DMCA.com Protection Status
title="৭

আইডিয়াল স্কুলে ছাত্রীদের ওড়না ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাঃ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন অভিভাবকরা।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হঠাৎ করে রাজধানী ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এবং স্বনামধন্য মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। আগে মেয়েদের ড্রেসকোডে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নতুন প্রণীত ড্রেসকোডে সেখানে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছেলেদের মাথায় টুপি ব্যবহারকেও অঘোষিতভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকদের মধ্যেও আগে যারা পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতেন তাদেরকে এখন পাঞ্জাবী পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে কেউ পাঞ্জাবী পড়লেও পাঞ্জাবীর উপরে আলাদাভাবে মুজি কোট সদৃশ কোটি পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন তারা ড্রেসকোডে কোনো পরিবর্তন আনেননি। মেয়েদের ওড়না বা স্কার্ফ ব্যবহার এবং ছেলেদের টুপি ব্যবহারকে পুরোপুরি নিষেধও করা হয়নি। তবে এই ড্রেসগুলোকে শুধু ঐচ্ছিক করা হয়েছে মাত্র।

মঙ্গলবার দুপুরে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা গেলো স্কুলের বালক শাখার ছুটি হয়েছে। দলে দলে বের হয়ে আসছে ছেলেরা। তবে অনেক শিক্ষার্থীর মাথায় টুপি নেই। আগে যেখানে প্রায় প্রতিটি বালকের মাথায় টুপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকতো মঙ্গলবারের চিত্র ছিল সম্পুর্ণ বিপরীত। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্তে ড্রেসকোডে পরিবর্তন এনে ছেলেদের টুপি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ করেছেন অনেক অভিভাবক। প্রথম সারির দাবিদার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিলে প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও বনশ্রীতেও আরো দু’টি শাখা রয়েছে।

দুপুর দুইটার একটু আগে মূল স্কুল ভবনের ভেতরের মাঠে গিয়ে দেখা গেল বেশ কিছু মেয়ে স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে মাঠে খেলাধুলা করছে। অনেকে আবার স্কাউটিং এর অনুশীলন করছে। অনেক মেয়েরা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে সেই খেলা দেখছে। কিন্তু কোনো একজন শিক্ষার্থীর শরীরে বড় ওড়না বা স্কার্ফ পরিহিত নেই। দু’একজনের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তারা স্কুলের ড্রেসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলো না।

 

স্কুলের বাইরে রাস্তার পাশের একটি বইয়ের দোকানের বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানালেন, আগে বালক বা বালিকা শাখার যে কোনো শিফটের ছুটি হলে স্কুলের বাইরে অন্যরকম একটি দৃশ্যের অবতারণা হতো। যে কেউ স্কুলের ড্রেস দেখলেই সহজে বুঝতে পারতো আইডিয়াল স্কুল ছুটি হয়েছে। কিন্তু এখন দেখুন, অনেক ছেলেদের মাথাতেই টুপি দেখা যায় না। একই ভাবে তিনি জানালেন, নতুন ড্রেসকোড দেয়ার পর মেয়েদের মাথায়ও এখন আর আগের সেই স্কার্ফও দেখা যায় না।

পেশায় আইনজীবী এম এস রহমান নামের এক অভিভাবক নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে স্কুলে গিয়ে আমরা শিক্ষকদের কাছে সরাসরি কোনো অভিযোগ করতে পারি না। এই স্কুলের মূল শাখায় (মতিঝিলে) আমার ছেলে ও মেয়ে পড়ালেখা করছে। আগের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি। ইসলামী ভাবধারায় ভবিষ্যতে সন্তানদের গড়ে তোলার আশা নিয়ে এখানে সন্তানদের ভর্তি করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেই আশাও পূরণ হবে না।

রেশনা নামের এক মা অভিযোগ করেন আমার মেয়ে আগে যেখানে নিয়মিত গায়ে ওড়না জড়িয়ে আর মাথায় স্কার্ফ বেঁধে স্কুলে আসতো এখন সে শুধু একটি সাধারণ ওড়না ক্রস আকারে শরীরে দিয়ে স্কুলে আসছে। কোনো কোনো শিক্ষক নাকি আমার মেয়েকে আগের ড্রেস পড়ে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছেন।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের দিবা শাখার এক শিক্ষক নয়া দিগন্তকে জানান, সম্প্রতি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির এক সভায় ড্রেস কোড পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটিতে সরকারের পক্ষ থেকে একজন প্রতিনিধি ছিলেন।

তার নাম আবু হেনা মোর্শেদ জামান। সরকারের কোনো কর্মকর্তা যখন স্কুল কমিটিতে কোনো সিদ্ধান্ত দেন তখন অন্যান্য সদস্যদের ওই সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়। নতুন ড্রেসকোডের ক্ষেত্রেও সরকারি ওই কর্মকর্তার মতামতকেই প্রাধান্য দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, শিক্ষকদের ড্রেসের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো শিক্ষক এখন থেকে আর পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতে পারবেন না। পাঞ্জাবী পড়লেও এর উপরে বাধ্যতামূলকভাবে আলাদা কটি পড়তে হবে। শিক্ষকদের জুতা ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আলাদা কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোডের বিষয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম মঙ্গলবার দুপুর দুইটায় তার অফিসে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে বলেন, স্কুলের ড্রেসকোড নিয়ে বাইরে যেভাবে প্রচার হচ্ছে বিষয়টি আসলে সেই রকম না। ড্রেস আগে যা ছিল তাই আছে। তবে মেয়েরা আগে মাথায় আলগা মতো একটি ওড়না ব্যবহার করতো । এখন সেটিকে ভালভাবে পড়তে বলা হয়েছে। তবে একথা ঠিক যে, এই ওড়না বা হিজাব পড়াটাকে আমরা ঐচ্ছিক করেছি। চাইলে কেউ এই হিজাব ভালমতো পড়বে আর কেউ না চাইলে না পড়বে।

আগে তো’ মেয়েদের বড় ওড়না ব্যবহার আবশ্যিক ছিল, তাহলে এখন কেন এটাকে ঐচ্ছিক করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না; বিষয়টি এরকম নয়। একথা ঠিক যে, আগে মেয়েরা একটি বড় ওড়না ব্যবহার করতো কিন্তু সব মেয়েই কিন্তু ভেতরে ক্রস আকারে ডেসের সাথে মিল রেখে বেল্ট দিয়ে একটি ওড়না ব্যবহার করতো। এখন উপরের বড় ওড়নাটাকেই ঐচ্ছিক করা হয়েছে। ওই বড় ওড়নাটা অনেকে সুন্দর করে পড়ে স্কুলে আসতো না। তাই আমরা বলেছি সুন্দর করে ওড়না পড়তে হবে। যেনতেন বা অগোছালোভাবে ওই ওড়না পড়া যাবে না। কাজেই ওড়নাতো একটি আছেই। আর যে কথাটি বলা হচ্ছে ওড়না নেই এটা আসলে সঠিক না।

ছেলেদের টুপির বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে অন্য ধর্মের বাচ্চারা পড়াশোনা করে। মুসলিম ছাড়া অন্য কাউকেতো টুপি পড়তে বাধ্য করা যায় না। তাই আমরা টুপি ব্যবহারকে ড্রেসে কোডে ঐচ্ছিক করেছি।

শিক্ষকদের পায়জামা আর পাঞ্জাবী পড়ার বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, শিক্ষকদের আমরা স্মাট হিসেবে দেখতে চাই। কেউ পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতে চাইলে আমরা বলেছি শুধু পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসা যাবে না। পাঞ্জাবীর উপরে অবশ্যই আলাদা একটি কপি পড়তে হবে। এছাড়া শিক্ষকদের জুতা ব্যবহারের বিষয়ে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!