ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ দেশে চলমান করোনা ভাইরাস জনিত জরুরী অবস্থার মধ্যেই চট্টগ্রামের হালিশহরে একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রক মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক গোলাম ছামদানী জনি প্রকাশ 'ইয়াবা-জনি' এবং রামপুর ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা মাসুদ রায়হান প্রকাশ 'জুয়াড়ি-মাসুদ' এর নেতৃত্বে বিভিন্ন বয়েসী ছিন্নমূল বস্তিবাসী এবং মাদকাসক্ত কিশোর-যুবকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে রামপুর ও হালিশহর হাউজিং এস্টেট আবাসিক এলাকায় বসবাসকারী নিরীহ জনগণ ।
ছাত্রলীগের রেজাউল আলম রনি প্রকাশ 'কালা-রনি', যুবলীগের ক্যাসিনো-ডিগল, মইন্যা পাড়ার ডাইল-আজিজ সহ একাধিক গ্যাং বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও ছিনতাই কাণ্ডে লিপ্ত, ইপিজেড ও বন্দর নিকটবর্তী এই এলাকাটিতে । এক্সেস রোডের বিভিন্ন স্পট, বড়পোল রাজমুকুট মোড়, পোর্ট কানেক্টিং রোডের বেশ কয়েকটি নির্জন জায়গা, বউবাজার, নয়াবাজার, সবুজবাগ, চুনাফ্যাক্টরী, ফইল্যাতলী, এব্লক বাসস্ট্যান্ড, বিডিআর মাঠ, গাউছিয়া পানির ট্যাংকী, গোডাউন উত্তর গেট সহ রামপুর ও হালিশহর এলাকার বিভিন্ন নির্জন স্থানে ছোট ছোট দল বেঁধে হেলমেট ও মাস্ক পরিহিত ছিনতাইকারীদের বিভিন্ন গ্ৰুপ, ঘরে ফেরা শ্রমজীবী মানুষদের বেধড়ক মারধর করে সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে হরহামেশাই।
অথচ স্থানীয় প্রশাসনের ভাষ্যমতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসব স্পটে জীবাণু নাশক ঔষুধ ছিটানো এবং জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করছে | চট্টগ্রামের নবীন আওয়ামী উপমন্ত্রী এবং সাবেক মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরীর পূত্র নওফেল চৌধুরীর মদদপুষ্ট ইয়াবা জনি গ্যাং অন্যান্য সময়ের চাইতে চলমান করোনা ভাইরাস আতংকের সময়টাতে আরো বেশী সক্রিয় ।
জীবাণু নাশক ছেঁটানোর নাম করে বিগত দুই সপ্তাহে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ হতে অর্ধকোটি টাকারও বেশি চাঁদা উত্তোলন করেছে জনি গ্যাংয়ের ক্যাশিয়ার কলিংক্স বৈদ্য। দুই সন্তান সহ মাস তিনেক আগে বেড়াতে এসে করোনা পরিস্থিতিতে হালিশহরে আটকে পড়া এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নারীর কাছ থেকে দুই দফায় ছয় লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেছে এই জনি গ্যাং।
ভিক্টিমের তালিকায় আছে মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের বেশ কয়েকটি পরিবার । পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত মহিলা ওসির আপন ছোটভাই ইয়াবা জনির সাথে হালিশহর থানা পুলিশের বোঝাপড়া বেশ শক্ত; তাই জনি গ্যাংয়ের বেপরোয়া চাঁদাবাজি হতে রক্ষা পায় না জনপরিবহন, অস্থায়ী বাজারের মাছ ও সবজি বিক্রেতা হতে শুরু করে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও দোকান মালিক, এমনকি স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারী স্কুল ও কোচিং সেন্টারের পরিচালকেরা ।
তবুও নিরাপত্তা আশংকায় মুখ খুলতে রাজি না কেউই । নেত্রকোনার কেন্দুয়া আটপাড়ার এক কুখ্যাত রাজাকারের সন্তান এই গোলাম ছামদানী জনি । তার স্ত্রী (বর্তমানে দুই সন্তানের জননী) ইসলামী ছাত্রীসংস্থার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেত্রী| চারদলীয় জোট শাসনামলে ইয়াবা জনির মা, হালিশহর (উত্তর) জামাতে ইসলামীর মহিলা শাখার বায়তুল মাল সম্পাদকের দায়িত্বে ছিল ।
দৃশ্যমান কোন বৈধ উপার্জন না থাকলেও দামী গাড়ি হাঁকানো সহ আলিশান জীবন যাপন করে জনি ও তার পরিবার । ইয়াবা ব্যাবসা এবং চাঁদাবাজি টাকার সিংহভাগই হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যায় কানাডায় বসবাসরত হাড্ডি-জনির বড় বোনের কাছে| জনির ছাত্রলীগ প্রভাবে জমির ভুয়া কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে একটি বেসরকারী ব্যাংক থেকে অর্ধশত কোটি টাকা ঋণ হাতিয়ে নিয়েছে জনির বড় ভাই গোলাম জিলানী মানিক।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করা, বিভিন্ন এমপি মন্ত্রী এবং দলের বড় বড় নেতাদের সাথে তোলা ছবি গুলোই ইয়াবা জনির মূল রক্ষা কবচ । সাধারণ জনগণতো দূরের কথা, ইয়াবা জনির বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে নিজ দলের লোকজনও আতংকে মুখ খুলতে নারাজ| একাধিক ছিনতাইকারী গ্ৰুপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বেপরোয়া দখলবাজি ও চাঁদাবাজিতে পিছিয়ে নেই সবুজবাগ কাঁচা বাজারের এক সময়ের সবজি বিক্রেতা জুয়াড়ি-মাসুদ । স্থানীয় এমপির ছোটভাই এরশাদুল আমিনের মদদপুষ্ট রামপুর ওয়ার্ডের এই যুবলীগ নেতার তদারকীতে রয়েছে বেশ কয়েকটি জুয়ার আসর এবং সুদে টাকা লেনদের ক্লাব | টিনের ছাপড়া ঘরে শৈশব কৈশোর কাটানো, সবুজবাগের তিন টেক্কা বলে ঘৃণিত জুয়াড়ি প্রয়াত জনাব-আলী মেম্বারের ছেলে এই মাসুদের বিগত দশ বছরে অকল্পনীয় অর্থ-সম্পদ অর্জনের মূলে রয়েছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, জমি দখল এবং সুদের কারবার ।
চসিক মেয়র আজম নাসিরের নিকটজন বলে পরিচিত কালা-রনি, হুইপ সামসুল হকের নিয়ন্ত্রনাধীন আবাহনী ক্লাবের ক্যাসিনো ক্যাশিয়ার মহানগর যুবলীগ নেতা ডিগল, উপমন্ত্রী নওফেলের আস্থাভাজন জেলপরিদর্শক ডাইল-আজিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা একাধিক কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া ছিনতাই চাঁদাবাজি এবং মাদকব্যবসার কারনে হালিশহর ও রামপুর এলাকার লোকজন চরম আতংকের ভেতর দিন কাটাচ্ছে |