DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

ভিক্ষুক তালিকায় ধনাঢ্য আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী,কন্যাসহ ১৩ স্বজনঃওএমএস ডিলারশীপ বাতিল।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক,জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক, হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি ও জেলা রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের সদস্য সচিব আওয়ামী লীগ নেতা এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আলহাজ্ব শাহ আলমের বিরুদ্ধে তার স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের ১৩ সদস্যের নাম ওএমএস চাল ক্রয়ের হতদরিদ্রদের তালিকায় রাখার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিন্দার ঝড় উঠে।

এ ঘটনার খবর প্রকাশের সাথে সাথে জেলা ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তদন্তের নির্দেশ দেন। একদিনের মধ্যে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা খাদ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ঝটিকা তদন্ত কাজ চালিয়ে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলমের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের সত্যতা পান। গত ১১ মে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরীর সুপারিশে জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান ডিলার ও আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আলমকে কেনো ডিলার থেকে বাদ দেয়া হবে  না মর্মে ব্যাখ্যা তলব করেন।

অবশেষে বহুল আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক মো. শাহ আলমের ওএমএস ডিলারশীপ বাতিল করা হয়েছে।

বুধবার বিকেলে জেলা ওএমএস কমিটির সভায় ডিলারশীপ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ৮৪ ধনী ব্যক্তি ও দ্বৈত নাম, এক ঘরের দুইজনের নাম, ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া এমন আরো সাতজনসহ মোট ৯১ জনের তালিকাও বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়।  ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌঁলা খান ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ওএমএস কমিটির বৈঠকে ডিলার শাহআলমের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তার ডিলারশীপ বাতিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠার পর থেকেই আমরা ব্যবস্থা নিতে শুরু করি। 

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে মো. শাহ আলম তালিকায় তার স্ত্রী সহ পরিবারের ১৩ সদস্যের নাম থাকার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তার অন্যান্য স্বজনরা গরীব বলে তিনি উল্লেখ করেন।  তবে স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা এসব নাম তালিকায় উঠিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।

জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ১০ নং ওয়ার্ডের কাউতলীর শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ওএমএস ডিলার হিসেবে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রি করছিলেন বহুপদের অধিকারী ধনাঢ্য আওয়ামীলীগ নেতা শাহআলম। ১০ নং ওয়ার্ডের ওএমএসের সম্প্রতি ঘোষিত ভোক্তা তালিকায় ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকসাচালক, ভ্যান চালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নাম বিশেষ ওএমএস তালিকায় উঠানোর অভিযোগ উঠে। 

এরপরই তদন্তে নেমে প্রশাসন তার স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ জনের নাম পায় তালিকায়। তারা হচ্ছে শাহআলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ডিলারের কাতার প্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাতিজা নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম, আরেক ভাই মো. আলমগীর, শ্যালক মো. তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া।

ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর, সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী একজন, শিক্ষক প্রতিনিধি, রেডক্রিসেন্ট, এনজিও, ইমাম, পুরোহিত ও গণমাধ্যম প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এই তালিকা প্রণয়ন করবে বলে নির্দেশনা থাকলেও আওয়ামীলীগ নেতা শাহআলম নিজের কর্তৃত্বে তালিকা করে তার পরিবারের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ।  

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!