DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বিডিআর গনহত্যায় হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং ‘র’ জড়িতঃ উইকিলিকস এর তথ্য

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যা মামলার বিতর্কিত রায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড; বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন; ২৬২ জনকে তিন থেকে দশ বছর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছিলেন ২৭১ আসামি।
আদালত পিন্টু ও তোরাব আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন; অনাদায়ে আরো পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। 

রায় পাঠের শুরুতেই বিচারক মামলার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। এতে তিনি জানান, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ‘অপারেশন ডালভাত’ এর অর্থসংশ্লিষ্ট কর্মসূচিতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরকে জড়ানো ঠিক হয়নি। এছাড়া এই বিদ্রোহের তথ্য আগে জানতে না পারার ঘটনায় ‘গোয়েন্দা দুর্বলতা’ ছিল বলেও মনে করছে আদালত। রায় পাঠকালে সংশ্লিষ্ট আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়।


২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে ঘটেছিল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় ৫৭ সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।

দুনিয়া কাঁপানো এই আর্মি ম্যাসাকারের নেপথ্যের নায়কদের আড়াল করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে ৮৫০ বিডিআর জওয়ান। আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত্যা মামলা। বিশেষ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণা করবেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানা হত্যাযজ্ঞে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ নিহত হয় ৭৪ জন। এরই মধ্যে বিজিবি আইনে বিদ্রোহের দায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্তদের বিচার হচ্ছে প্রচলিত আইনে।


২৫ ফেব্রুআরির পিলখানায় নারকীয় সেনা হত্যাযঙ্গের কথা আজও ভুলতে পারেনি জাতি। কি হয়েছিল সেদিন? কারা বা কাদের নির্দেশে এই হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত হয়েছিল?? নেপথ্যের নায়কই বা কারা??? উইকিলিকসের তথ্যে সেই গোপন রহস্য ফাঁস হয়ে পড়েছে।


সেনা হত্যা নিয়ে সেনাবাহিনীর গঠিত তদন্ত রিপোর্টে মোটামুটি উঠে এসেছিল সব কিছু। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সে তদন্ত রিপোর্ট বাতিল করে দিয়েছে। তবে অনলাইনের কল্যানে জনগণ সব জেনে গেছে ভেতরের গোপন কথা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক ও অফিসার জানে – কেনো, কোন্ পরিকল্পনায়, কারা পিলখানায় ৫৭ সেনা অফিসার হত্যা করেছে। সেটাই সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো।

১.র(RAW) : ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘R&AW’এর পরিকল্পনায় ও ব্যবস্থাপনায় ”পিলখানা হত্যাকান্ড” ঘটে। এর মূল লক্ষ ছিল- পাদুয়া ও রৌমারীর ঘটনার বদলা নেয়া এবং বিডিআর বাহিনী ধংস করে দেয়া। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধে ১৫০ জন বিএসএফ নিহত হয়। এর আগে পাদুয়ায় নিহত হয় ১৫ বিএসএফ। বিডিআর ডিজি মেজর জেনারেল এএলএম ফজলুর রহমানের নির্দেশে ঐ যুদ্ধে অংশ নেয় বিডিআর। ঐ ঘটনার পরে ভারতীয় ডিফেন্স মিনিষ্টার জসবন্ত সিং উত্তপ্ত লোকসভায় জানান, ”এ ঘটনার বদলা নেয়া হবে।” লক্ষ করুন, ১৯৭১ সালে যে সব শর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত সামরিক সাহায্য দেয়, তার অন্যতম শর্ত ছিল “Frontier Guards will be disbanded” (CIA Report SC 7941/71). অর্থাৎ বাংলাদেশের কোনো বর্ডার গার্ড থাকবে না। কিন্তু স্বাধীনতার পরে নানা কারনে পাকিস্তান রাইফেলস বালাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) রূপ নেয়। বিডিআর বাহিনীটি ছিলো আধাসামরিক বাহিনী, যার মূল কমান্ড ও ট্রেনিং ছিলো সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মত। অন্যদিকে ভারতের বিএসএফ ছিলো সিভিল বাহিনী, যাদের ট্রেনিং, জনবল সবই ছিলো নিম্নমানের। এসব কারনে বর্ডারে কোনো যু্দ্ধ হলে তাতে বিডিআর সামরিক পেশাদারিত্ব দিয়ে বিজয়ী হত।

পাদুয়া-রৌমারীর বদলা নেয়ার জন্য বিডিআর বাহিনী ধংস করার পরিকল্পনা করে ভারত। এ লক্ষে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী সময়টিকে বেছে নেয়া হয়- যখন হাসিনার নতুন সরকারের ক্ষমতা গ্রহনের পর পর নাজুক সময়। অনেকেই মনে করেন, ভারতীয় পরিকল্পনায় নির্বাচন ছাড়া অপ্রত্যাশিত পদ্ধতিতে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর নানা শর্তের মধ্যে একটি গোপন শর্ত থাকতে পারে “বিডিআর ধংস করা।” চুড়ান্ত রিস্ক থাকা স্বত্ত্বেও হাসিনাকে তা মেনে নিতে হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিডিআর সৈনিকদের দাবীদাওয়ার আড়ালে মুল প্লানটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ৬০ কোটি রুপী বরাদ্দ করে ভারত। এর মধ্যে পিলখানায় ১৫ থেকে ১৭ কোটি টাকা বিলি হয়, যাতে প্রতিটি অফিসারের মাথার বদলে ৪ লক্ষ টাকা ইনাম নির্ধারন করা হয়। ১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারী ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার বাছাই করা ১৫ জন শুটারকে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়, যারা পশ্চিম বঙ্গ সরকারের পাঠানো (প্রেমের নিদর্শন) ১ লক্ষ মিষ্টির সাথে বাংলাদেশে ঢুকে। একজন বেসামরিক দর্জি’র কাছ থেকে বিডিআর এর পোশাক বানিয়ে বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে পিলখানায় উপস্থিত থাকে শুটাররা। তাদের দায়িত্ব ছিলো লাল টেপওয়ালা (কর্নেল ও তদুর্ধ) অফিসারদের হত্যা করা। তারা একটি বেডফোর্ড ট্রাক ব্যাবহার করে ৪ নং গেইট দিয়ে প্রবেশ করে ২৫ তারিখ সকালে। ঘটনার দিন সকাল ১১টায় বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যম জানার আগেই ভারতের “২৪ ঘন্টা” টিভিতে প্রচার করা হয় জেনারেল শাকিল সস্ত্রীক নিহত। অর্থাৎ মূল পরিকল্পনা অনুসারেই খবর প্রচার করে ভারতীয় গণমাধ্যম!

পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে বা আর্মির পদক্ষেপে শেখ হাসিনার জীবন বিপন্ন হলে তাকে নিরাপদে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারতীয় ৩০ হাজার সৈন্য, ছত্রীবাহিনী ও যুদ্ধবিমান আসামের জোরহাট বিমানবন্দরে তৈরী রেখেছিলো ভারত। বিদ্রোহের দিন ভারতের বিমান বাহিনী IL-76 হেভি লিফ্‌ট এবং AN-32 মিডিয়াম লিফ্‌ট এয়ারক্রাফট নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সহায়তা দিতে পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো। ঐসময় প্রণব মুখার্জীর উক্তি মিডিয়ায় আসে এভাবে, “এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সব ধরণের সহায়তা দিতে ভারত প্রস্তুত। … আমি তাদের উদ্দেশ্যে কঠোর সতর্কবাণী পাঠাতে চাই, যারা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে, তারা যদি এ কাজ অব্যাহত রাখে, ভারত হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না, প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে।”

২. শেখ হাসিনা : ভারতের এই পরিকল্পনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয় বেশ আগেই। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নিমিত্তে ঘটনার ১ সপ্তাহ আগে তড়িঘড়ি করে প্রধানমন্ত্রীকে সুধাসদন থেকে সরিয়ে যমুনা অতিথি ভবনে নেয়া হয়, কেননা পিলখানার ডেঞ্জার এরিয়ার মধ্যে ছিল ওটা। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার মেরামত শেষ না হওয়া স্বত্ত্বেও ভারতের সিগনালে খুব দ্রুততার সাথে হাসিনাকে সুধাসদন থেকে সরানো হয়। এটা এক অসম্ভব ঘটনা। পিলখানা হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় বিরাট সংখ্যায় সেনা অফিসার হত্যা করা হবে, যেটা ১৯৭৫ সালে তার পিতৃহত্যার একটা বদলা হিসাবে হাসিনার কাছে সুখকর ছিলো। এর মাধ্যমে বিডিআর নিশ্চিহ্ন হবে, টার্গেট করে বিপুল সংখ্যক সেনা অফিসার হত্যা করা হলে তাতে মূল সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙ্গে যাবে। গোয়েন্দা খবর পেয়ে ২৫ তারিখে পৌনে ন’টার মধ্যেই এনএসআই ডিজি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে- “পিলখানায় বিদ্রোহ হচ্ছে। ” প্রধানমন্ত্রী নিরব থাকেন! আক্রমনের পরে অফিসারদের SOS পেয়ে সকাল ১০টার মধ্যে র‌্যাবের একটি দল, এবং ১০.২৫ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি দল পিলখানার গেটে পৌছায়। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অভিযান চালানোর অনুমতি দেয়নি। আশ্চয্যজনকভাবে তিনি সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। আর এর মধ্যে ঘটতে থাকে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। খেয়াল করুন, সেনা অফিসাররা কোনো প্রতিরোধ করেনি, কাজেই কি কারনে বিডিআর সৈনিকরা অফিসারদের হত্যা করবে? এটা ছিল সুপরিকল্পিতভাবে সেনা অফিসার হত্যাকান্ড। সারাদিন হত্যাকান্ড চালানোর সুযোগ দিয়ে বিকালে শেখ হাসিনা হত্যাকারীদের সাথে বৈঠক করে তাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি একবারও জানতে চাননি, ডিজি শাকিল কোথায়? কি বিস্ময়!! জেনারেল জাহাঙ্গীরের তদন্ত কমিটি শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের সুপারিশ করেছিল, যার ফলে হাসিনা ক্ষেপে গিয়ে ঐ রিপোর্ট ধামাচাপা দেন।

৩. গোয়েন্দা সংস্থা: ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক ঘটনার আগের দিন এটা জানার পর সে এনএসআইকে এই মর্মে অবহিত করে যে, পিলখানায় বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলছে যার সাথে বিডিআর ও আওয়ামীলীগের নেতারা জড়িত। এনএসআই থেকে উক্ত সাংবাদিককে বলা হয় বিষয়টা চেপে যেতে। ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় যাওয়ার আগের দিন পিলখানা অস্ত্রাগার থেকে ৩টি এসএমজি খোয়া যায়। তখন সেনা অফিসারদের দায়িত্ব দেয়া হয় অস্ত্রাগার পাহারায়। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দাগিরি বহাল থাকে। নূন্যতম কোনো বিচ্যুতি ঘটলে প্রোগ্রাম বাতিল হয়। এত কিছু সত্তেও ২৪ তারিখে প্রধানমন্ত্রী সেখানে যান। মূলত: বিদ্রোহের আগাম বার্তা সেনাপ্রধান ম্ইন, ডিজিএফআই প্রধান মোল্লা ফজলে আকবর (ইনি হাসিনার এক সময়ের প্রেমিক ছিলেন), এনএসআই প্রধান মেজর জেনারেল মুনির, সিজিএস মেজর জেনারেল সিনা জামালী, বিডিআর কমিউনিকেশন ইনচার্জ লেঃ কর্নেল কামরুজ্জামান, ৪৪ রাইফেল’এর সিও শামস, মুকিম ও সালাম-এর জানা ছিল। কেননা ২৫ তারিখের আগেই দাবী দাওয়ার লিফলেটের কপি ডিজি শাকিল, এনএসআই ও সরকারের কাছে পৌছে। এমনকি মাঠ পর্যায়ের বহু সেক্টর কমান্ডাররা জানত, ২৫ তারিখে একটা ঘটনা ঘটবে। পরিকল্পনামত প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে ২৪ তারিখে জানিয়ে দেয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী ২৬ তারিখের নৈশভোজে যাচ্ছেন না। এমন ঘটনা অতীত কখনও কখনো ঘটেনি!

৪. জেনারেল মইন উ আহমেদ: তৎকালীন সেনাপ্রধান ও ১/১১র প্রধান কুশীলব। ২০০৮ সালের গোড়ার দিকে ভারত সফর করে মইন চেয়েছিলেন পূর্ন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভারতীয় সমর্থন। ভারত রাজী হয়নি, বরং আ’লীগকে ক্ষমতায় আনার লক্ষে মইনকে কাজ করতে বলে, বিনিময়ে সেফ প্যাসেজ পাবে কুশীলবরা। উপায়ান্তর না দেখে মইন রাজী হয় এবং ২৯ ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিত ফলাফলের নির্বাচনে ক্ষমতার পালবদল ঘটায়। মইনের বদলে আসেন হাসিনা! ওয়ান ইলেভেনের খলনায়করা যে সব রাজনীতিবিদদের অত্যাচার করেছে, তাদের বিচারের জন্য ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে সংসদে প্রবল দাবী ওঠে। তখন সেনাবাহিনীর চাপের মুখে জেনারেল মইন নিজে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সাথে সংসদ অফিসে। এরপর শেখ হাসিনা ধমকে দেন মখা আলমগীর, আবদুল জলিলদের, যাতে করে সেনাবাহিনীর বিচারের দাবী আর না তুলে। হাসিনা এ সময় হুঁশিয়ার করেন, “কিভাবে ক্ষমতায় এসেছি, সেটা কেবল আমিই জানি।” অন্যদিকে ঐ সময়ই ভারত তার প্লানমত এগিয়ে যায় বিডিআর অপারেশনে। মইনকে বলা হয় প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দিতে। মইন তার দু’বছরের অপকর্মের স্বাক্ষী আর্মি অফিসারদের আগে থেকেই পোষ্টিং দিয়ে জড়ো করে বিডিআরে। এদের নিধন করা হলে মইনের অপকর্মের সাক্ষী আর পাওয়া যাবে না। ফলে মইনের বিরাট প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল এই হত্যাযজ্ঞ। অন্যদিকে এত সেনা অফিসার নিহত হলে ১/১১ নিয়ে সেনাবাহিনী তথা মইনের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদরা আর মুখ খুলবে না। এতকাল আর্মির রদ্দিমালগুলো যেতো বিডিআরে। কিন্তু এবারে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র- পরিকল্পিতভাবে অনেক চৌকশ অফিসার একসাথে পাঠানো হয় বিডিআরে। পিলখানা হত্যাকান্ডের মাত্র ২ মাস আগে গুলজারকে ষ্টান্ড রিলিজ করে বিডিআরে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়। রাইফেলস সপ্তাহের আগেই কানাঘুসা শুরু হয়- ২৫ তারিখে বিদ্রোহ হবে। তাই অনেক অফিসার নানা অযুহাত দিয়ে ছুটিতে চলে যায়। সেনাপ্রধান মইনের পিলখানা হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত ছিল, যার প্রমান মেলে ঘটনার সাথে সাথেই আক্রান্ত ডিজি শাকিল ও অফিসাররা মইনকে ফোনে জানায়। মইন আশ্বাস দেন সেনা পঠাচ্ছি। অথচ তিনি কোনো ব্যবস্থা নেন নি, সময় ক্ষেপন করে হত্যার সুযোগ তৈরী করে দেয়। ম্ইন চলে যায় যমুনায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে। তেজগাওয়ে এয়ারফোর্স রেডি, আর্মি রেডি সেনিাবাসে। কিন্তু হুকুম আসে না। বিকালে কিছু সেনা ও যানবাহন ধানমন্ডি পর্যন্ত পৌছে গেলেও অপারেশনের অনুমতি দেয়নি হাসিনা ও ম্ইন। ঘটনার ৪ দিন পরে ১ মার্চে হাসিনা সেনাকুঞ্জে গেলে মইন সেনা অফিসারদের ব্যাপক অসন্তোষের মুখে পরেন। এমনকি নিহতদের জানাজার সময় মইনকে চেয়ার তুলে মারতে যায় কেউ কেউ। উল্টো, সেনাকুঞ্জে যে সব সেনা অফিসার বিচার চেয়ে জোর গলায় বক্তৃতা করেছিল, প্রতিবাদ করেছিল- ভিডিও দেখে দেখে এমন প্রায় দু’শ জনকে চাকরীচ্যুত করেছে মইন অনেক অফিসারকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলায় কারাদন্ডও দেয়া হয়েছে।

৫. সজীব ওয়াজেদ জয়: শেখ হাসিনার এই পুত্রটি আগে থেকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনের দেড় মাস আগে (১৯ নভেম্বর) হাসিনার উপদেষ্টা ও পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় তার Stemming the Rise of Islamic Extremism in Bangladesh শীর্ষক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, জোট সরকারের আমলে সেনাবাহিনীতে ৩০% মাদ্রাসার ছাত্ররা ঢুকানো হয়েছে। এদের নির্মুল করে সেনাবাহিনী পূনর্গঠন করতে হবে। পিলখানায় বিপুল সেনা অফিসার হত্যা করা হলে সেনাবাহিনীতে ব্যাপক সংস্কার করা সহজ হবে, এবং নতুন নিয়োগ করা যাবে- এমন বিবেচনায় জয় ভারতীয় প্রস্তাবটি গ্রহন করেন। পিলখানা হত্যার পরে জয় দুবাই যান এবং সেখানে ঢাকা থেকে আগত হত্যাকারীদের নগদ পুরস্কৃত করেন বলে খবর প্রকাশ।

৬. শেখ ফজলে নূর তাপস: হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে এই তাপস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘটনায় তার পিতা নিহত হয়। তাপস ঢাকা-১২র নির্বাচন করতে গিয়ে বিডিআর এলাকায় ৫ হাজার ভোট প্রাপ্তির লক্ষে ৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি তোরাব আলী’র মাধ্যমে বিডিআর নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে। তাপসকে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, বিডিআর সকল সদস্য নৌকায় ভোট দিবে। তার বদলে তাপস আশ্বাস দিয়েছিল বিডিআরের দাবী দাওয়া মেনে নেয়ার ব্যবস্থা করবে। তাপসের বাসায় (স্কাই ষ্টার) বিডিআরের প্রতিনিধিরা এ নিয়ে একাধিক বৈঠক করে। এমনকি দাবীদাওয়া পুরন না হওয়ায় পিলখানা বিদ্রোহের আগের দিন তাপসকে সম্ভাব্য বিদ্রোহের কথা জানানো হয়। তাপস তাতে সম্মতি দেয় এবং তাদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেয়। পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাপসও এই ষড়যন্ত্রকে কার্যকর হিসাবে মনে করে। ২৪ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় ফজলে নুর তাপসের ধানমন্ডিস্থ বাসায় ২৪ জন বিডিআর হত্যাকারী চুড়ান্ত শপথ নেয়। তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন পরিকল্পনাকারীদেরকে গোপন আস্তানা ও যাবতীয় সহায়তা প্রদান করে। বিডিআর বিদ্রোহের পরের দিন বিকালে শেখ তাপসের ঘোষনা প্রচার করা হয়, যাতে করে পিলখানার ৩ মাইল এলাকার অধিবাসীরা দূরে সরে যান। আসলে এর মাধ্যমে খুনীদের নিরাপদে পার করার জন্য সেফ প্যাসেজ তৈরী করা হয়েছিল। তাপসের এহেন কর্মকান্ডের বদলা নিতে তরুন সেনা অফিসাররা পরবর্তীতে তাপসের ওপর হামলা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। পরে ৫ চৌকস কমান্ডো অফিসার চাকরীচ্যুত হয়ে কারাভোগ করছে। বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে সেনা তদন্ত এড়াতে তাপস কিছুদিন গা ঢাকা দেয় বিদেশে।

৭. মীর্জা আজম: যুবলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক এই হুইপটি পিলখানার ঘটনাকালে বিদ্রোহীদের সাথে সেল ফোনে কথা বলতে শুনা যাচ্ছিল। সে হত্যাকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দেয় কর্নেল গুলজারের চোখ তুলে ফেলতে এবং দেহ নষ্ট করে ফেলতে (এর অডিও রেকর্ড আছে), কেননা র‌্যাবের পরিচালক কর্নেল গুলজারের নেতৃত্বে জেএমবির প্রধান শায়খ আবদুর রহমানকে ধরা হয়েছিল ও পরে ফাঁসি দেয়া হয়। শায়খ রহমান ছিল মির্জা আজমের দুলাভাই। আজম এভাবেই দুলাভাই হত্যার বদলা নেয় গুলজারকে হত্যা করে, এমনকি তার লাশও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে নানক-আজমের ব্যবস্থাপনায় শেরাটন হোটেলের সামনে গানপাউডার দিয়ে দোতলা বাসে আগুন লাগিয়ে ১১ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মারার ঘটনা তদন্ত করে এই গুলজারই নানক-আজমকে সম্পৃক্ত করে। এর প্রতিশোধেই গুলজারে শরীর এমন ভাবে নষ্ট করা হয়, যেনো কেউ চিনতে না পারে। ১৫ দিন পরে ডিএনএ টেষ্ট করে চিহ্নিত করা হয় গুলজারের লাশ।

৮. জাহাঙ্গীর কবির নানক: এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী। উনি বিডিআরের ঘাতকদের নেতা ডিএডি তৌহিদের ক্লাশমেট। বিডিআর ট্রাজেডির আগে থেকেই তৌহিদ যোগাযোগ রাখত নানকের সঙ্গে। ঘটনার দিন ২০৪ মিনিট কথা বলে তৌহিদ-নানক। ২৫ তারিখ বিকালে পিলখানার বিদ্রোহীদের নিয়ে শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে মিটিং করিয়ে নিরাপদে ফেরত পাঠায় সে। ডিএডি তৌহিদকে বিডিআরের অস্থায়ী ডিজি ঘোষণা করে নানক। কর্নেল গুলজার হত্যায় মীর্জা আজমের সাথে নানক সরাসরি জড়িত। কেননা, র‌্যাবের পরিচালক গুলজারই তদন্ত করে উদঘাটন করে- শেরাটনের সামনে দোতলা বাস জ্বালিয়ে ১১ যাত্রী হত্যা করা হয় নানকের নির্দেশে। ২৫ তারিখে বেঁচে যাওয়া লে: কর্নেল মঞ্জুর এলাহী পালিয়ে ছিল ম্যানহোলে। তার স্বজনরা এসএমএস মারফত খবর পেয়ে নানকের সাহায্য চায়। উদ্ধার করার বদলে ঐ অফিসারটিকে খুঁজে বের করে হত্যা করায় নানক। এটা সেনানিবাসের সবাই জানে। সেনাবাহিনীর তদন্ত পর্ষদ এড়াতে তদন্তের সময় নানক হঠাৎ বুকের ব্যথার অযুহাতে চিকিৎসার কথা বলে অনেকদিন সরে থাকে সিঙ্গাপুরে। এ নিয়ে সেনা অফিসারদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় ব্রিগেডিয়ার হাসান নাসিরকে চাকরীচ্যুত করে হাসিনা।

৯. সাহারা খাতুনঃ সুপরিকল্পিত বিডিআর ধংসযজ্ঞ সংগঠনের নিমিত্ত ভারতের পরামর্শে হাসিনার কেবিনেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিয়োগ করা হয় অথর্ব সাহার খাতুনকে। বিদ্রোহের দিন কোনো তৎপরতা ছিলো না সাহারার। বরং সেনা অভিযান ও পিলখানায় র‌্যাব ঢোকার অনুমতি চাইলে সাহারা খাতুন ‘না’ করে দেন। বিকালে বিদ্রোহীদের সাথে করে প্রেস ব্রিফিং করে এই মন্ত্রী। অথচ ডিজি শাকিলের কোনো খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করেননি। কারন সে সব জানত। বিদ্রোহীদের সাথে সমঝোতার পরে রাতে তিনি পিলখানায় যেতে চাননি। বরং আইজি নূর মোহাম্মদ তার মেয়েকে পিলখানা থেকে উদ্ধারের জন্য একাই অভিযান চালাতে উদ্যত হলে ঠেলায় পরে সাহারা যান পিলখানায়, তাও প্রধানমন্ত্রীর বুলেটপ্রুফ গাড়িতে চড়ে। তিনি বিডিআর অফিসারদের পরিবার পরিজন উদ্ধার না করে কেবল আইজিপি নুর মোহাম্মদের কন্যাকে উদ্ধার করেন। অথচ বাকী পরিবার ঐ রাতের আঁধারে নির্যাতিত হয়। সাহারা খাতুনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল টীমের এম্বুলেন্স ও রেড ক্রিসেন্টের এম্বুলেন্স পিলখানায় ঢুকে। এরপরে পিলখানার বাতি নিভিয়ে ঘাতকদের ঐ এম্বুলেন্সে করে পিলখানার বাইরে নিরাপদ যায়গায় সরানো হয়। তখনও অনেক অফিসার আহত হয়ে পিলখানা নানাস্থানে লুকিয়ে ছিলো। কিন্তু সাহারা এদের উদ্ধার করেনি। কর্নেল এমদাদ, কর্নেল রেজা্, আফতাব ও কর্নেল এলাহীকে সাহারা পিলখানা ত্যাগ করার পরে হত্যা করা হয়।

১০. শেখ সেলিম: শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ ঘটনায় সে ধরা পরেও রহস্যজনকভাবে বেঁচে যায়, কিন্তু তার ভাই শেখ মনি নিহত হয়। সেনাবাহিনীর ওপরে তারও রাগ ছিলো প্রচন্ড। তা ছাড়া ১/১১র পরে সেনারা ধরে নিয়ে যায়ে এই সেলিমকে, এবং ডিজিএফআই সেলে ব্যাপক নির্যাতন করে শেখ হাসিনার অনেক গোপন কথা, চাঁদাবাজি, বাসে আগুণ দেয়া সংক্রান্ত জবানবন্দী আদায় করে। এতে করে সেনাবাহিনীর ঐ সেটআপের উপর তার রাগ ছিল। বিডিআরের ঘটনার আগে বিদ্রোহী দলটি কয়েকদফা মিটিং করে শেখ সেলিমের সাথে। ১৩ ফেব্রুয়ারীতে শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় এ ধরনের একটি মিটিং হয় বলে সেনা তদন্তে প্রমান পাওয়া গেছে।

১১. সোহেল তাজ: স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। শেখ সেলিমের বাসায় অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে সোহেল যোগ দেয়। বিদেশী হত্যাকারীদেরকে নিরাপদে মধ্যপ্রাচ্য, লন্ডন ও আমেরিকায় পৌছানোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোহেল তাজকে। জনগনকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রচার করা ঘটনার সময় তাজ আমেরিকায় ছিল। এটি সম্পুর্ন মিথ্যা কথা। সে সময়ে তাজ ঢাকায়ই ছিল। ২৮ ফেব্রুয়ারী সন্ধায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে কয়েকজন হত্যাকারীসহ তাকে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং সে রাতেই তাজ ওসমানী বিমানবন্দর থেকে হত্যাকারীদের সাথে নিয়ে বিদেশের পথে যাত্রা করে। সেই হেলিকপ্টারের একজন পাইলট ছিল লেঃ কর্নেল শহীদ। যাকে পরে হত্যা করা হয়, টাঙ্গাইলে রহস্যজনক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের সাথে। এছাড়া বিমানের বিজি ফ্লাইট ০৪৯ দু’ঘন্টা বিলম্ব করে চারজন খুনী বিডিআরকে দুবাইতে পার দেয়া হয়। এ খবরটি মানবজমিন ছাপে ৩ মার্চ ২০০৯.

১২. কর্নেল ফারুক খান: তিনি ছিলেন পিলখানা বিদ্রোহের ঘটনা তদন্তের লক্ষে গঠিত ৩টি কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে। জনগণকে ধোকা দেয়ার জন্য প্রথমেই তিনি ঘোষণা করেন, পিলখানার ঘটনায় ইসলামী জঙ্গীরা জড়িত। এটা খাওয়ানোর জন্য সোবহান নামে এক লোককে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়। পরে কুলাতে না পেরে সেখান থেকে সরে আসেন। সেনাবাহিনীর তদন্তে অনেক সত্য কথা উঠে আসলেও তা আলোর মুখ দেখেনি এই ফারুক খানের জন্য। ধামাচাপা দেয়া হয় মূল রিপোর্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মূল রিপোর্ট বদল করে গোজামিলের রিপোর্ট তৈরী করান ফারুক খান।
১৩. হাজী সেলিম: লালবাগ এলাকার আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি। বিডিআর হত্যাকান্ডের সময় তিনি খুনীদের রাজনৈতিক সাপোর্ট দিয়েছেন। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে হাজী সেলিম বেশ কিছু গোলাবারুদ ক্রয় করে, যা ভারতীয় খুনীরা প্রথমে ব্যবহার করে। ঘটনার দিন দুপুরে হাজী সেলিমের লোকেরা বিডিআর ৪ নং গেটে বিদ্রোহীদের পক্ষে মিছিল করে। ২৫ তারিখ রাতের আঁধারে পিলখানার বাতি নিভিয়ে দেয়াল টপকে সাধারন পোষাক পরে বিদ্রোহীরা লালবাগ এলাকা দিয়ে পালিয়ে যায় হাজী সেলিমের সিমেন্ট ঘাটকে ব্যবহার করে। হাজী সেলিমের সন্ত্রাসীরা স্থানীয় জনগনকে সেখান থেকে সরিয়ে রাখে। একটি বেসকারী টিভি চ্যানেল ২৫ তারিখ রাত ১টার সংবাদে উক্ত ঘটনার খবর প্রচার করে। সেই রিপোর্টে ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য তুলে ধরে, যাতে বলা হয় যে, বেশ কিছু স্পীডবোর্টকে তারা আসা যাওয়া করতে দেখেছে; কিন্তু তারা কাছাকাছি যেতে পারেনি যেহেতু আওয়ামীলীগের কিছু কর্মীরা তাদেরকে সেদিকে যেতে বাধা দেয়।

১৪. তোরাব আলী ও তার ছেলে লেদার লিটন: আওয়ামীলীগের ৪৮ নং ওয়ার্ডের সভাপতি। ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে এ্বই তোরাব আলী বিডিআর বিদ্রোহীদের পরিচয় করিয়ে দেয় এমপি তাপসের সাথে। মূল পরিকল্পনায় তোরাব আলীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় স্থানীয় লজিষ্টিক সম্বয় সাধনের জন্য। তার বাড়িতেও বিদ্রোহীদের মিটিং হয়েছে। সে মূলত অবৈধ অস্ত্রের ডিলার। তার ছেলে সন্ত্রাসী লেদার লিটনের মাধ্যমে বিদ্রোহী বিডিআরদের পালিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে। এ সংক্রান্ত খরচাদি আগেই তাকে দেয়া হয়। উক্ত লিটনকে ২ মাস আগে তাপস ও নানক জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে। ২৫ ফেব্রুয়ারী রাত ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে স্পীড বোটযোগে হত্যাকারীদের বুড়িগঙ্গা নদী পার করিয়ে দেয় লেদার লিটন।

১৫. মহিউদ্দিন খান আলমগীর: পিলখানার ঘটনার সময় এই সাবেক আমলা ও জনতার মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা মখা মেতে উঠেন বিভৎস উল্লাসে। বার বার ফোন করে খোঁজ নেন বিদ্রোহীদের কাছে, এর অডিও রেকর্ড আছে। এমনকি নিহতদের লাশ গোপন করার জন্য এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুকুমদাতা ছিলেন তিনি। যার বদৌলতে তাকে পরে প্রমোশন দেয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীতে।

১৬. হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার গলির নেতা। তিনি ১৯৭৫ সালে অনেক সেনা অফিসার হত্যা করেছেন কর্নেল তাহের বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড থেকে। ১৯৭৫ সাল থেকে অদ্যাবধি দেশে সংঘটিত সকল সামরিক অভ্যুত্থানে তার যোগসাজস রয়েছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞের সময় তিনি তার ঘনিষ্ট বিডিআরদের ফোন করে হত্যায় উৎসাহ যুগিয়েছেন, এবং তাদের পরামর্শ দিয়েছেন কি করে লাশ গোপন করতে হবে।

৯ বছর হয়ে গেছে ৫৭ সেনা অফিসার সহ ৭৭ মানুষ হত্যার। বিডিআর বাহিনী বিলুপ্ত করা হয়েছে। ভারতীয় সহায়তায় বিজিবি গঠন করা হয়েছে, যারা এখন বিএসএফের সাথে ভাগাভাগি করে ডি্উটি করে! কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে বিচারের প্যারেড করানো হয়েছে। জেল হয়েছে সবার। অন্যদিকে রাঘব বোয়লদের বিরুদ্ধে সাক্ষী গায়েব করতে ৫৩ জন বিডিআরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু ৫৭ সেনা হত্যার বিচার এখনো বাকী। যেনো তেনো কোনো বিচার চায়না সেনাবাহিনী। তাই হত্যা মামলাও আগাচ্ছে না। যতদিন লাগে লাগুক, হয় কঠিন বিচার হবে, নয়ত বদলা হবে, এটাই তাদের চাওয়া।
সুত্রঃ bdrmutiny

(২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোয় এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল সেই প্রতিবেদনটি আবারও তুলে দেওয়া হলো।)


সেনাকুঞ্জে ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী


বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির নারকীয় হত্যাকাণ্ড এবং ঘটনার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ মার্চ রোববার সেনাকুঞ্জে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান সেনা কর্মকর্তারা। এ বৈঠকে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং বিডিআরের পলাতক বিদ্রোহী জওয়ানদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালানোর দাবি জানানো হয়।
১ মার্চ সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে সেনাকুঞ্জে যান প্রধানমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। বৈঠক শুরুর একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন সেনা কর্মকর্তারা। শতাধিক সহকর্মীর নির্মম মৃত্যুতে মুষড়ে পড়া সেনা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উচ্চ স্বরে কেঁদে ওঠেন, আবার কেউ বারবার চোখের পানি মোছেন। বিডিআর সদর দপ্তরের ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নানা প্রশ্ন করেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সব কথা শোনেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী পৌঁছানোর আগে সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে কর্মরত প্রায় দুই হাজার পদস্থ কর্মকর্তা বৈঠক স্থলে উপস্থিত হন। অনুষ্ঠানে বিডিআর সদর দপ্তরের ঘটনায় বেঁচে যাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সেনাকুঞ্জের দক্ষিণ পাশে স্থাপিত মঞ্চে চেয়ার ছিল দুটি। মঞ্চে উঠে ওই চেয়ারে বসেন প্রধানমন্ত্রী এবং তত্কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। বৈঠকের শুরুতে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শেখ হাসিনা মাইক্রোফোন নিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা বক্তব্য দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী ওই দিনের ঘটনা এবং পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে সেনা কর্মকর্তাদের বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, ‘ওই সময় বিডিআর প্রধান শাকিল আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তাঁকে ধৈর্য ধরতে বলি। এরপর কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে কথা বলি। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলি। পরিস্থিতি নিয়ে কী করা যায়, সে ব্যাপারে সেনাপ্রধানকে ফোন করি। তাঁর কাছে জানতে চাই, সেখানে সেনা অভিযান চালাতে কত সময় লাগবে। তিনি জানালেন, একটু সময় লাগবে। তাঁর কাছে জানতে চাই, এয়ার ট্রুপস নামাতে পারবেন কি না। পরে জানতে পারি ভেতরে কর্মকর্তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করা হয়েছে। এরপর অভিযান চালালে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটত। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যেত। এসব ভেবে সেনা অভিযান না করে রাজনৈতিক সমাধানের কথা ভাবি। আমার লোকজন জানের মায়া ত্যাগ করে সমঝোতা করেন। এরপর কী হয়েছে তা আপনারা জানেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা সম্ভব নয়। আমি নিজে স্বজন হারিয়েছি। এর জ্বালা যে কী, সেটা আমি ছাড়া কেউ ভালো জানে না। আমার ছোট ভাই ছিল রাসেল। সে বলত, বড় হয়ে আমি আর্মি হব। সেই ভাইসহ আমার পরিবারের ১৮ জনকে নৃশংসভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার ভাইসহ পরিবারের সবাই বনানী কবরস্থানে শুয়ে আছেন। আমি হাজারটা লাশ দেখিনি, কিন্তু হাজারটা কবর দেখেছি।’ এ কথা বলতে বলতে প্রধানমন্ত্রী কেঁদে ফেলেন, আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। আর কথা বলতে পারছিলেন না।

প্রধানমন্ত্রী চশমা খুলে চোখ মুছে বলেন, যারা এ নারকীয় হত্যার সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। আপনারা যেভাবে চান, সেভাবেই হবে। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন। সরকারের পক্ষে যা যা করা দরকার সব করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত সেনা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান, তাঁদের কোনো বক্তব্য আছে কি না। তখন একজন সেনা কর্মকর্তা কিছু কথা বলে বসে যান। এরপর বিডিআর সদর দপ্তর থেকে প্রাণে বেঁচে আসা এক কর্মকর্তা উঠে দাঁড়ান। একজন তাঁর হাতে মাইক্রোফোন এগিয়ে দেন। তিনি বলেন, ওই দিন বিডিআর প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর তাঁদের বলেছিলেন, সেনাবাহিনী তাঁদের উদ্ধার করতে আসছে। তাঁরা অপেক্ষায় ছিলেন, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পাঠানো হলে হয়তো এতো কর্মকর্তার মৃত্যু হতো না। সেখানে নারীরা অত্যাচারের শিকার হয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ প্রসঙ্গ উঠতেই সেনা কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সামনেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ উচ্চ স্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সেনা সদস্যরা এ সময় নানা দাবির কথা বলতে শুরু করেন। এ পর্যায়ে একজন কর্মকর্তা দাঁড়িয়ে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার এ ঘটনা সমাধান করতে অযথা সময় নিয়েছে। এ জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর সমালোচনা করা হয়। প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির ও সাংসদ মির্জা আজমকে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দেওয়ার সমালোচনা করেন একাধিক সেনা কর্মকর্তা।

আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্রোহীদের সঙ্গে আলোচনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভেতরে গিয়ে কয়েকটি পরিবারকে বের করে চলে আসেন। তিনি হাতেগোনা কয়েকটি অস্ত্র জমা দেওয়ার পর কেন বের হয়ে এলেন। তিনি যদি কোয়ার্টার গার্ডে একবারের জন্য যেতেন, তাহলে ভেতরে আটকে থাকা নারীরা উদ্ধার পেতেন। এ কথার পরপরই আবার হইচই শুরু হয়। তাঁরা বলতে থাকেন, সমঝোতার নামে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা ও লাশ গুম করা এবং বিডিআর জওয়ানদের পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী ও হুইপ মির্জা আজমকে বরখাস্ত করার দাবি জানান তাঁরা।

একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি জানেন না আপনার কাছের লোকজন আপনার সঙ্গে ছলনা করেছে। তারা আপনাকে বিভ্রান্ত করছে। আপনি তাদের বিশ্বাস করবেন না। আমরা আপনার সন্তানের মতো। আপনি আমাদের বিশ্বাস করুন। প্রয়োজনে আমরা আপনার জন্য জান দিয়ে দেব।’

সূত্র মতে, অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সেনাবাহিনী নিয়ে রাজনীতি চলবে না। আপনার কী দরকার সেটা আমাদের বলবেন, আমরা তা করে দেব। এ পর্যায়ে আরেকজন বলেন, কার কোন জায়গায় পোস্টিং হবে সেটা যদি অবসরপ্রাপ্তদের কথায় হয়, তাহলে তাকে সেনাবাহিনীতে এসে চাকরি করতে বলুন।’ এ সময় কর্মকর্তারা সমস্বরে বলেন, এসব বক্তব্য মিডিয়ায় দিতে হবে। মানুষ সব জানুক।

একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, টেলিভিশনে টক শোতে সেনাবাহিনীর নামে বিষোদ্গার করা হয়। কথায় কথায় সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলা হয়। কয়েকজন বলেন, সেনাবাহিনীর নামে সংসদেও এভাবে কথা বলা যাবে না। এ পর্যায়ে একজন পদস্থ কর্মকর্তা মাইক নিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের পরিবারের জন্য ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট অথবা প্লট দিতে হবে। সেই সঙ্গে নগদ এক কোটি টাকা দিতে হবে। নিহতের পরিবারের আজীবন পুরো পেনশন নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একজন কর্মকর্তা বিডিআর নাম বদল করে ‘বর্ডার গার্ড’ রেখে এ বাহিনীকে নতুন করে সাজানোর পরামর্শ দেন। বিডিআরের যেসব সদস্য পালিয়ে গেছে, তাদের যোগদানের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর যারা কাজে যোগ দেবে না, তাদের ধরতে ‘অপারেশন রেবেল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করতে হবে।

এসব দাবি-দাওয়া শোনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদের সব কথা শুনলাম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা আপনাদের জানানো হবে। কোনো কিছুই আড়াল করা হবে না। আপনারা সব জানতে পারবেন।’

বৈঠকের শেষপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী নিহত সেনা কর্মকর্তাদের রুহের মাগফিরাত কামনার জন্য মোনাজাত করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী নিজেই মোনাজাত পরিচালনা করেন।
রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের একমাত্র ছেলে রাকেইন আহমেদ বাংলা মেইল কে বলেন ।
‘আমরা তো এদেশে প্রপার জাস্টিফিকেশন আশা করি না, প্রপার ট্রায়াল কীভাবে পাবো?
এ রায় তো আমাদের খুশি করতে পারেনি বরং দুঃখ বাড়িয়ে দিয়েছে। এমন শত রায় দিয়েও কী বাবা-মাকে ফিরিয়ে দেয়া যাবে? তাদের আর কখনো কী ফিরে পাবো?’- কথাগুলো বলছিলেন বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের একমাত্র ছেলে রাকেইন আহমেদ।
বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের একমাত্র ছেলে রাকেইন আহমেদ।
বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত পৌনে ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে কথা হয় লন্ডনে অবস্থানরত রাকেইনের সঙ্গে। কথাগুলো বলতে বলতে কণ্ঠ ভিজে আসে তার।

বিডিআর বিদ্রোহের ওই ভয়াবহ দিনে একসঙ্গে প্রাণ হারান রাকেইনের বাবা মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও মা নাজনীন শাকিল। বাবা-মা হারানো বেদনা টের পাওয়া যাচ্ছিল মোবাইল ফোনে। বোঝা যাচ্ছিল ওপাশে যে কথা বলছেন তার কান্নাভেজা কণ্ঠ।

রাকেইনের মন প্রচণ্ড খারাপ। রায়ের পর তার মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা দগদগে ঘা যেন আবারো জেগে উঠেছে। লুকিয়ে থাকা ক্ষত থেকে যেন আবার রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। একটা বড় শ্বাস নিয়ে তিনি বললেন, ‘মনটা ভীষণ খারাপ আজ। ক্লাসেও মন বসেনি। বাবা-মাকে ভীষণরকম মিস করছি। বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’

খানিক পরেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তিনি। অনেকটা রাগ নিয়েই বলেন, ‘এদের বিচার করে আর কী লাভ? আসল দোষী যারা তাদেরই তো বিচার হচ্ছে না। রাগ লাগে এসব ভাবলে। মনে হয় সব ভেঙেচুরে ফেলি।’

পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে রাকেইন তিনি, ‘আমরা কী তাহলে কোনোদিন সত্যিকারের বিচার পাবো না?’ এ প্রশ্নের উত্তরে কী বলবো বুঝতে পারছিলাম না। বাবা-মাকে একসঙ্গে হারানোর কঠিন শোকে তাকে সান্ত্বনা জানানোর ভাষা নেই। তবুও প্রশ্ন করি, কীভাবে হলে সঠিক বিচার হতো? উত্তরে রাকেইন যেন আবার গর্জে ওঠেনে। ‘কীভাবে আবার? এ বিচারের ভার আল্লাহর হাতে দিয়ে দিয়েছি। তিনিই করবেন। ওখানেই আমার বাবা-মা আছে। শান্তিতে আছে। তিনিই এ নির্মম হত্যার বিচার করবেন।’

একটুও না থেমে ক্ষুব্ধ রাকেইন বলেন, ‘আমাকে এখন ফলো করা হচ্ছে। আমি যেন কিছু না বলতে পারি, সে ব্যবস্থা করছে সবাই। আমি এসব বুঝতে পারি। গত ফেব্রুয়ারিতে একটা ইন্টারভিউ দেয়ার পর অনেক উপর থেকে অর্ডার এসেছে, এ বাচ্চাটাকে সামলাতে হবে। এমন কথা শোনার পর থেকে আমি চুপ হয়ে গেছি।’

‘আমাকে চুপ করিয়ে রেখে কী আর মানুষের বিশ্বাসকে ভুলিয়ে দেয়া যাবে। যারা এমনটি করছেন, তারা ঠিক করছেন না। তারা কী আমার বাবা-মা হারানোর ব্যথা একটুও ফিল করেন?’

রাকেইনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছরের ১৭ জানুয়ারি দেশ ছাড়েন তিনি। ইংরেজি মাধ্যমে ‘এ’ লেভেল সমাপ্ত করে লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্ডশায়ারে ভর্তি হন। এখন তিনি আইন বিষয়ে পড়ছেন। আইন নিয়েই উচ্চতর পড়াশোনা করার ইচ্ছা আছে তার।

লন্ডনেই রাকেইনের একমাত্র বড় বোন নিকিতা আহমেদও থাকেন। পড়াশোনা শেষ করে ইস্ট লন্ডনে একটি বেসরকারি কোম্পানি চাকরি করছেন তিনি। সপ্তাহান্তে রাকেইন নিকিতার কাছে যান। বোনের সঙ্গে গল্প করে কিছু সময় কাটিয়ে আবারো ফিরে আসেন ক্যাম্পাসে।

 বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার পর থেকে রাকেইনের ফেসবুক ওয়ালও ভরে ওঠে প্রতিবাদে। হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ট্যাগ করেন স্মৃতি জড়ানো, আবেগ মাখানো অনেক ভিডিও, ছবি আর লেখা। রাকেইন নিজেও শেয়ার করেন বিডিআর হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও। ভিডিওটির সঙ্গে তিনি লেখেন, ‘We are all waiting for the day for an actual trial which would bring upon true justice free from political influence. No matter how powerful those individuals may be. They must one day face the law.’

যার মর্মার্থ দাঁড়ায়, ‘আমরা একটি দিনের জন্য অপেক্ষা করছি, যেদিন রাজনৈতিক কলুষমুক্ত একটা সঠিক বিচার পাওয়া যাবে। যতো শক্তিশালীই হোক না কেন, সবাইকে একদিন আইনের মুখোমুখি হতে হবে।’

২০ মিনিটের কথায় রাকেইন বলেন অনেক কথা। শোনান নিজের লন্ডন জীবনের কথা, ‘এখানে আনন্দ নেই। আমাকে বড় হতে হবে, তাই চুপচাপ সময় কাটিয়ে যাচ্ছি। অ্যাকচুয়ালি এখন আমি কমপ্লিটলি ভার্সিটির সঙ্গে জড়িয়ে গেছি। ক্লাস, লাইব্রেরি, খাওয়া আর ঘুম ছাড়া অন্য কিছু না। নিজেকে ব্যস্ত রাখি সারাক্ষণ।’

তবে শেষে নিজের স্বপ্নের কথা জানালেন ঠিকই। বললেন, ‘দেশেই ফিরে যাবো একদিন। দেশের রাজনীতি থেকে ডাস্টগুলো দূর করার চেষ্টা করবো। আমার বাবা-মা যে দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন, সে দেশই আমার ঠিকানা…।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!