DMCA.com Protection Status
title=""

সমালোচকদের মুখ বন্ধ না করে করোনার প্রকৃত তথ্য দিনঃ হাসিনা সরকারের প্রতি এইচআরডব্লিউ।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ভয়াবহ করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে সরকার বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটির পক্ষ থেকে গতকাল এক বিবৃতি এ কথা বলা হয়।

বিবৃতিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে গবেষণাকারীদের হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানায় এইচআরডব্লিউ। সঙ্গে করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ও সঠিক তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানানো হয়।

সংগঠনটি তাদের বিবৃতিতে জানায়, করোনাভাইরাস সম্পর্কে মন্তব্য করায় মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে চিকিৎসক, বিরোধীদলীয় আন্দোলনকর্মী ও ছাত্রসহ অন্তত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ সেটি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সব ধরনের তথ্যলাভের অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তথ্যের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়ানো প্রতিরোধ করা সরকারের দায়িত্ব। এই ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া কার্যক্রমের সমালোচনা যারা করছেন, তাদের মুখ বন্ধ করেও ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করা যাবে না। তিনি বলেন, জনগণের বাক স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ, সুরক্ষা ও প্রতিকারে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিয়ে মানুষের আস্থা তৈরি করা উচিত।

বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় গত ২৫ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলে ‘গুজব’ ও ‘উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার’ পর্যবেক্ষণের জন্য ১৫ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই নির্দেশ পরদিনই বাতিল করে দেওয়া হয়। সরকারি কর্মকর্তারা শুধু টিভি চ্যানেল নয়, তারা অন্যান্য গণমাধ্যম এমনকি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমও নজরদারিতে রেখেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা হয়রানি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লেখা করার কারণে দুজন কলেজশিক্ষককে বরখাস্তের অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজ উদ্ভাবিত ‘এপিডেমোলজিকাল মডেলিং’ এর ওপর ভিত্তি করে একটা গবেষণা বিদেশি একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় ওই গবেষকের বিরুদ্ধ তদন্ত করা হচ্ছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এ ছাড়া যে গণমাধ্যমে এটি প্রকাশিত হয়েছে সেই নেত্র নিউজ অনলাইন পোর্টালটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশ করায় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সরকারের সংস্থা বাংলাদেশে ব্লক করে রেখেছে বলেও জানানো হয়। গবেষকেরা যুক্তরাজ্যের লন্ডনের ইমপিরিয়াল কলেজ উদ্ভাবিত ‘এপিডেমোলজিকাল মডেলিং’ এর ওপর ভিত্তি করে দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে ৮ কোটি ৯০ লাখ লোক আক্রান্ত হতে পারেন, যার মধ্যে মৃত্যু হতে পারে ৫ লাখ ৭ হাজারের বেশি মানুষের।

এর পরপরই করোনাভাইরাস নিয়ে বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তুতির বিষয়ে জাতিসংঘের একটি নথি ফাঁস হয়, যেখানে বলা হয় যে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লেখালেখির কারণে গত ২৪ মার্চ পুলিশ শহীদুল ইসলাম ও আবদুল আহাদকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে ‘গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে মামলা করা হয়। ২২ মার্চ ডিবি পুলিশ সোহেল শেখ ও আনাম শেখকে পিরোজপুর থেকে আটক করে ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে অপপ্রচার করা অভিযোগে। আর ১৯ মার্চ র‍্যাব খুলনা থেকে মিরাজ আল সাদিকে ফেসবুকে করোনাভাইরাস নিয়ে উসকানিমূলক লেখার কারণে আটক করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, আটকের ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিএনপির সমর্থক এক চিকিৎসককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়।

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ফেসবুক ও টেলিভিশনের ওপর নজরদারি করে মানুষকে গ্রেপ্তার না করে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উচিত এই শক্তিটা ভাইরাস দমনে কাজে লাগানো। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের কাজে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং ভাইরাসের বিস্তার ও প্রভাব সম্পর্কে প্রত্যেকে যেন সঠিক তথ্য পায়, তা নিশ্চিত করা উচিত সরকারের।

 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!