DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

করোনার ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব হাসিনা সরকারকেই বহন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশে করোনা মহামারীর ‘ভয়াবহ’ পরিস্থিতির দায়-দায়িত্ব হাসিনা সরকারকেই বহন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আজকে যারা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব জোর করে নিয়েছেন তারা জনগণকে কোনো মূল্য দেন না। তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্য হচ্ছে ব্যবসার। তাদের কাছে অনেক বেশি মূল্য হচ্ছে তাদের সো-কলড প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর। কোনোটাই বাড়বে না। সব কিছু নিচে নেমে যাচ্ছে এবং ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে।

বুধবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় ইন্টারেনেটের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিএনপি মহাসচিব এসব মন্তব্য করেন।

দলটির ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়। ২০১২ সালে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে এই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়।

সরকারি ছুটি তুলে নেয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, সরকার যে টেকনিক্যাল কমিটি করে দিয়েছে তারা বলছে যে, এই মুহূর্তে সরকারি ছুটি তুলে নেয়াটা একটা বিপজ্জনক অবস্থা হবে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর যিনি ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. আবদুল্লাহ সাহেব তিনিও বলেছেন, এটা খুব ভুল সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এটা একটা সুইসাইডাল সিদ্ধান্ত।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা কার কাছে কী বলব? কোথায় যাবেন আপনারা? এদেশের মানুষ কার কাছে যাবে?এদেশের প্রতিটি মানুষ আজকে আতঙ্কে আছে।

তিনি বলেন, আমি জানি না এখান থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসবে সরকার বা এদেশের মানুষ কীভাবে বেরিয়ে আসবে। সমগ্র বিশ্ব যখন এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। কারণ এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ ও ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি এবং হওয়াও ডিফিকাল্ট। সরকার আন্তরিকতার মধ্য দিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে, পরামর্শ করে যদি পদক্ষেপ নিত তাহলে হয়ত আমরা এই অবস্থার সম্মুখিন নাও হতে পারতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের।

বাংলাদেশ রসাতলে যাচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ১৯৭৪ সালে ঠিক একইভাবে সেদিন অবহেলা করা হয়েছিল, সমস্যগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যার ফলে কী হয়েছিল, খাদ্য থাকা সত্ত্বেও চরম দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। তৎকালীন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম সমিতির প্রথম অধিবেশনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে সামনে বসিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ তীব্র গতিতে রসাতলে যাচ্ছে’। আজকেও বাংলাদেশ রসাতলের দিকে যাচ্ছে। এখান থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব সবার। সরকার কোনো উদ্যাগ নেবে না, উদ্যোগ নেয়ার মতো তাদের সেই মানসিকতাও নেই। জনগণকে এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, আজকে ঐক্য দরকার, জনগণের ঐক্য দরকার। দেশের সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ঐক্য দরকার যারা জনগণের কল্যাণের বিশ্বাস করে। এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় আলাপ-আলোচনা করে এ বিষয়ে অতিদ্রুত উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে বলে আমি মনে করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে গেছে, ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এটা এখন নামে মাত্র টিকে আছে। প্রথম দিকেই সবকিছু এলোমেলো করে ফেলা হয়েছে। ডাক্তারদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্যে তাদের যে সমস্ত কিটস, ইকুইপমেন্ট দরকার তা সরবারহ করা হয়নি। শুধু সরবরাহই করা হয়নি, এগুলো নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়ে্ছে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নিয়ে জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, আজকে সমগ্র পৃথিবী ও মানবসভ্যতা হুমকির সম্মুখিন। করোনা মহামারীর হাত থেকে এককভাবে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠি বা সরকার বাঁচতে পারবে না। সমগ্র বিশ্বকে সম্মিলিতভাবে বাঁচতে পারবে। যেহেতু সবাইকে বাঁচতে হবে, সবাইকেই সম্পৃক্ত করতে হবে। সব সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া এইকালে আর বাঁচা যাবে না এই করোনার বিরুদ্ধে। আমি বলব, করোনার এই ভয়াবহ দুর্দিনে আরও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে বিদ্যমান শাসন কাঠামো পরিবর্তন করে সকলকে নাগরিক ঐক্য পালন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এই সরকার আমাদের সরকার নয়, ওরা আমাদের কাজ করবেও না। এরা পুরো ব্যবসায়ীদের সরকার। এখন এই শাসকদের কাছে নিরাপদ নই। এখন যারা ক্ষমতা চালাচ্ছে তাদের কাছে আমরা নিরাপদ নই। পুলিশ যারা এদেরকে ক্ষমতায় থাকার জন্যে দুই বছর আগে জান দিয়ে দিয়েছে, মানুষের ভোট কেড়ে নিয়েছে, পারলে অন্যের জান কেড়ে নেয়। ওই পুলিশের জান সরকার রক্ষা করতে পারেনি। যে ডাক্তার চিকিৎসা করছেন এতো বিপদের মধ্যেও ওদেরকে পিপিই দিতে পারে না। সরকার ডাক্তারদের জন্য না, পুলিশদের জন্য না, যাদের টাকা আছে তাদের জন্য।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বলছেন ১৫ দিন দেখব, তারপর কঠোর হবো। আপনারা কি হলে দেখবেন। প্রতিদিনই তো সংক্রমণ বাড়ছে, আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এটাকেই বলে হার্ড ইমিউনিটি। চরে খাও, বাঁচলে বাঁচো, মরলে মরো- এই হচ্ছে সরকারের পলিসি।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের সরকারি অনুমোদন না দেয়া এবং সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অবস্থা তুলে ধরে তার কিছু হলে সরকারকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন মান্না।

দলটির সমন্বয়কারী শহীদুল্লাহ কায়সারের পরিচালনায় ইন্টারেনেটের মাধ্যমে গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকীও বক্তব্য দেন।

এছাড়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন- গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আকবর খান ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!