ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সারা বিশ্বে যখন করোনা মহামারিতে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে বাংলাদেশের অবৈধ হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে তখন ঘোষণা করা হচ্ছে নতুন করে মাত্র ১ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু কোনো মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়নি।
অথচ সরেজমিনে দেখা গেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যাও ক্রমশঃ বেড়েই চলেছে।
দেশের এই মহামারিতে হাসিনা সরকারের এমন মিথ্যাচার জনমনে প্রচন্ড ক্ষোভ তৈরী করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জুড়ে এখন সরকারের উপর নিন্দার ঝড় উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে মিথ্যাচার করা হচ্ছে এমনটা প্রতিক্রিয়া সবার মধ্যেই। সাধারণ মানুষের মনে যেন এক অজানা আতঙ্ক।
বিশেষ করে গত কয়েকদিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশের কুটনীতিক ও তাদের পরিবারবর্গের প্লেন ভর্তি করে বাংলাদেশ ত্যাগে জনমনে সরকারের দেয়া করোনা তথ্য নিয়ে ব্যাপক অবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে।
এই প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবদুল হাকিম লিখেছেন, বাংলাদেশের করোনা সম্পর্কে মোটেও সঠিক তথ্য বের হয়ে আসছে না, কারণ সরকারের লোকেরা যে তথ্যগুলি দিচ্ছে সবগুলোই অসত্য, মিথ্যাচারে ভরপুর৷ আর রাশেদ খান বলছেন বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সরকার ও মিডিয়া মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে৷
এদিকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে মো.রমিজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘দেশের সরকারি ও বেসরকারি বড় বড় হাসপাতালের সামনে গিয়ে ২৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকেন৷ তখন বুঝতে পারবেন কী অবস্থা৷ কত শ্বাসকষ্টের রোগীরা ফেরত আসছে৷ কারণ আইসিইউতে ভর্তি করার ক্ষমতা সবার থাকেনা, মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে৷”
আহমেদুজ্জামান নামে একজন প্রশ্ন তুলেছেন সঠিক করোনা নির্ণয়ের ব্যবস্থা নিয়ে। তিনি লিখেছেন, যেখানে পরীক্ষার জন্য কিটের স্বল্পতা, সঠিক করোনা নির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই, চিকিৎসার ক্ষেত্রে চরম হয়রানির শিকার হতে হয়, সেখানে কি করে সঠিক আক্রান্তের চিত্র উঠে আসবে?
আর যদি ১৮ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ১১০০/১২০০ মানুষের পরীক্ষা করা হয়, তাহলে রেজাল্ট কি আসতে পারে? জনগণের বিবেকের এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন মোর্তুজা চৌধুরী নামে একজন। তিনি লিখেছেন, আর এত কম সংখ্যক করোনা সংক্রমণ রোগীর পরীক্ষা পৃথিবীর অন্য কোন করোনা আক্রান্ত দেশে হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের আসল দৃশ্য বা পরিস্থিতি জানা থেকে আমরা অনেক দূরে বলে মন্তব্য করেছেন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ ফারুক।
দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা উপসর্গে মারা যাওয়ার পর সেখানে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। এমনকি হাসপাতাল গুলোতে রোগীদের সেবা দিতে অক্ষমতা জানাচ্ছে। এছাড়া আতঙ্কগ্রস্ত হয়েও অনকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দেশবাসির এই অজানা আতঙ্ক আরো বেড়ে চলছে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য গোপনের কারণে। সচেতন মহল সরকারের প্রতি আহবান জানিয়ে বলছেন, প্রকৃত তথ্য জানান বা ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক’ ঘোষণা করুন।
আইইডিসিআর-এর তথ্য অনুসারে ৮ মার্চ দেশের প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে এই ২২ দিনে দেশে মোট আক্রান্ত ৪৯ জন, এর মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন, ১৯ জন সুস্থ হয়েছেন৷ গত তিনদিনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন একজন৷ কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন রকম। দেখা গেছে শুধুমাত্র গতকাল রবিবার সারাদেশে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কোনো কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, সামনের দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে৷
প্রতিবেশী ভারত একবারে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে তবুও সেখানে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে৷ তবে কি ভারতের শিক্ষা নেওয়া উচিত আমাদের কাছ থেকে? কেউ কেউ বলছেন, অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে দৃষ্টি সরাতে নরেন্দ্র মোদী ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনা সংক্রমণে অন্যান্য দেশের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে যাচ্ছে বাংলাদেশও। আর দুইটি কারণে মূলত বাংলাদেশের সামনে বড় ধরণের বিপদ অপেক্ষা করছে। একটি হলো করোনা মোকাবেলায় সরকারের প্রস্তুতি গ্র্রহণ না করা, আর দ্বিতীয় হলো-করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ না করা। তারা বলছেন সরকারি ব্যর্থতা ভুলে জনগণকে সত্যটা জানানো দরকার না হলে করোনা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। পৃথিবীর শক্তিশালি রাষ্ট্রগুলো করোনা নির্মুল করতে ব্যর্থ হয়েছে। সেক্ষেত্রে করোনা নির্মুল করতে না পারা বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা নয়। তবে শুরু থেকেই সরকারের গাফিলতি রয়েছে। তথ্য গোপন করে নিজেদের সফলতা প্রমাণ করা বোকামি হবে বলে মনে করছেন তারা।