ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ২০০৯ সালের শুরুতে বিডিআর গনহত্যার পর উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবেলায় চরম ব্যর্থতার জন্য আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন জেনারেল মঈন উ আহমেদ।
সেনাসদরে নিজের অফিস কক্ষেই নাকি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ জন্য একটি ‘সুইসাইড নোট’ও প্রস্তুত করেন ওয়ান ইলেভেন জমানার দোর্দন্ড- প্রতাপশালী এই সেনাপ্রধান। তাতে নিজের অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এ জন্যে ক্ষমা চান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ ও দেশবাসীর কাছে।
২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি দুনিয়াজুড়ে বহুল আলোচিত বিডিআর হত্যাকান্ডের দু’দিন পরই এমন সিদ্ধান্ত নেন।
রোমহর্ষক ওই ঘটনার পর শোক-বিক্ষুব্ধ সেনাকর্মকর্তাদের প্রচন্ড চাপের মুখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় মঈনের মাথায় এমন চিন্তা আসে। তবে শেষ পর্যন্ত নানা দিক চিন্তা করে তিনি ফিরে আসেন আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে নিজের খুব ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এমন কথা বলেছেন গত প্রায় ১০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা সাবেক এই জেনারেল।
তবে প্রচন্ড ধূর্ত এবং উচ্চাবিলাসী এই সাবেক জেনারেলের এহেন অনুশোচনা মুলক কর্মকান্ড অনেকেই বিশ্বাস করবেন না বলে জনমনে ব্যাপক ধারনা রয়েছে।
সম্প্রতি আরেকটি বই লেখায় হাত দিয়েছেন তিনি। তার নতুন বইয়ের বিষয়বস্তু হলো বিডিআর হত্যাকান্ডের পূর্বাপর। কবে নাগাদ বইটি প্রকাশ করা হবে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে প্রতিদিনই একটু একটু করে লিখছেন তিনি।
জেনারেল মঈনের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২০০৯ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি নৃশংসতম বিডিআর হত্যাকান্ডের পর নিজের সহকর্মীদের কাছ থেকে প্রচন্ড চাপের মুখে পড়েন তিনি। ভয়াবহ সেই ঘটনায় সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস কর্মকর্তা নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। ঘটনার দিন সকালেই বেশির ভাগ সিনিয়র সেনাকর্মকর্তা জেনারেল মইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পিলখানায় আটকে পড়া কর্মকর্তাগণ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের উদ্ধারের জন্য দ্রুত সেনা অভিযান পরিচালনার তাগিদ দেন। কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সায় নেই এমন অজুহাতে তিনি সেনা অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন।
পরদিন ২৬শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যাবেলায় যখন জানা গেল যে, পিলখানায় অবস্থানকারী কর্মকর্তাদের কেউই বেঁচে নেই, তখন বিপুল সংখ্যক বিক্ষুব্ধ সেনা কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে ছুটে যান সেনাপ্রধানের বাসভবনে।সেখানে জেনারেল মইনের সামনে প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। মইন ছিলেন নির্বাক। এতে কর্মকর্তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে তিনি সেনা অভিযান না চালানোর পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করতেই কয়েকজন কর্মকর্তা মারমুখো হয়ে তেড়ে যান তার দিকে এবং তার জামার কলার টেনে ছিঁড়ে ফেলেন।
এরপর তিনি উদ্যোগী হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আসেন সেনাকুঞ্জে। ক্ষোভের আগুনে জ্বলতে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ক্ষোভ প্রশমনের উপায় হিসেবেই তিনি এ পদক্ষেপ নেন। তবে এই সেনাকুন্জের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ,তার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল(অবঃ)তারেক সিদ্দিকী,সেনা প্রধান জেনারেল মঈন সহ অন্যান্য পদস্থ কর্মকর্তাগন উপস্থিত বিক্ষুব্ধ সেনা অফিসারদের তীব্র রোষানলে পড়েন এবং কঠিন বাক্যবানে জর্জরিত হন।
কিন্তু এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড পরবর্তি সেনা অফিসারদের যৌক্তিক এবং আইনানুগ অভিযোগ গুলো বিবেচনায় না নিয়ে,উক্ত প্রতিবাদী অফিসারদের সুকৌশলে সেনা বাহিনী থেকে অপসারন করা হয়,যার দায় দ্বায়িত্ব সেনা প্রধান জেঃ মঈন কোন ভাবেই এড়াতে পারেন না বলে বিশেষজ্ঞগন মনে করেন।
এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করলে বাংলাদেশের ইতিহাসের জঘন্যতম এই গনহত্যার মূল হোতাদের কে চিন্হিত করা সম্ভব হতো বলে অনেক মনে করেন। বিডিআর গনহত্যার পর জেনারেল জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে গঠিত সেনা তদন্ত প্রতিবেদনটি কেন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি তাও এক বিরাট প্রশ্ন। এই তদন্ড প্রতিবেদনে এই গনহত্যার মুল হোতাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছিলো বলেই কি তা আলোর মুখ দেখেনি???