডে কারখানা পুড়ে সব মালপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সেই দোহাই দিয়ে ব্যাংকের ঋণের টাকা আর শোধ করেননি। এরপর সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে কারখানা পরিদর্শনে গেলে উঠে আসে আগুন লাগার ঘটনা সঠিক নয়। কারখানাটি তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। তখন সমুদয় ঋণ পরিশোধের জন্য নোটিশ দিলে তিন কিস্তি পরিশোধ করে আর টাকা দেননি।

সোনালী ব্যাংকের ঋণের টাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিকে গড়ে তোলা রতন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে গত মাসের মাঝামাঝি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সালের কথিত আগুনের সময়কার অবকাঠামো ব্যবহার করে বিস্কুট উৎপাদন ও প্যাকেটজাত করছে সুপরিচিত ব্র্যান্ড ডেকো। রতনের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে কারখানা চালাচ্ছে তারা। পরিচয় গোপন করে এ প্রতিবেদক এক সন্ধ্যায় ওই কারখানায় যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে রতন ফুড ইন্ডাস্ট্রির সাইনবোর্ড টানানো। ভেতরে আলো জ্বলছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ফটকে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে কথা বলতেই আরও কয়েকজন সেখানে জড়ো হন। তারা জানান, রতন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিসিকে মোট ৯টি শিল্প প্লট নিয়ে দুটি কারখানা গড়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভাড়ায় চলছে এ কারখানা। বর্তমানে তার কাছ থেকে ডেকো ভাড়া নিয়ে কাজ করছে। দুটি কারখানায় বর্তমানে ডেকোর ৩০০ লোকবল কাজ করেন। ডেকো এখান থেকে বিস্কুট তৈরি ও প্যাকেটজাত করার পর তা সাভারে নেয়। সেখান থেকে বাজারজাত করে।

বিসিকের কারখানা ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে রতন বলেন, কারখানা নিয়মিতভাবে চলছে। আপনি গিয়ে দেখেন কারখানা চালু আছে কি না। সম্প্রতি এ প্রতিবেদক তার কারখানা ঘুরে আসার বিষয়টি জানানোর পর সুর পাল্টে রতন বলেন, 'ব্যাংক আমাকে চলতি মূলধন ঋণ দেয়নি, যে কারণে কন্ট্রাক্টে আমি ডেকোর কাজ করে দিচ্ছি।

জানা যায়, সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় থেকে নিজের নামে দু'বার ঋণ নিয়েই থেমে থাকেননি রতন। বেনামেও নিয়েছেন প্রায় ৫ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে নিজের শাশুড়ি ও মামাকে ভাইবোন দেখিয়ে নিউ শ্রাবণ এগ্রো ফুড নামের একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেন ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে সোনালী ব্যাংকের এক পরিদর্শনে বিষয়টি ধরা পড়ার পরে পরিদর্শনে উঠে আসে, তার শাশুড়ি হামীমা খানম ওরফে শামিমা হোসেন এবং মামা এমদাদুল হক ওরফে আখতার হোসেনকে ভাইবোন দেখিয়ে ঋণটি নিয়েছেন রতন। এরপর ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ব্যাংক থেকে নোটিশ দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে সমুদয় পাওনা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও সে টাকা আজ অবধি আদায় হয়নি। এরপর আবার ২০১২ সালে বন্ধ কারখানা চালানোর জন্য আরও ১৯ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করা হলেও শেষ পর্যন্ত আর ঋণটি বিতরণ করেনি সোনালী ব্যাংক। আগে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করা হয়। এছাড়া তিন দফায় ঋণটি পুনঃতফসিল করে সর্বশেষ তা পরিশোধের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০২৪ সাল পর্যন্ত। রহস্যজনকভাবে 'অগ্নিকাণ্ডে' বীমা দাবি পাওয়া সাপেক্ষে ঋণটি পরিশোধের সুযোগ দেয় সোনালী ব্যাংক। ওই সময় সোনালী ব্যাংকের যারা এক্ষেত্রে সহায়তা করেছিলেন তাদের বেশিরভাগই চাকরিতে নেই। এসব বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের বর্তমান মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোদাচ্ছের হাসানের সঙ্গে দেখা করে বক্তব্য চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান  বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঋণটি অনাদায়ী আছে। বিসিকের ওই কারখানা নিলাম করে টাকা আদায়ে মামলা চলছে। অনেক পুরাতন ঘটনা, এর চেয়ে বেশি কিছু তার জানা নেই বলে জানান।

এ বিষয়ে আব্দুল হান্নান রতন বলেন, কারখানায় আগুন লাগার পর তিনি তা ঠিক করে এখন চালাচ্ছেন। ব্যাংকের ঋণ নিয়মিত আছে। খেলাপি ঋণের তথ্য উল্লেখ করার পর অবশ্য সুর পাল্টে বলেন, 'ব্যাংক চলতি মূলধন ঋণ না দেওয়ায় আমি মামলা করেছি। এর বেশি কিছু জানার দরকার হলে ব্যাংকে যান।'

বেনামি ঋণ, এক খাতের নামে ঋণে নিয়ে আরেক খাতে ব্যবহার বা ঋণের টাকায় বিদেশে বাড়ি কেনা মানি লন্ডারিং ও অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। এসব বিষয়ে কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট। জানতে চাইলে এ ইউনিটের উপপ্রধান মো. ইস্কান্দার মিয়া  বলেন, দেশের বাইরে বাড়ি কেনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিএফআইইউ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও কোনো মাধ্যমে অভিযোগ এলে আইন অনুযায়ী অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কানাডায় তিন বাড়ি :ঋণের টাকায় কেনা জমির কিছু অংশ বিক্রি করে কানাডায় বাড়ি, গাড়ি ও হোটেল ব্যবসা গড়ে তুলেছেন রতন। ২০১৭ সালে ৪৭ লাখ কানাডিয়ান ডলার খরচ করে টরন্টোতে তিনটি বাড়ি কেনেন তিনি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার মূল্যমান দাঁড়ায় ২৮ কোটি টাকা। আর টরন্টোর 'তাজ' হোটেলের মালিকানায় রয়েছে তার নাম। তবে এখানে বিনিয়োগের পরিমাণ বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। টরন্টো ১০ জেকোলিন, ক্রিসেন্ট এলাকায় একটি পুরাতন বাড়ি কেনেন আব্দুল হান্নান রতন। ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮ লাখ কানাডিয়ান ডলারে কেনা বাড়ির নম্বর এম৩বি১এ২। বাড়িটি যে আব্দুল হান্নান রতনের সে তথ্যের সঠিকতা মিলেছে দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠান নগর পরিকল্পনা বিভাগের ওয়েবসাইটের তথ্যে। পুরনো এ বাড়ি ভেঙে নতুন করে দোতলা বাড়ি নির্মাণের জন্য টরন্টো নগর পরিকল্পনা বিভাগে আবেদন করেন রতন। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর সেখানে শুনানি শেষে তার আবেদন গৃহীত হয়। আবেদনের নম্বর ছিল ৪৩৩২ এল ৮৬, অঞ্চল- আরডি/আর ৫ (জেডজেডসি), নর্থ ইউয়র্ক। টরন্টো নগর পরিকল্পনা বিভাগের ওয়েবসাইটে এখনও এ তথ্য রয়েছে।

টরন্টোতে দ্বিতীয় বাড়িটি কেনেন একই বছরের ১৮ এপ্রিল। ১৯ আশগ্রোভ পি১, টরন্টো, অন্টারিও এলাকায়। বাড়ির নম্বর এম৩বি২ওয়াই৯। এ বাড়ি কিনতে খরচ করেন ১৮ লাখ ৫০ হাজার কানাডিয়ান ডলার। দেশটির সান্ড্রা এনজেল কিম নামের এক ব্যক্তি থেকে যা কেনা হয়। তৃতীয় বাড়িটিও কিনেছেন এই কিমের কাছ থেকে। ২০১৭ সালের ৩০ জুন ১০ লাখ ৫০ হাজার ডলার খরচ করে কেনেন এ বাড়ি। সান্ড্রা এনজেল ২০১১ সালে ৭ লাখ ২৩ হাজার ডলারে বাড়িটি কিনেছিলেন।

জানতে চাইলে আব্দুল হান্নান রতন সমকালকে বলেন, 'কানাডায় আমি বাড়ি করেছি? বাড়ি থাকলে আপনি খুঁজে বের করে নিয়ে নেন। বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করার পর বলেন, এসব এলাকার নামও আমি জানি না। আমার একটা ছেলে সেখানে লেখাপড়া করে। আমি তাকে দেখার জন্য মাঝে মধ্যে যাই। তাজ হোটেলে মালিকানা তো দূরের কথা, এই নাম আগে কখনও শুনিনি।'

কানাডার টরন্টোয় আব্দুল হান্নান রতনের প্রভাবশালী অবস্থানের বিষয়টি উঠে এসেছে দেশটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার খবরে। দেশটি থেকে বাংলায় প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমে সেখানকার বিভিন্ন কর্মসূচিতে রতনের প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেওয়ার তথ্য এসেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সিবিএন২৪-এ প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়, বাংলাদেশের ৪৭তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ২৩ ডিসেম্বর কানাডা আওয়ামী লীগ ও অন্টারিও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। টরন্টোতে রেড হট তান্দুরির মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আব্দুল হান্নান রতন। চলতি বছরের ২ আগস্ট টরন্টো স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার খবর প্রকাশ করে বিসিভি২৪ নামের অপর এক নিউজ পোর্টাল। কানাডা আওয়ামী লীগের অফিসের সামনে মোমবাতি প্রজ্বালন অনুষ্ঠানেও প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

সেখানে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রথমে রতন বলেন, একবার আমি সেখানে যাওয়ার পর তারা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। একবার নয়, একাধিক কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যা দেশটিতে তার শক্ত অবস্থানের জানান দেয় কি না জানতে চাইলে রতন বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য। আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি কর্মসূচিতে অংশ নেন।

রাস্তা সরকারের, নাম রতনের :নানা জালিয়াতিতে অভিযুক্ত আব্দুল হান্নান রতন কখনও জনপ্রতিনিধি ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ বা দেশের জন্য বিশেষ কোনো অবদান রাখেননি। অথচ তিনটি রাস্তার নামকরণ করেছেন নিজ নামে। যদিও এসব রাস্তা নির্মাণে কানাকড়িও খরচ করেননি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঢাকা-সিলেট ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে গেলেই চোখে পড়ে এসব নাম ফলক। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে খড়িয়ালা ও বেড়তলা সড়ক এবং কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে চান্দিয়ারা সড়কে পাকা ইমারতে বড় করে লেখা 'আব্দুল হান্নান রতন সড়ক'। এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের খরচে বিভিন্ন সময়ে এসব রাস্তা নির্মিত হয়েছে। এই রাস্তা নির্মাণে রতন এক টাকাও খরচ করেননি। অথচ গায়ের জোরে নিজের নামফলক বসিয়েছেন।

এসব রাস্তায় নামকরণের জন্য অনুমোদন রয়েছে কি না জানতে চাইলে রতন পাল্টা এ প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, 'রাস্তার নাম কি আমি দিয়েছি? জনগণের খেদমত করায় তারা খুশি হয়ে আমার নামে রাস্তা করেছে। আমি জোর করে এটা করেছি কি না এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখেন।'

জানতে চাইলে স্থানীয় দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের টানা কয়েকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জিয়াউল করিম খান সাজু সমকালকে বলেন, রতনের নামে রাস্তায় নাম ফলক ব্যবহারের কোনো অনুমোদন নেই। সে নিজেই এসব রাস্তায় নামকরণ করেছে। খড়িয়ালার রাস্তাটি গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে নির্মিত হয়। তখন ওই এলাকার চেয়ারম্যান থাকার সুবাদে তিনি একজন মহিলা মেম্বারকে দায়িত্ব দিয়ে রাস্তাটি করিয়েছিলেন। কয়েক বছর পর দেখেন ওই রাস্তায় আব্দুল হান্নান রতনের নামফলক লাগানো হয়েছে। পরে খোজ নিয়ে জানতে পারেন রতন জোর করে এটা করেছে।

কে এই রতন :আব্দুল হান্নান রতনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নে। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মো. তোরাব আলী ও রহিমা খাতুন দম্পতির ছেলে রতন বড় হয়েছেন আর্থিক অনটনের মধ্যে। অভাবের কারণে লেখাপড়ার খরচ চালানোর মতো আর্থিক সচ্ছলতা তার পরিবারের ছিল না। যে কারণে বিভিন্ন ব্যক্তির বাড়িতে লজিং থেকেই লেখাপড়া জীবনের বড় একটি সময় পার করেছেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করেন নিজ বাড়ি থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে আশুগঞ্জে চর চারতলা গ্রামের তিনজনের বাড়িতে লজিং থেকে। পরে উচ্চ মাধ্যমিক লেখাপড়া করেন জেলা সদরের পৈরতলা হাজী কালামিয়ার বাড়িতে থেকে। এরপর বিভিন্ন ব্যক্তির আর্থিক সহায়তা নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তি হন। সেখানে ছাত্রমৈত্রী করতেন। পরবর্তীকালে ঢাকায় এসে নিজেকে ছাত্রমৈত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচয় দিয়ে যোগ দেন ছাত্রলীগে। বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কুলা প্রতীকে নির্বাচন করেন। সেবার মাত্র ৩,৭৩৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান। জনশ্রুতি আছে সেই নির্বাচনে কোটি টাকারও বেশি খরচ করেছিলেন। এরপর আর ভোটের মাঠে আসেননি। এলাকাবাসী জানান, জালিয়াতির কারণে আগ থেকেই নিজ এলাকায় সমালোচিত রতন। বাংলাদেশে দৃশ্যমান কোনো সম্পদ না থাকলেও রতন চলেন দামি গাড়িতে। নিয়মিত বেতনভুক্ত দু'জন গানম্যান রয়েছে তার।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!