ক্যাপ্টেন(অবঃ) মারুফ রাজুঃ ভারতের রাজধানী দিল্লীতে গত কয়েকদিনের ভয়াবহ সহিংসতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির উচ্চ আদালত। সেইসঙ্গে দেশের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে আহ্বান করেছেন বিচারপতিরা।
কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বিচারকেরা বলেন, ‘দেশে আরেকটা ১৯৮৪ যেন না হয়। সন্ত্রাস চলাকালীন কি করছিল পুলিশ। কেন প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফোর্স নামিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গেল না জানতে চেয়েছে আদালত।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, সহিংসতার ঘটনার তদন্তের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন প্রাক্তন আমলা হর্ষ মান্দার।
এর শুনানির সময় বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের ভাষণের রেকর্ড শোনেন হাইকোর্টের বিচারপতিরা। কপিল মিশ্রের উস্কানিতে মুসলিমদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা শুরু হয়।
হর্ষ মান্দার আদালতে আবেদন করেন, সহিংসতার ঘটনা নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক। আক্রান্ত এলাকায় সেনা নামানো হোক। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।
বিচারপতি এস মুরলীধর ও বিচারপতি তালওয়ান্ত সিংকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আবেদন শোনেন। সেখানে দিল্লি পুলিশের হয়ে হাইকোর্টে ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাকে বিচারপতিরা বলেন, ‘আপনি দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে পরামর্শ দিন, উস্কানিমূলক ভাষণ দেওয়ার জন্য তিন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হোক।’
তুষার মেহতা আবেদন করেন, ‘এ বিষয়ে শুনানি কি ১৬ ঘণ্টার জন্য মুলতবি রাখা যেতে পারে?’ বিচারপতি মুরলীধর বলেন, ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কি অবিলম্বে এফ আই আর করা উচিত নয়? শহরের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা মোটেই সন্তোষজনক নয়।’
এরপরে বিচারপতি কপিল মিশ্রের উস্কানিমূলক ভাষণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ওই বিজেপি নেতার ভাষণের ভিডিও শত শত মানুষ দেখেছেন। আপনি কি এর পরেও মনে করেন, ব্যাপারটা জরুরি নয়?’
এক পুলিশকর্মী হাইকোর্টে বলেন, ‘তিনি সহিংসতার কয়েকটি ভিডিও দেখেছেন। কিন্তু কপিল মিশ্রের ভাষণের ভিডিও দেখেননি’। বিচারপতিরা বলেন, ‘ব্যাপারটা খুবই উদ্বেগজনক। আপনাদের অফিসে অনেকগুলি টিভি আছে। এক পুলিশ অফিসার কেমন করে বলতে পারেন, তিনি ওই ভিডিও দেখেননি? দিল্লি পুলিশের অবস্থা সত্যিই শোচনীয়।’
বিচারপতি এস মুরলিধর বলেন নাগরিকদের প্রয়োজনে জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব কেন্দ্রীয় সরকারে পক্ষ থেকে আক্রান্তদের পরিবারের প্রতি সব ধরনের সহায়তা পৌঁছানো দরকার বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। ২৪ ঘন্টার হেল্প লাইন, সব সময়ের জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখতে হবে পুলিশকে।
এদিকে টানা চারদিন ধরে চলা সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হয়েছে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বিক্ষোভ বন্ধে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রার আল্টিমেটামের কয়েক ঘণ্টা পর রবিবার রাজধানী দিল্লিতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা শুরু করে আইনটির সমর্থকরা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ‘হিন্দুয়োঁ কা হিন্দুস্তান’, ‘জয় শ্রীরাম’- এসব স্লোগান দিয়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।