ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতা,স্বঘোষিত মুরতাদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের মাথার ওপর ঝুলছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
পুলিশের খাতায় তারা এখন ফেরারি আসামি। প্রাক্তন মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণখেলাপি হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়েও তা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। সে মামলা মোকাবিলায় হাজির না হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। পুলিশ বলছে, তারা কেউই এখন দেশে নেই। জানা গেছে, দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে তিনটি ব্যাংক থেকে অন্তত ১৪০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের।
প্রিন্টিং প্রেস ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসার জন্য মেজেস্টিকা হোল্ডিংস ও ধলেশ্বরী লিমিটেড কোম্পানি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান গঠন করেন লতিফ সিদ্দিকীর পরিবারের সদস্যরা। আবদুুল লতিফ সিদ্দিকীর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ছেলে অনিক সিদ্দিক ও মেয়ে রাইনা ফারজিন পরিচালক পদে আছেন। এবি ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখা থেকে মেজেস্টিকার নামে ৪০ কোটি ৭২ লাখ এবং ধলেশ্বরীর নামে ১৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ঋণখেলাপি রয়েছে। একই কোম্পানির নামে জনতা ব্যাংক থেকে ৫১ কোটি; পদ্মা ব্যাংক থেকে ধলেশ্বরী কোম্পানির নামে ৩০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে।
গত বছরের জুনে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী শীর্ষ ৩শ খেলাপির যে তালিকা প্রকাশ করেন, তাতে মেজেস্টিকা রয়েছে ২১২ নম্বরে। ওই তালিকায় কোম্পানিটির নামে ঋণ দেখানো হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা- যা মন্দমানে খেলাপি।
অভিযোগ, লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রভাব খাটিয়ে ২০১১ সালে ওই সব ঋণ নেন। টাঙ্গাইলের কালীহাতি থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৪ সালে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পবিত্র হজ, হযরত মুহাম্মদ (স), তাবলিগ জামাতকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক নিন্দিত হন তিনি। এর জেরে মন্ত্রিসভার সদস্যপদ থেকে এবং আওয়ামী লীগের দলীয় পদ থেকে অপসারিত হন তিনি।
এর পর সংসদ সদস্যের পদ থেকেও পদত্যাগে বাধ্য হন লতিফ সিদ্দিকী। সরকারি জমি অবৈধভাবে বিক্রির দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); গত বছরের জুনে তাকে কারাগারেও পাঠানো হয়। মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ার পরই তার ছেলেমেয়েরা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেন। জানা গেছে, মেয়ে রাইনা ফারজিন বিদেশে লেখাপড়া করে সেখানেই বসবাস করছেন। ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকের খাতায় তারা ঋণখেলাপি।
তাদের কাছে পাওনা আদায়ে চেক প্রতারণার অভিযোগে এনআই অ্যাক্টে দুটি মামলা করে এবি ব্যাংক। আদালতে হাজির না হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ব্যাংকের কাছে বন্ধ রাখা গুলশানের বাড়ি থেকে তাদের আটক করার জন্য গুলশান থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে। গতকাল গুলশানা থানাপুলিশ তাদের আটকের জন্য অভিযান চালায় বলে জানা গেছে।
এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আফজাল বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তা ফেরত দিচ্ছেন না এ প্রতিষ্ঠান দুটির মালিকরা। এরা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি ও দুষ্কৃতকারী। তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আদালত তাদের আটকের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু থানায় ওয়ারেন্ট গেলেও পুলিশ তাদের আটক করছে না। খেলাপি ঋণ কমাতে হলে প্রশাসনের সহযোগিতা লাগবে। কারণ প্রশাসন সহযোগিতা না করলে খেলাপিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ আসামিদের বাসায় গিয়েছিল তাদের আটক করতে। কিন্তু তারা নাকি পালিয়ে গেছেন। আসামিরা কোথায় আছে, তা পুলিশকেই খুঁজে বের করতে হবে। এটি তাদেরই দায়িত্ব। আমরা পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
জনতা ও পদ্মা ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ওই দুটি কোম্পানির নামে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৫১ কোটি টাকা এবং পদ্মা ব্যাংকের পাওনা ৩০ কোটি টাকা। পদ্মা ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা করেছে। জনতা ব্যাংকের মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান বলেন, এ সংক্রান্ত দুটি মামলার ওয়ারেন্ট অর্ডার থানায় আছে। কিন্তু আসামিরা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদের আটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।