ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক প্রতিবেদন আদালতে পৌঁছেছে। আজ বৃহস্পতিবার আদালত এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শুরু করেছেন।
পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী গতকাল বুধবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর বেগম খালেদা জিয়ার সবশেষ চিকিৎসা পরিস্থিতির প্রতিবেদন জমা দেয় বিএসএমএমইউ,পিজি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মো. সাইফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিএসএমএমইউর আইনজীবী তানিয়া আকতার বিএনপি চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে হস্তান্তর করেছেন। তাঁর জামিনের বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার শুনানি হবে।
এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারী জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কেএম জহিরুল হকের যুগ্ম বেঞ্চ গতকাল বুধবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিএসএমএমইউ ভিসিকে কোনোরকম ব্যর্থতা ছাড়াই এ প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। গতকাল বুধবার বিকাল ৫টার মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর ওই প্রতিবেদন দাখিল এবং পাশাপাশি মামলার শুনানির জন্য আজ বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছিল। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুসারে বেগম খালেদা জিয়া অ্যাডভান্স থেরাপির জন্য সম্মতি দিয়েছেন কিনা, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কিনা এবং বর্তমান তাঁর কী অবস্থা তা জানিয়ে প্রতিবেদন বুধবারের মধ্যে দিতে বলা হয়। সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার পে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ সময় ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা বাদল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম।
ওই দিন শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা একমাত্র স্বাস্থ্যগত কারণে আবার আদালতে এসেছি। বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা আগের থেকে অনেক খারাপ। তিনি ৫ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। নিজের হাতে খেতেও পারেন না। খাবার খেলেও তিনি প্রায়ই বমি করেন।
বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর পরিবারের সদস্যরা গণমাধ্যমকে বলেন, তাঁর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। এভাবে থাকলে তাঁর কখন কী হয়ে যায় তা বলা যায় না। তাই আমরা তাঁর জামিন প্রার্থনা করছি। বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ভিসির প্রতি নির্দেশনা চেয়ে করা আবেদন তুলে ধরেন জয়নুল আবেদীন।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে তাঁর স্বাস্থ্যগত সর্বশেষ অবস্থা কী, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন চাইতে পারেন। শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এর আগে এ আদালতে একই আবেদন করা হয়েছে এবং আপিল বিভাগে খারিজ হয়েছে। আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আবেদন এবং এ আবেদন পুনরাবৃত্তি মাত্র। আপিল বিভাগ তো বলেছেন উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তাঁর সম্মতিতে সেটি করা হবে। এ ছাড়া তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশে রয়েছে। এর পর হাইকোর্ট বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দল ও পরিবারের সদস্যরা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলে তাতে অনুমতি মেলেনি।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন চেয়ে এর আগেও হাইকোর্টে আবেদন করেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এমন তিন বিবেচনায় হাইকোর্ট বেঞ্চ ৩১ জুলাই সেই আবেদন খারিজ করে দেন। এর পর বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাননি। ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ কিছু পর্যবেণ দিয়ে জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেন।
আপিল বিভাগের ওই রায়ে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সম্মতি থাকলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁকে দ্রুত ‘অ্যাডভান্সড ট্রিটমেন্ট’ দেয়ার পদপে নিতে। সেই রায় ১৯ জানুয়ারি প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টে নতুন করে জামিন আবেদন করার উদ্যোগ নেন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৪টি মামলায় বেগম খালেদা জিয়া জামিনে আছেন।