ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অর্থ পাচারে জড়িত বিদেশে পলাতক দুর্নীতিবাজদের ফিরিয়ে আনতে টিম পাঠাচ্ছে দুদক। বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর প্রস্তুতি হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মামলা ও অনুসন্ধান চলছে, তাদের নামের একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
বিদেশে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। অনুমতি সাপেক্ষে যেসব দেশে অর্থ পাচারকারীরা পালিয়ে আছে, ওইসব দেশের আদালতে দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে। দুদকের যে টিম যাবে, তাদের সঙ্গে আইন বিভাগের কর্মকর্তারও থাকবেন। তারাই মূলত সংশ্লিষ্ট দেশগুলোয় এ সংক্রান্ত আবেদন দাখিল করবে। এরপর ইন্টারপোল ও এফবিআইয়ের সহায়তায় বিদেশে পলাতক অর্থ পাচারকারীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করছেন, তাদের আইনি প্রক্রিয়ায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যিনি বা যারা অবৈধভাবে ব্যাংকের বা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেন, তা পাচার করে বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন, তাদের প্রত্যেককেই অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
ইন্টারপোলসহ আন্তর্জাতিক সব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। দেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা হবে।
প্রসঙ্গত, ‘ব্যাংক ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার: দুইশ জনকে দেশে ফেরাতে চায় দুদক’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদন যুগান্তরে প্রকাশিত হয় বৃহস্পতিবার। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক চেয়ারম্যান এদিন এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সিঙ্গাপুরসহ আশপাশের দেশগুলো থেকে আমরা কিছু কিছু তথ্য পাচ্ছি। কমিশন থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় এসব দেশের আদালতের সহায়তায় অপরাধীদের সম্পদ জব্দ করে তা দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। কমিশনের প্রচেষ্টায় ইতিমধ্যেই হংকংয়ের আদালতের সহায়তায় কিছু অবৈধ অর্থ জব্দ করা হয়েছে। এটি একটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমেই সর্বাধিক অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে দুদক কার্যালয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় এ জাতীয় অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, ‘কমিশনের সভায় দুদকের ২২টি সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (সজেকা) ২২ জন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তার কার্যালয়ের আওতাধীন প্রতিটি জেলায় কাজ করবেন। যারা মাদক ব্যবসা, সন্ত্রাস, খাসজমি দখল, ঘুষ-দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত থেকে গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে জমা দেবেন। কমিশন সেসব প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেয়া হবে না।’
কমিশনের এমন সক্ষমতা আছে কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সক্ষমতা আপনারাই দেখছেন। সক্ষমতা আমাদের আছে। সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আমরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, কাজের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারই সক্ষমতার উৎস। আজকের কমিশন বৈঠকে পূর্ণাঙ্গ কমিশন, সচিব ও মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সবার দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। আমরা একটি টিম। টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই আমাদের সক্ষমতা সর্বাধিক বিকশিত করার চেষ্টা করছি।’
উল্লেখ্য, বিদেশে অর্থ পাচারে জড়িত ২০০ জনের তালিকা করে প্রথম পর্যায়ে শীর্ষ কয়েকজনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে দুদক। তারা হচ্ছেন গ্লোবাল এনআরবি ব্যংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, বেসিক ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম, এনন টেক্সের কর্ণধার ইউনুছ বাদল, শেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা লুৎফর রহমান বাদল, যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুর রহমান, জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, ঢাকা ট্রেডিংয়ের টিপু সুলতান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আবজাল হোসেন, এমএম ভেজিটেবলসের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের গাজী সোলেমান ও তার স্ত্রী নওরীন হাসিব।
সূত্রঃ দৈনিক যুগান্তর।