ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণে বাংলাদেশে উদ্ভাবিত স্বল্পমুল্যের করোনা সনাক্তকরন কিটের নমুনা দুটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। গতকাল শনিবার তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) প্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তবে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যাননি অবৈধ হাসিনা সরকারের কোনো প্রতিনিধি। তাদের কাছে আজ রবিবার জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট নামের ওই র্যাপিড টেস্টিং কিট পৌঁছে দেবে গণস্বাস্থ্য।
রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে গতকাল বেলা ১১টায় ওই অনুষ্ঠানে কিট হস্তান্তর করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএসএমএমইউ ও সিডিসির প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কেউ আসেননি। তারা রবিবার দুপুর ১২টায় সময় দিয়েছেন। তাদের কাছে তখন কিট পৌঁছে দেওয়া হবে।
দুঃখ প্রকাশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক (ডিজি) আমাকে জানিয়েছেন, আজকে তারা আসতে পারবেন না। জানি না, আজকে তারা কেন আসতে পারলেন না। মন্ত্রীকেও (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) আমরা তিন দিন আগে এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। উত্তর পাইনি। মন্ত্রী এখন অত্যন্ত ব্যস্ত মানুষ। হতেই পারে। কারণে-অকারণে অনেক ব্যস্ত আছেন, লেনদেনের ব্যাপারও হয়তো আছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আর্মি প্যাথলজি ল্যাবরেটোরিকেও আমন্ত্রণ করেছিলাম। তারা অনুমতি পাননি বলে আসতে পারবেন না।
কিট হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সরকারের মূল প্রতিনিধি ঔষধ প্রশাসনের কারও উপস্থিত না থাকাকে যুক্তিসঙ্গত নয় বলে মনে করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি জানান, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অনুষ্ঠানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ কিট উদ্ভাবক দলের প্রধান গবেষক গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল, গবেষণা দলের সমন্বয়কারী ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকারসহঅন্য গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ডা. জাফরুল্লাহ জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীর রক্ত পাওয়ার পর গত কয়েক দিনে কিট অনেকবার পরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষায় তারা সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি সরকার এ কিট যাচাইবাছাই করে দ্রুত অনুমোদন দেবে। অনুমোদনপ্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন শুরু করব। পর্যায়ক্রমে এক লাখ কিট দেওয়া সম্ভব হবে।
প্রস্তত করা কিট পরীক্ষায় সফল দাবি করে গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. বিজন কুমার শীল বলেন, অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন এ দুটির সমন্বয় করে কিট তৈরি করা হয়েছে। এটি ৫ মিনিটের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে করোনা রোগী শনাক্ত করতে সক্ষম হবে।
গণস্বাস্থ্য আরএনএ বায়োটিক লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে ড. ফিরোজ আহমেদ, ড. নিহাদ আদনান, ড. রাইদ জমিরুদ্দিন, ডা. মুহিব উল্লাহ খোন্দকার এই কিট উদ্ভাবন করেন।
২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণের সময় ড. বিজন সিঙ্গাপুরে গবেষণাগারে কয়েকজন সহকারীকে নিয়ে দ্রুত সার্স নির্ণয়ের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ড. বিজনের নামে পেটেন্ট করা ওই পদ্ধতি ব্যবহার করে চীন সফলভাবে সার্স মোকাবিলা করে। দুই বছর আগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগ দেন ড. বিজন।