ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গত দুইদিন ধরেই বিভিন্ন স্থানে শোনা যাচ্ছে শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডে মৃত্যদন্ড প্রাপ্ত আসামী রিসালদার মুসলেহ উদ্দীনের নাম। অনেকেই দাবি করছেন তাকে গ্রেফতার করেছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের বেঙ্গল পুলিশ ধারণা প্রকাশ করেছে, ভারতে থাকা এই খুনি ইতিমধ্যেই মারা গেছে। যদিও এর পক্ষে কোন প্রমাণ দিতে পারেনি তারা। আর সে কারণেই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে, তবে সত্যিই কী মারা গেছে রিসালদার মুসলেহ উদ্দীন, নাকি বেঁচে আছেন? তাকে কী আটক করেছে ভারতের কোন গোয়েন্দা সংস্থা?
রিসালদার মুসলেহ উদ্দীন স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মার্ড কোরের একজন হাবিলদার ছিলেন। সেনা বাহিনীর আর্মাড কোরের হাবিলদারদের রিসালদার বলা হয়। শোনা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন ঢাকা সেনা নিবাসের কাছ থেকে ট্যাঙ্ক চালিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর বাস ভবনে আসে এবং নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
পৃথিবীর জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ড শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তবে দেশের বাইরে থাকায় শেখ মুজিবের দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান।
১৯৮১ সালের মে মাসে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব হাতে নেন। দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন সংগ্রামের পর জনগণের মেনডেট নিয়ে ১৯৯৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ ঐক্যমতের সরকার গঠন করে। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিচারে অন্যান্য খুনিদের সঙ্গে রিসালদার মুসলেহ উদ্দীনেরও মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। এর আগেই অবশ্য এই খুনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
সীমান্তের ওপরের সূত্রে জানা যায়, রিসালদার মুসলেহ উদ্দীন দীর্ঘকাল যাবৎ ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগণার গাইঘাটা থানা এলাকার একটি বাসায় তারক দত্ত নাম ব্যবহার করে ভাড়া থাকতেন। সেখানে সে পরিচিত ছিলো দত্ত বাবু নামে। এই তারক দত্ত নামে তার পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড এবং আধার কার্ড (রেশন কার্ড) ছিলো।
বেঙ্গল পুলিশ জানায়, সর্বশেষ জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে গাইঘাটা এলাকায় দেখা গেছে তাকে। সে ওখানে এক ডাক্তার খানায় কম্পাউন্ডার হিসেবে কাজ করত। হাতুড়ে ডাক্তারের কাজও করত বাসায় বসে।
জানুয়ারি মাসের পর থেকে তার আর কোন হদীস পাওয়া যায়নি। আর সে কারণের বেঙ্গল পুলিশ ধারণা প্রকাশ করে, হয়ত মারা গেছে রিসালদার মুসলেহ উদ্দীন। অবশ্য তাদের এই ধারণার পক্ষে কোন যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেনি বেঙ্গল পুলিশ। মুসলেহ উদ্দিনের মারা যাবার বিষয়ে স্থানীয়ভাবেও কেউ কিছু জানে না। আর সে কারণেই তার মৃত্যু নিয়ে পুলিশের এই বক্তব্যের পক্ষেও কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আর সে কারণেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। রিসালদার মুসলেহ উদ্দীন মারা গেছে, বেঁচে আছে, না ধরা পড়েছে?
অবশ্য অভ্যন্তরিন সূত্রগুলো জানাচ্ছে, এটা এখন সময়ের ব্যপার। যে কোন মুহুর্তে এই রহস্য উন্মোচন হবে। সে ধরা পড়েছে, নাকি আটক, নাকি মারা গেছে তা যে কোন সময় উন্মোচন হবে।