ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ করোনাভাইরাসের মহামারী রোখার চেষ্টায় অফিস-আদালত বন্ধ রেখে ঘরে থাকার মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বের হওয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার।
সরকারের এই নির্দেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে গতকাল শুক্রবার আদেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
সেখানে বলা হয়েছে, আগের ছুটির ধারাবাহিকতায় ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হল। সাধারণ ছুটির সময় আগামী ১৭-১৮ এপ্রিল এবং ২৪-২৫ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি সংযুক্ত থাকবে। এই ছুটি ‘অন্যান্য সাধারণ ছুটির মত বিবেচিত হবে না’ জানানোর পাশাপাশি ছুটির সময় যেসব নির্দেশ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে তাও বলে দেওয়া হয়েছে আদেশে।
# করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে।
# অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
# সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এ নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
# এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হল।
# বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের জন্য নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।
আদেশে বলা হয়েছে জরুরি প্রয়োজনে অফিস খোলা রাখা যাবে জানিয়ে ছুটির আদেশে বলা হয়, প্রয়োজনে ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখতে পারবে। মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল, বাস সার্ভিস পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে। জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটির সময় বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
পোশাক কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত: এদিকে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় সরকারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মিল রেখে দেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোও ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিক সমিতি ও শিল্প পুলিশকে জানিয়ে অফিস খোলা রাখা যাবে।
গতকাল শুক্রবার তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বিকেএমইএর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান ও বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক তাতে স্বাক্ষর করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারের ছুটির সঙ্গে মিল রেখে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে এ সময়ের মধ্যে বেতন দেওয়ার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস খোলা রাখার প্রয়োজন হলে স্ব স্ব অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ/বিকেএমইএ) এবং শিল্প পুলিশকে অবহিত করতে হবে। রপ্তানি ক্রয়াদেশ ক্রয়াদেশ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরিসহ জরুরি প্রয়োজনে প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুর এলাকায় ২৬টি কারখানা চালু ছিল।
অপরদিকে সারা দেশে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটিও চতুর্থ দফা বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সাধারণ ছুটি’ অনুযায়ী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব ধরনের কোচিং সেন্টারও ওই সময় পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে। এর আগে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। পরে তা দুই দফায় বাড়িয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছিল।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টানা বন্ধ থাকায় পাঠদানের ধারাবাহিকতা রাখতে ২৯ মার্চ থেকে সংসদ টিভিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির ক্লাস দেখানো শুরু করেছে সরকার। আর প্রাথমিকের ক্লাস গত ৭ এপ্রিল থেকে দেখানো শুরু হয়েছে। এই ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে এসব বাড়ির কাজ দেখাতে হবে। মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজের উপর প্রাপ্ত নম্বর তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।