DMCA.com Protection Status
title="৭

ভারতের রাজধানী দিল্লী রনক্ষেত্র,মসজিদে আগুনঃ এখন পর্যন্ত নিহত ২০

 

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ভারতে রাজধানী  দিল্লীতে সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ এখন রণক্ষেত্রে রূপ নিয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই সংঘর্ষ দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত সাতজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়, আজ সকাল থেকে ফের কয়েক জায়গায় পাথর ছুড়ে একদল বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ শুরু করেছে।

আজও ঘটনার কেন্দ্রস্থল মৌজপুর ও ব্রহ্মপুরী। এ ছাড়া আরও কয়েক জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবরে জানানো হয়।

ভারতের নিউজ–১৮–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকালের ঘটনায় মহম্মদ ফারুখ নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাঁকে শনাক্ত করার পর তাঁর ভাই বলেন, ‘আমি প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি এমন ঘটনা ঘটেছে। কয়েক ঘণ্টা আগেও আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ও বাড়িতেই ছিল। তারপর আমি অফিসে চলে আসি। অফিসে বসেই কিছুক্ষণ বাদে একটার পর একটা ফোন পাচ্ছিলাম। সবাই বলে, ভাইয়ের পায়ে গুলি লেগেছে। তারপর আমি ভাইকে ফোন করি। ও ফোন ধরে না। আমার তখন ভয় করছিল। তারপর আরও কয়েকজন আমাকে ফোন করে বলেন যে ভাইকে সত্যি জিটিবি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি তারপরই বেরিয়ে যাই। হাসপাতালে গিয়ে দেখি ওর অবস্থা খুব খারাপ। আমি ডাক্তারদের বলি, ওকে আমি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাব, যেভাবে হোক বাঁচাব। ডাক্তাররা বলেন, সম্ভব না। ও বাঁচবে না। বিশ্বাস করুন, ও এসবের কিচ্ছু জানে না। বাড়িতে দুটো ছোট্ট বাচ্চা রয়েছে ওর। খাবারদাবার ছিল না বলে বাচ্চাদের জন্য খাবার আনতে গিয়েছিল ও। ওর সন্তানেরা যে খাবারের জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।’

গতকাল সংঘর্ষ চলাকালে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছিল লাল টি-শার্ট পর এক যুবককে। সেই যুবককে গ্রেপ্তারের কথা বলেছে পুলিশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরের মধ্যেই দিল্লিতে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল প্রায় সারা দিনই উত্তর–পূর্ব দিল্লির একাধিক জায়গায় একের পর এক সংঘর্ষ ঘটতে থাকে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রতন লাল নামের এক পুলিশ কনস্টেবলও রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ১৬০ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পুলিশকর্মী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়েছে ৩৫ কোম্পানি আধা সেনা।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, সংঘর্ষ চলাকালে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে আহত হন তিন দমকলকর্মী। সেই ঘটনার রেশ এখনো রয়েছে সেখানে। আজও উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে উত্তেজনা এবং চলছে অবাধে লুটপাট।

ভারতের জিনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দিল্লির জাফরাবাদে সিএএ–বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন থেকে মৌজপুর পর্যন্ত। সিএএ–বিরোধী ও সমর্থনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় জাফরাবাদ, গোকুলপুর, মৌজপুর, বাবরপুর, ভজনপুরাসহ একাধিক এলাকায়। থানা থেকে মাত্র কয়েক মিটার দূরেই গোকুলপুর টায়ার মার্কেট। গোটা মার্কেট জ্বালিয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। আজ সকালেরও সেই মার্কেট থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গিয়েছে। মার্কেটের সামনে একাধিক যানবাহন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনোটা উল্টে দেওয়া হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে গাড়ির কাচ। বাবরপুর ও মৌজপুরে নতুন করে সংঘর্ষ হয়েছে।

দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অসহায় বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। কারণ, দিল্লি পুলিশকে সে রকম কোনো নির্দেশই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তাঁর। তিনি বলেছেন, পুলিশ বুঝতেই পারছিল না তারা লাঠিপেটা করবে, নাকি কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়বে। যাদের ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদেরও পরিবার রয়েছে। তারা বলেছে, বাইরে থেকে লোক এসে গোলমাল পাকিয়েছে।

কালকের ঘটনার পরেই উত্তর–পূর্ব দিল্লির বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। দিল্লি সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করে হয়, উপদ্রুত এলাকাগুলোয় বন্ধ থাকবে সরকারি স্কুল। রাতের দিকে একের পর আহত মানুষ আসতে থাকে সরকারি হাসপাতালে।

দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে রাতেই বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির সিপি, স্বরাষ্ট্রসচিব, গোয়েন্দাপ্রধান ও অন্য বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত না জানালেও কেন্দ্র যে গোটা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন, সে কথা স্পষ্ট। গতকাল রাতের দিকে দিল্লির ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সোনিয়া গান্ধীও। একটি চিঠি লিখে তিনি দিল্লির সাধারণ মানুষদের শান্তি বজায় রাখার আরজি জানিয়েছেন।

আজ সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দিল্লির উপরাজ্যপাল, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর কেজরিওয়াল বলেন, কেন্দ্র জানিয়েছে, যেখানে প্রয়োজন সেখানেই পুলিশ পাঠানো হবে। এ ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন অমিত শাহ। সবাই চাইছেন এই হিংসা বন্ধ হোক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন।

গতকালই ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর সফরকালেই রাজধানীতে এই সহিংসতার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ দিল্লিতে সময় কাটাবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, তাই রাজধানীর এই পরিস্থিতিতে চিন্তার ভাঁজ সবার কপালে।

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!