ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হাসিনা সরকার করোনাক্রান্ত সকল রোগীর চিকিৎসা ব্যয় মওকুফ করার ঘোষনা দিলেও ঢাকার আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে বিলের জন্য এক সদ্য করোনা মুক্ত রোগীকে আটকে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য,আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য।
জানা যায়,করোনা থেকে সেরে ওঠার পর মঙ্গলবার বিকালে চিকিৎসকের ছাড়পত্র মিললেও বিলের (১ লাখ ৭০হাজার ৬৪৮ টাকা) জন্য হাসপাতাল তাকে ছাড়ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সাইফুর রহমান নামে ওই ব্যক্তি।
এব্যাপারে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচিব হাবিবুর রহমান বলেছেন, কোভিড-১৯ রোগীদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই, কেননা এই বিল সরকার মেটাবে।
তবে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে আর নেই।
অথচ সরকারী ঘোষনা মতে রাজধানীতে যে ১৩টি সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ চিকিৎসা দিচ্ছে, তার মধ্যে ধানমণ্ডির আনোয়ার খান মডার্ন একটি।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকার কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়। এজন্য গত মাস থেকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল ‘কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড’ হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। এখানে ২০০ কোভিড-১৯ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার সুবিধা রয়েছে।
২৩ মে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন সাইফুর রহমান। বেসরকারি এই চাকরিজীবী থাকেন মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায়।
সাইফুর রাতে বলেন, একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষায় গত ২১ মে তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। হৃদস্পন্দন বেশি থাকায় ২৩ মে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
“কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা ফ্রি করে দিয়েছে সরকার, এটা জেনে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম, এখন অনেক বেশি টাকা দাবি করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ,“ বলেন তিনি।
সাইফুর জানান, ভর্তি হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তার রক্তের দুটি পরীক্ষা করেছে, তিনটি এক্সরে করেছে। আর হাসপাতাল থেকে শুধু নাপা ট্যাবলেট সরবরাহ করেছে।
“আমার কোনো অক্সিজেনেরও প্রয়োজন হয় নাই। কোনো অপারেশন লাগে নাই। কিন্তু এত টাকা বিল করে দিয়েছে। আমি এত টাকা এখন কোথা থেকে দেব।”
ওই রোগীর বিলে দেখা গেছে, ২ জুন পর্যন্ত চিকিৎসকের বিল ১৮ হাজার ৭০০ টাকা, হাসপাতাল বিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৭০ টাকা, পরীক্ষার বিল ১৯ হাজার ৪৭৫ টাকা, ওষুধের বিল ৫ হাজার টাকা। ১২ হাজার ৯০৩ টাকা সার্ভিস চার্জও এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ,সর্বমোট ১ লাখ ৭০হাজার ৬৪৮ টাকা।
সাইফুর বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে চিকিৎসক থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় তাকে। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় তাকে হাসপাতাল থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
“আমার তিনটার সময় যাওয়ার কথা। এখনও (রাত সাড়ে ১০টা) যেতে পারিনি। ওদের অ্যাডমিনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে হাসপাতাল ছাড়তে হলে টাকা অবশ্যই দিতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. এহতেশামুল হকের মোবাইলে মঙ্গলবার রাতে ফোন করে শুরুতে তাকে পাওয়া যায়নি।
এক পর্যায়ে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের একজন কর্মী ফোন ধরে বলেন, “স্যারের ফোনে কল ডাইভার্ট করা আছে। আপনি ঘণ্টাখানেক পরে ফোন করুন।”
এরপর বিষয়টি জানানো হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, কোভিড-১৯ নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর বিল সরকার দেবে।
“এখানে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো কমপ্লিটলি ফ্রি। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালেও চিকিৎসা ফ্রি। যখনই হাসপাতালটা সরকার নিল, তখন তো আনোয়ার খানকে টাকাটা সরকার দেবে। রোগীর ট্রিটমেন্ট হবে ফ্রি।”
পুরো বিষয়টি জেনে তিনি বলেন, “আপনি আমাকে ওই বিলের একটা কপি পাঠান। আমি কথা বলছি।”
পরে ফোন করা হলে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক এহতেশামুল হক বলেন, মে মাসে সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে ওই রোগীকে কীভাবে ছাড় দেওয়া যায়, সে ব্যবস্থা তারা করছেন।
“আমি হাসপাতালে বলে দিচ্ছি। আমাদের পক্ষ থেকে ওই রোগীর জন্য সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর বলেন, “আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি থেকে বের হয়ে যেতে চাইছে।
“তারা চাইলে মিনিস্ট্রিও হয়ত ছেড়ে দেবে। কিন্তু ৩১ মে পর্যন্ত কোনো বিল নেওয়া চলবে না। বিল ধরলে ১ জুন থেকে বিল নিবে। এই কয়দিন তারা সরকারি হিসাবে চলেছে।”
পরে অধ্যাপক এহতেশামুল হক বলেন, “সরকারের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, করোনা আক্রান্ত রোগীর ৩১ মে পর্যন্ত চিকিৎসার কোনো টাকা নেব না। যদি কারও নেওয়া হয়ে থাকে, তা ফেরত দেওয়া হবে।”