ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকান্ডের অন্যতম মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
এরপরই মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানার ফাইল রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দুপুরে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেই ফাইল কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এখন কারা বিধি ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে।
ইতিমধ্যেই ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তার স্বজনরা। গতকাল শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বজনদের পাঁচ সদস্যের একটি দল কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের সঙ্গে দেখা করেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন।
মাজেদের স্বজনদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী সালেহা, স্ত্রীর বোন ও বোন জামাই, ভাতিজা ও এক চাচা শ্বশুরসহ মোট পাঁচ জন।
তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব বিস্তারিত বলতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর খুনি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। ওইদিন বিকালেই তার মৃত্যু পরোয়ানার ফাইল কারাগারে পৌঁছানো হয়। সন্ধ্যায় মাজেদ কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। রাতেই সেই ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সকালেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদনটি পাঠানো হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি তার প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিলে ফাইলটি পুনরায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, ‘ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে সেই ফাইল পৌঁছানোর কথা।
মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে কারা কর্তৃপক্ষের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে জানতে চাইলে কর্নেল আবরার হোসেন বলেন, ‘মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিধি অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। এখন সরকার যেভাবে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই কারা কর্তৃপক্ষ কাজ করবে। পুরো বিষয়টি এখন সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।’
শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ প্রায় ২৫ বছর ধরে ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে জানায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তারা জানায়, করোনাভাইরাস আতঙ্কে সেখান থেকে গত ২৬ মার্চ ময়মনসিংহ সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। দেশে ফেরার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এরপর তাকে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।