ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের মাঠে নামার সময় এসেছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা যদি ব্যর্থ হই তাহলে ইতিহাস আমাদের কলঙ্কিত করবে। আব্রাহাম লিঙ্কন থেকে শুরু করে যুগে যুগে স্বৈরাশাসকরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, মানবাধিকার, আইনের শাসন ধ্বংস করেছে। তখন আইনজীবীরা মাঠে নেমেছে।
শনিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
দলমত নির্বিশেষে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মনে রাখবেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি ব্যর্থ হয়, আইনজীবীরা তখন দেশের নেতৃত্ব দেবেন। আমি মনে করি, বর্তমান বাংলাদেশে আইনের শাসন ভুলুণ্ঠিত, যেখানে মানবাধিকার বলতে কিছু নেই, মৌলিক অধিকার, ভোটের অধিকার নেই।
সেখানে আজ সময় এসেছে আইনজীবীদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর। কালো কোর্ট পড়ে শপথ নিয়েছি, দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করব। যেখানে সব ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আমরা ঘরে বসে থাকব, এটা হতে পারে না। একদিন এই আইনজীবীদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব আসবে। সারা বাংলাদেশের মানুষ মানবাধিকার, আইনের শাসন পাবে। গণতন্ত্র কায়েম হবে।
তিনি আইনজীবীদের উদ্ধেশ্যে বলেন, নেতৃত্ব দিতে বেশি লোকের দরকার হয় না। পৃথিবীতে বিপ্লব কিন্তু কম লোকের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সেখানে এসে মিলেছে তৃণমূলের মানুষ। তাই সময় এসেছে, আর বসে থাকার উপায় নেই। দেশে দুর্নীতি হবে, মানুষ গুম হবে, বিচারবহির্ভূত হত্যা হবে, আর আমরা আইনজীবীরা বসে থাকব, এটা হতে পারে না। হতে দেয়া হবে না।
ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দের পরিচালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি আব্দুর রউফ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ আলী, ঢাকা বারের সাবেক ট্রেজারার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শামসুজ্জামান প্রমুখ।
বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, আইনজীবিদের পড়াশুনার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি বারে স্টাডি সার্কেল গড়ে তুলতে হবে। বারের থিঙ্ক কি তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। একজনের সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনজীবিদের মেধা ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে বারের দোষক্রটিগুলো সারানোর ব্যবস্থা সম্ভব। এটা সম্ভব না হলে রাজনৈতিক দলের মতো মারামারি কাটাকাটি হবে। তিনি আরো বলেন, আইনজীবিদের কর্তব্য হলো আইনটা কোথায় আছে সেটা আগে জানা। আইনটা খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া জানতে হবে। কোথায় গেলে গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশনটা পাবেন সেটা খুঁজতে হবে। এই প্রক্রিয়ার পড়াশুনা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলো নেই। আইনজীবি হিসেবে শিক্ষার্থীদের কোর্টে পাঠানোর মতো শিক্ষাটা সেখানে নাই। আগে সিনিয়ররা আমাদের উকিল বানানোর জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু এখন কোর্টে সহযোগীতা করার মতো সিনিয়র খুব কমই পাবেন।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশে এক ক্রান্তিলগ্ন চলছে। যখন দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বিচার বিভাগ বলতে একবারেই নেই, বিচার বিভাগের ওপরে যখন বর্তমান সরকার লম্বা হাত দিয়ে সর্বোচ্চ দাবিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, বিচারক, বিচারপতিরা যেভাবে বিচার করতে চান সেভাবে তাদের বিচার করতে দেয়া হচ্ছে না। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতিরা সংবিধান মোতাবেক শপথ নিয়ে বিচারপতি হয়েছেন, সেখানেও সে শপথের মূল্য তারা রাখতে পারছেন না। সেখানে আইনজীবীদের সম্মিলন আশা জাগানিয়া।