ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ প্রাণঘাতি করোনা সারাদেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পাড়া মহল্লা লকডাউন করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বিচ্ছিন্ন। দেশে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। দিন যত যাচ্ছে করোনা মহামারি এক দুর্যোগে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন ও সল্প আয়ের মানুষের ঘরে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষগুলো এখন একেবারে দিশেহারা পড়েছে।
আর সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। কেউ পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না। সারাদেশে খাবারের জন্য মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়ে গেছে।
লক্ষণীয় বিষয় হলো-এই মহামারী আর দুর্যোগের মধ্যেও থেমে নেই আওয়ামী লীগ নেতাদের চুরি আর লুটপাট। করোনা মহামারীর মধ্যে মানুষ যখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে তখন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ব্যবস্থ হয়ে পড়েছে গরিবের ত্রাণের চাল চুরিতে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এই সময়ে গরিবের ত্রাণের চাল যারা চুরি করবে তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এই হুমকিকে তার দলের চাল চোরেরা কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
দেখা গেছে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রির চাল নিজের গুদামে রাখায় আওয়ামী লীগ নেতা গাজিউল হক গাজীকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গাজিউল হক গাজী সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে হতদরিদ্র্যের ১০ টাকা কেজির ৬৩০ বস্ত চালসহ আটক হয়েছেন উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির ভাই ও তার এক সহযোগী। এক অভিযানে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল আলম সুমন এলাকার পাঁচটি গোডাউন সিলগালা করেন।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৮ বস্তা চাল পাচারকালে রফিকুল ইসলাম লিটন মুন্সি নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া লিটন উপজেলার চাল রায়েন্দা গ্রামের মজিদ মুন্সির ছেলে। লিটনের কাছে বেশি দামে এসব সরকারি চাল বিক্রি করেছেন ডিলার তারিকুল ইসলাম তারেক। তিনি শরণখোলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসানুজ্জামান পারভেজের ছোট ভাই।
নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় এক আওয়ামী লীগের নেতার গুদাম থেকে দুস্থ মানুষের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিডির ১৩৮ বস্ত চাল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা চালের পরিমাণ চার মেট্রিক টন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই আওয়ামী লীগ নেতার নাম আয়েত আলী। তিনি উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য। এলাকায় তার ধান-চালের আড়তের ব্যবসা আছে।
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ২৬ বস্তা সরকারি চালসহ এক আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার মুজিবর রহমান সানা (৫৩) বড়দল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বড়দল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বর্নি ইউনিয়নের ফকিরের বাজারের একটি জ্বালানি কাঠের দোকান থেকে সরকারি গুদামের ৩২ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় ওই দোকানের মালিক প্রদীপ দাসকে (৪৫) আটক করেছে থানা পুলিশ। প্রদীপ বর্নি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুবোধ চন্দ্র দাসের ভাই। তার বাড়ি ওই ইউনিয়নের মিহারী গ্রামে।
ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনিরের নিজ বাড়ি থেকে ত্রাণের আড়াই ট্রন চাল জব্দ করা হয়েছে।
সর্বশেষ শুক্রবার জামালপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাবিবুর রহমান দুলালের গুদাম থেকে গরিবের ত্রাণের ৭৪ বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়েছে।
এরপর বগুড়ার সোনাতলায় এক কৃষক লীগ নেতার বাড়ি থেকে ৫০ বস্তা ত্রাণের চাল উদ্ধার করা হয়েছে।
এভাবে প্রতিদিনিই আ.লীগ নেতাদের চাল চুরির সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন করোনার চেয়েও বেশি আলোচনা হচ্ছে আ.লীগ নেতাদের চাল চুরির ঘটনা নিয়ে।
রাজনীতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, করোনার চেয়েও এখন বড় আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগের চাল চোর নেতারা। গরিবের জন্য সরকার যা বরাদ্দ দিচ্ছে সবই যাচ্ছে তাদের দলীয় নেতাদের বাড়িতেই। সরকার যদি এখনই এসব বন্ধ না করে তাহলে সামনে বড় ধরণের দুর্ভিক্ষ অপেক্ষা করছে। সচেতন মহল দাবি তুলেছেন, আওয়ামী লীগ নেতা নয় ত্রাণ বিতরনের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হোক। তাহলে সুষ্ঠ বন্টনের পাশাপাশি চুরি বন্ধ হবে।