ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশী রায়ে কারাবন্দীত্বের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ।
২০১৮ সালের এই দিনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলায় ৭৪ বছর বয়স্ক সাবেক এই সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে বন্দি করা হয়।
এই মামলায় গ্রেফতারের দেড় মাসের মাথায় জামিন পেলেও তাঁর মুক্তি মেলেনি। নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়।
সাবেক সেনাপ্রধান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী তিনি। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনীতিক হিসেবে তাঁর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পর দেশের এক ক্রান্তিকালে বিএনপির হাল ধরেন তিনি। তুমুল জনপ্রিয় এই নারীর নেতৃত্বেই বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়।
স্বৈরাচার-বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন ‘আপসহীন নেত্রীর’ খেতাব। ইতিমধ্যে তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্র্যাসি’ বা ‘গণতন্ত্রের মা’ উপাধি দিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। শুধু দলের নেতাকর্মীই নয়, দেশজুড়ে তাঁর কোটি কোটি ভক্ত-অনুসারী রয়েছেন। কিন্তু আজ ৭৩০ দিন ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া। জামিনে দীর্ঘসূত্রতা আর নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানোর কারণে জামিন পাচ্ছেন না এই মহীয়সী নারী। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, জামিন পাওয়া যে কোনো অধিকার হওয়া সত্ত্বেও এমনকি বেগম জিয়ার মামলাগুলো জামিনযোগ্য হওয়ার পরও সরকারের নির্দেশে তাঁর জামিন দিচ্ছেন না আদালত, ফলে তাঁর মুক্তিও হয়নি। বিএনপির নেতাকর্মীসহ সবারই প্রত্যাশা ছিল জামিনে কারামুক্ত হবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি। ফলে ৭৪ বছরে পা দেয়া বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাগারেই থাকছেন। দীর্ঘ এই বন্দিদশার মধ্যে কারাগারেই পঞ্চমবারের মতো ঈদও কেটেছে তাঁর।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি ও রোগমুক্তি কামনায় গতকাল সারাদেশে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়। ঢাকায় বিতরণ করা হয় লিফলেট। এদিকে আজ নয়াপল্টনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগমীর বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া জড়িত নন। এতিমখানার লেনদেনের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়া জড়িত নন ও ব্যাংকে জমা অর্থ আত্মসাৎ হয়নি বরং ব্যাংকে তা বেড়ে তিনগুণ হয়েছে। এছাড়া অর্থ এসেছে বিদেশ থেকে এখানে রাষ্ট্রের কোনো অর্থ নেই। ট্রাস্টের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের যদিও অনিয়ম থাকত, তবে তা প্রতিকারের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। সে আইনে মামলা না করে মামলা করা হয়েছে দুদক আইনে। ঘষামাজা করে কাগজ তৈরি করে বেগম খালেদা জিয়ার নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। মামলায় ৩২ জন সাক্ষীর কোনো সাক্ষীই আদালতকে বলেননি এ মামলায় বেগম খালেদা জিয়া জড়িত। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা চলছে। এক মামলায় জামিন পেলে তাঁকে আরেক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার রায়ের সার্টিফাইড কপি পেতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়। হাইকোর্টে আপিল করলে জামিন মঞ্জুরের পর আপিল বিভাগ তা স্থগিত করেন। পরে আপিল বিভাগ জামিন প্রদান করলেও অন্য মামলায় তাঁকে আটক দেখানো হয়। কুমিল্লার নাশকতার মিথ্যা মামলায় নিম্ন আদালত বারবার সময় ক্ষেপণ করে। এছাড়া মানহানির অভিযোগে ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নামঞ্জুর করে নিম্ন আদালত। এসব মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে হয়। কুমিল্লায় একটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিল পেলেও অপর মামলায় বারবার সময় ক্ষেপণের পর হাইকোর্টেরে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি জামনি নামঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত। এরই মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজা দেন নিম্ন আদালত। উচ্চ আদালতে নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়। গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতভাবে এই আদেশ দেন। আদালত খালেদা জিয়ার সম্মতি নিয়ে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আদালত জামিন দেবেন। কিন্তু তা দেননি। এটা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের জন্য এটা কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।’ গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। ১০ লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়। এই সাজা বাতিল চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন। গত ২০ জুন মামলার নথি বিচারিক আদালত থেকে হাইকোর্টে আসার পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তাঁর আইনজীবীরা। গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টে জামিন চেয়ে বিফল হয়ে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন বেগম খালেদা জিয়া। এই জামিন আবেদনের শুনানিতে গত ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজনস সেলে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা সম্পর্কে জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বোর্ডের মেডিকেল রিপোর্ট ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেদিন (৫ ডিসেম্বর) মেডিকেল প্রতিবেদন জমা না পড়ায় শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেন আদালত।
সারাদেশে দোয়া ও ঢাকায় লিফলেট বিতরণ অনুষ্ঠিত, আজ ঢাকাসহ সারদেশে সমাবেশ : এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার ঢাকায় সমাবেশসহ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার দুই বছর তথা ৭৩০ দিন হচ্ছে। এইদিনে তাঁর মুক্তির দাবিতে সমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার রাতে দলের এক যৌথসভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও সুস্বাস্থ্য কামনায় শুক্রবার দেশব্যাপী বাদজুমা মসজিদে দোয়া মাহফিল এবং ৮ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টায় ঢাকায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও সারা দেশে জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। ঢাকায় নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। এদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় এবং সকাল ১১টায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন শাহবাগ মোড়, আজিজ সুপার মার্কেট, পিজি হাসপাতালসহ আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেন। লিফলেট বিতরণে অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর সাথে সিনিয়র আইনজীবী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবেদ রাজাসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের সাথে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিনসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে শান্তিনগরের বিভিন্ন এলাকায় লিফলেট বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদন্ড দেন। ওইদিনই তাকে আদালতের পাশে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিত্যক্ত ওই কারাগারে একমাত্র বন্দি তিনি। ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ হলে এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে কেবিন ব্লকে চিকিৎসা নিচ্ছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনা সভা এবং প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করেছে নিশিরাতের অবৈধ সরকার। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর স্বজনরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হচ্ছে। সারাক্ষণ তীব্র ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। বাম হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। তাঁর ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত, বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, হাত-পা নাড়াতে পারছেন না। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। তাঁর যে ভয়াবহ অবস্থা, দ্রুত উন্নত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। বিএসএমএমইউ’র মেডিকেল বোর্ড তাঁর অসুস্থতা যে দেশে নিরাময়যোগ্য নয়, সেটি উল্লেখ করলেও আদালত তাকে জামিন দেননি। ন্যায়বিচারহীনতার এই বিপজ্জনক ছবি পৃথিবীতে বিরল।
যেভাবে কারাবন্দি খালেদা জিয়া : ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণাকে ঘিরে ঢাকাসহ দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলে নিñিদ্র নিরাপত্তা। বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা থেকে আদালত পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগণিত সদস্য মোতায়েন করা হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে কোনো ধরনের শোডাউন বা রাজপথে নামতে না পারেন, সে জন্য তারা ছিলেন তৎপর। তবে কোনো বাধাই আটকাতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীদের। তারা সকাল থেকেই তাদের প্রিয় নেত্রীর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। দলের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত জমায়েত নিয়েই আদালতে যান বেগম খালেদা জিয়া। ওইদিন মামলার রায় শুনতে দুপুর পৌনে ১২টায় গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পথে পথে পুলিশ আর র্যাবের বাধা ও সরকারি দলের লোকজনের সাথে সংঘর্ষের মধ্য দিয়েই তার গাড়িবহরে যোগ দেন হাজারো নেতাকর্মী। তাদের গগনবিদারী সেøাগানগুলোর মধ্যে ছিল- ‘আমার নেত্রী আমার মা-বন্দি হতে দেব না’, ‘জেল দিবি আমায় দে-দেশনেত্রীকে খালাস দে’। তার গাড়িবহর গুলশান-১ হয়ে পুলিশ প্লাজা, হাতিরঝিল লিঙ্করোড হয়ে নাবিস্কো মোড়ে পৌঁছালে চার দিক থেকে গাড়িবহরে যোগ দিতে শুরু করেন ছাত্রদল ও যুবদলের শত শত নেতাকর্মী। বিএনপির বেশকিছু কেন্দ্রীয় নেতাও ছুটে আসেন। গাড়িবহর তিব্বত, সাতরাস্তা দিয়ে এফডিসির মোড়ে পৌঁছালে শুরু হয় স্বতঃস্ফূর্ত গণজমায়েত। কাকরাইল এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষের পরও পুলিশি বাধা অতিক্রম করে নেতাকর্মীরা তাদের নেত্রীর নামে বিভিন্ন সেøাগান দিতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তাঁর গাড়িবহর মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, কদম ফোয়ারা, হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, চানখাঁরপুল অতিক্রম করে বকশীবাজারের বিশেষ আদালতে পৌঁছায়। সেদিন বেগম জিয়ার গাড়িবহরকে ঘিরে উৎসুক মানুষের মনে দেখা দেয় কৌতূহল। সড়কের উভয় পাশে বিভিন্ন অফিস ও আবাসিক ভবনে থাকা লোকজন জানালা খুলে বেগম জিয়ার গাড়িবহরের দৃশ্য অবলোকন করেন। রাস্তায়ও নেমে আসে সাধারণ মানুষ।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে মোট পাঁচবার গ্রেফতার হন বেগম খালেদা জিয়া। এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন তিনি। পরবর্তীতে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর কারারুদ্ধ হন বিএনপি চেয়ারপারসন। পরে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান। সর্বশেষ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনবারের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এদিকে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চারটি সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন জেলার ২৩টি সংসদীয় আসন থেকে ভোট করে সব কটিতেই জয়লাভ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বেগম খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে তাঁর আইনজীবীরা বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এক- এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ৪টি এবং আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে ৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ৫টি, নাশকতার ১৬টি, মানহানির ৪টি, ৩টি হত্যা, মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার ২টি, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি, জন্মদিন পালনের একটি, সাবেক নৌমন্ত্রীর ওপর বোমা হামলার একটি, জাতীয় পতাকার অবমাননার একটি, ড্যান্ডি ডাইংয়ের অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন একটি এবং বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের মালিকানা নিয়ে একটি দেওয়ানি মামলা রয়েছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।