ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অবৈধ শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা ঘটল। এত বড় একটা ঘটনা, বাংলাদেশের কোনো লোক জানতে পারল না কেন ? কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না? দুদিন লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরের সিড়িতে! সেই কথা আমি এখনো ভাবি! এত বড় সংগঠন, এত নেতা, কোথায় ছিল তখন? মাঝে মাঝে আমার জানতে ইচ্ছা করে, কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারলেন না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে! সেই নয়টা মাস একাকী তিনি (জাতির পিতা) পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। একটি বৈরী পরিবেশ, বৈরী আবহাওয়া। সেখানে যেমন গরম, তেমন শীত। তাকে কীভাবে রেখেছিল? কী খেতে দিয়েছিল? যাকে তারা ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল, তাকে তারা কত কষ্ট দিতে পারে, সেটা কল্পনাও করা যায় না। আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন। তিনি বলেন, তাঁর ভিতর যে আত্মবিশ্বাস ছিল, সেই আত্মবিশ্বাসই তাঁকে দৃঢ় করে রেখেছিল। যে কারণে এত কষ্টের পরেও বেঁচে ছিলেন। এরপর তিনি ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে এসে ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এই সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে গিয়েছিলেন। তিনি প্রতিটি কাজের ভিত্তি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। একটা সংবিধান পর্যন্ত তিনি দিয়ে গেছেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, যখন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। শুধু তাঁকে একা না, আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে হত্যা করল ঘাতকরা। এমনকি আমার মেজো ফুফু, ছোট ফুফু সব বাড়িতেই তারা হানা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, হয়তো এই ব্যর্থতার খেসারতই দিতে হয়েছে জাতিকে। কারণ জাতির পিতাকে হত্যার পর ১৮/১৯ টা ক্যু হয়েছে। অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে আমাদের দলের নেতা-কর্মীদের ওপর। সেই সময় যদি কেউ সাহস করে দাঁড়াত, হয়তো এ অত্যাচার হতো না। এত বারবার ক্যু হতো না। বারবার ক্যু করে একটা দেশকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুধু তাই না, যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তা ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছিল।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যারা এদেশের স্বাধীনতা ও দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তা আমরা করতে দেব না। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এখনো মুষ্টিমেয় কিছু দালাল থাকতে পারে, কিন্তু দেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। পাকিপ্রেমীরা জেলেই থাকুক, আর বিদেশেই থাকুক- তাদের ষড়যন্ত্র থাকবেই। কিন্তু পাকিপ্রেমীদের ষড়যন্ত্র এদেশের মাটিতে কখনো সফল হতে পারে না, হতে দেব না।
এ সময় দলের নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সততার সঙ্গে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কী পেলাম বা কী পেলাম না, সেটি বড় কথা নয়। দেশের মানুষকে কী দিতে পারলাম সেটাই বড় কথা। অর্থ নিয়ে কেউ কবরে যেতে পারবে না। কিন্তু অনেকের অর্থপ্রাপ্তি একটি বড় নেশা। অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে নিজের পরিবারকে ধ্বংস করে, ছেলেরা বিপথে যায়, মাদকে কিংবা জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এই দুরারোগ্য ব্যাধি (অর্থলিপ্সা) থেকে মুক্ত হয়ে জনগণের জন্য কাজ করলে এ দেশ আরও উন্নতি ও এগিয়ে যাবে। সেভাবেই নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছি। তাই বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিকসহ সব দিক থেকে এগিয়ে থাকবে। আজ সত্যিই সেটা হয়েছে। অনেকের চেয়েই বাংলাদেশ আজ এগিয়ে রয়েছে। তবে এই অগ্রযাত্রা আমাদের ধরে রাখতে হবে। পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আমরা কারও ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেব না। বিজয়ের মাসে আমাদের অঙ্গীকার, আমরা বিজয়ের বেশেই সারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলব, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলব।
শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যের হার আমরা ২০ ভাগে কমিয়ে আনতে পেরেছি, আরও কমাব। দেশের প্রবৃদ্ধি এখন ৮ দশমিক ১৫ ভাগ। আমরা ৯০ ভাগ প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। আমরা যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। মহান বিজয় দিবসে দলের নেতা-কর্মী, দেশী-প্রবাসী সকল সমর্থকসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করি, পাকিস্তানি হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে। ১৬ ডিসেম্বর দেশ বিজয় অর্জন করলেও আমরা মুক্তি পাই পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। বন্দীদশায় থাকার ওই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর আমাদেরও ধানমন্ডির একটি বাড়িতে বন্দী করে রাখা হয়। শেখ কামাল আগেই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল, আর শেখ জামাল গেরিলা কায়দায় ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ হানাদারমুক্ত হলেও পরদিন ১৭ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের মুক্ত করা হয়। মুক্তি পেয়েই আমার মা (ফজিলাতুন নেছা মুজিব) ওই বাসায় টানানো পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি ও মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় কবিতা আবৃত্তি করেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জাহান কবিতা।