ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে এই মুহূর্তের সরকারী হিসাবে ৯৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে। এটি মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। এই অঞ্চলগুলোর দেশের বিবেচনায় এই পরিমান খেলাপি ঋন অস্বাভাবিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
এ ছাড়া খেলাপি ঋণ নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা নিয়েও কঠোর সমালোচনা করেন গভর্নর।
গতকাল সোনালী ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে এসব মন্তব্য করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ‘দেশি ও বিদেশি কিছু গবেষণা সংস্থা দেশের মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করছে অবলোপন এবং পুনঃতফসিলের ঋণ। কিন্তু পুনঃতফসিল একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকৃতপক্ষে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক কম। ১১ লাখ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। নিট খেলাপি ঋণ দেড় শতাংশের মতো। ভারতে এটি এক সময় বেশি ছিল। বিশ্ব অর্থনীতির কথা চিন্তা করে সচেতনভাবে ঋণ বিতরণ এবং খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের প্রক্রিয়া জোরদার করার আহ্বান জানান গভর্নর। এজন্য উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট খাত বা ব্যক্তির কাছে যেন ঋণ কেন্দ্রীভূত না হয় সে বিষয় সতর্ক থাকতে হবে।’
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। বিশেষ ছাড়ে ৫২ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে নবায়ন করা হয়েছে। এর বাইরে অবলোপন করা হয়েছে ৫৬ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রকৃতপক্ষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি। এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সংকট। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই খেলাপি ঋণ বেশি। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার সাড়ে ১৪ থেকে ৫৩ শতাংশ পর্যন্ত।
গভর্নর আরও বলেন, ‘অনেক সংস্থা হলমার্কের ঘটনার পর সোনালী ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সংকোচ ও ভীতি রয়েছে। এটি একেবারে থাকা উচিত নয়। আপনারা (কর্মকর্তারা) যদি সব ধরনের নিয়ম পরিপালন করে ঋণ প্রদান করে থাকেন তাহলে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিতরণকৃত ঋণ কখনো সন্দেহজনক, কখনো মন্দ মানের হবেই। কিন্তু তাই বলে ঋণ দেওয়া বন্ধ করবেন নাকি? তবে নতুন বিতরণ করার ঋণ যেন ভবিষ্যতে বোঝা না হয় এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন গভর্নর।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘মুজিববর্ষে আর্থিকভাবে যেন আমরা পিছিয়ে না যাই সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এখন বিশ্বব্যাপী একটি ভিন্ন রূপে চিত্র দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর মধ্য দিয়েও ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা উন্নত দেশের কাতারে যেতে চাই। তাই সচেতনতার সঙ্গে আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে আছি। আগামী এপ্রিল থেকে প্রত্যেক ব্যাংক ৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করবে। এখন আমরা যদি অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে বেশি সেবা দিতে না পারি তাহলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। সেবাগত এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।’