DMCA.com Protection Status
title="৭

করোনা ভাইরাসে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বেশি কেন???

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীতে এপর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ লক্ষাধিক মানুষ।  মৃতের সংখ্যা এক লাখের প্রায় কাছাকাছি। এই মহামারীর ঢেউ আঘাত হেনেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে ভারতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত, ৫ হাজার ৭৪৯। আর সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে ভুটানে। ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম হলেও বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ (৯ এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদ)। আর মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানে এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের নিয়মিত আপডেট প্রকাশ করছে জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়ার্ল্ড মিটারসহ বিভিন্ন সংস্থা। আক্রান্ত দেশগুলোর সরকারি তথ্য নিয়েই তারা নিয়মিত করোনার আপডেট প্রকাশ করছে। ওয়ার্ল্ড মিটারের তথ্য অনুসারে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতে আক্রান্ত ৫ হাজার ৯১৭, মৃত্যর হার ৩ দশমিক ০০৭ শতাংশ। পাকিস্তানে আক্রান্ত ৪ হাজার ২৬৩, মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ; আফগানিস্তানে ৪৪৪ আক্রান্ত, মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ জন। সে হিসাবে মৃত্যুর হার ৯ দশমিক ৭ শতাংশ । আর বাংলাদেশের চেয়েও কম আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটানে। শ্রীলংকায় ১৮৯ আক্রান্তের মধ্যে ৭ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ এদেশে মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

মৃত্যুর হারে এই পার্থক্য কেন? তাহলে কি ভাইরাসটি একেক দেশে একেক রকম আচরণ করছে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে বাকি বিশ্বের দিকেও নজর দিতে হবে। ইউরোপ ও আমেরিকাতেও মৃত্যুর হারে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর ব্যাখ্যায় বলা হচ্ছে, পার্থক্যটা তৈরি করে দিচ্ছে গণনা পদ্ধতি। মোট আক্রান্তের সংখ্যার সঙ্গে মোট মৃত্যুর সংখ্যার শতকরা হিসাব করে মৃত্যুর হার গণনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি মর্টালিটি রেট (মৃত্যুহার) নয় বরং ডেথ রেট। ফলে এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে রোগ শনাক্তের ক্ষেত্রে কোন দেশ কতো তৎপর এবং তাদের সক্ষমতা কেমন।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রোল মডেল বলা যেতে পারে দক্ষিণ কোরিয়াকে। তারা খুব ত্বরিৎ গতিতে আক্রান্ত ও তার সঙ্গে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করেছে এবং ব্যাপকভাবে নমুনা পরীক্ষা করেছে। আর এটি করতে পারার কারণেই অন্যান্য দেশের মতো তাদের লকডাউন করতে হয়নি। ইউরোপের মধ্যে জার্মানিতেও মৃত্যুর হার অনেক কম হওয়ার পেছনে এটিই প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রেও এ ব্যাখ্যা খাটে। এখানেও মৃত্যুর হার নির্ণয় করা হচ্ছে সরকারিভাবে আক্রান্ত শনাক্ত রোগীর পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা করলে পরীক্ষা করার দিক থেকে বাংলাদেশ এখনো বেশ পিছিয়ে আছে। অবশ্য ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা করার সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ৯৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১২ জনের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা একলাফে বেড়ে হয়েছে ৩৩০ জন। এ নিয়ে এ দিন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৬১টি। এছাড়া গতকাল ৮ এপ্রিল গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৮১টি। এর আগে ৭ এপ্রিল ২৪ ঘণ্টায় মোট পরীক্ষা ৬৭৯টি, ৬ এপ্রিল ৪৬৮, ৫ এপ্রিল ৩৬৭, ৪ এপ্রিল ৪৩৪ এবং ৩ এপ্রিল ২০৩টি নমুনা পরীক্ষার কথা জানানো হয়। আর ১ এপ্রিল পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪১টি নমুনা। বলাবাহুল্য নমুনা পরীক্ষা করার সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত শনাক্তও বাড়তে শুরু করেছে।

অপরদিকে গত ৭ এপ্রিল ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা নমুনা পরীক্ষা করেছে ১২ হাজার ৫৮৪টি। এর মধ্যে ২৮৫টি করোনাভাইরাস পজেটিভ এসেছে। আর ওই দিন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৫টি। নমুনা পরীক্ষা সক্ষমতা তারা অব্যাহতভাবে বাড়াচ্ছে।
ভারতের আর পাকিস্তান গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তারা নমুনা পরীক্ষা করেছে ২ হাজার ৭৩৭টি। কখনো কখনো এর চেয়ে বেশিও করেছে তারা। ২০ কোটির বেশি জনসংখ্যার এদেশে এখন পর্যন্ত করেনাাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৯৬টি।

নমুনা পরীক্ষার দিক থেকে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের চেয়েও পিছিয়ে। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে একজন চীনা নারী করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত তারা নমুনা পরীক্ষা করেছে মাত্র ৩ হাজার ৫০০টি। ২৫ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ তারা দৈনিক গড়ে পরীক্ষা করেছে ১৫০টি। তবে ৩১ মার্চের পর থেকে পরীক্ষার সংখ্যা ৩০০ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। যদিও দৈনিক দেড় হাজার পিসিআর টেস্ট করার সক্ষমতা আছে বলে জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকার।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে প্রায় একই সময়ের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। কিন্তু প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে সবার তৎপরতা ও সক্ষমতা সমান না থাকার কারণে এখনো অনেক দেশ ব্যাপকভিত্তিক নমুনা পরীক্ষা শুরু করতে পারেনি।

এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ও পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর যে হার আমরা দেখছি তা হলো ৫ থেকে ৬ শতাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে এখন রোগী কম থাকায় মৃত্যুর হারটা বেশি দেখা যাচ্ছে। কয়েকদিন পরে দেখা যাবে মৃত্যুর হারটা কমে যাবে কিন্তু আক্রান্তের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!