ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণের বোঝা ৭৯ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। দেশের ৯৮ ভাগ মানুষ এ ঋণ নেননি। কিন্তু যেভাবেই হোক শেষ পর্যন্ত তাদেরকে এ ঋণ ফেরত দিতে হবে বলে জানিয়েছে অর্থনীতি সমিতি।
সোমবার (৮ জুন) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিকল্প বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরার সময় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত এ কথা বলেন।
‘করোনার মহাবিপর্যয় থেকে মুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’ শিরোনামে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সমিতির সহ-সভাপতি জেড এম সালেহের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ।
সমিতির সভপতি আবুল বারকাত বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরার সময় বলেন, বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫৩ শতাংশের সমান। দেশের জনসংখ্যা যদি ১৭ কোটি হয়, তাহলে মাথাপিছু ঋণের বোঝা ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু দেশের ৯৮ ভাগ মানুষ এ ঋণ নেননি। কিন্তু যেভাবেই হোক শেষ পর্যন্ত তাদেরকেই এটা ফেরত দিতে হবে।
তিনি বলেন, মোট ঋণের মধ্যে সরকারের বোঝা ২৫ শতাংশ, যেটা তিন লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। আর ৭৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের ঋণ। বেসরকারি খাতের মালিকরা যে ঋণ নিয়েছেন তার মধ্যে খেলাপি এবং মওকুফ আছে। এটার পরিমাণ ১০ লাখ কোটি টাকার ওপরে।
‘এর মধ্যে শ্রেণিকৃত -মওকুফ হচ্ছে এক লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণের অধিকাংশই বড় ঋণগ্রহীতা। এ বড় ঋণগ্রহীতারা এমনিতেই ফেরত দিতে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না। আর করোনার সুযোগে আরও আগ্রহী হবেন না। ক্ষমা চাইবেন, মাফ চাইবেন, পারলে বেশি চাইবেন, পারলে ঋণ না অনুদান চাইবেন, পারলে অনুদান না আরও বেশি কিছু চাইবে’ বলেন আবুল বারকাত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দলিলপত্র প্রকাশ হয় না এটা বড় কথা। বড় ঋণগ্রহীতা যারা সমাজে খুবই সম্মানিত, তারা ঋণ বাজারে একচেটিয়া কর্তৃত্ব করে। যেমন সর্বোচ্চ ঋণগ্রহীতা ২০ জনের কাছে আছে এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। যা মোট ব্যাংক ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ। একজন আছেন যার কাছে ঋণ, অগ্রিম, মওকুফসহ ৬৭ হাজার কোটি টাকা।
‘এখন দেশের মানুষ ৬৭ হাজার কোটি টাকা কত নিঃসন্দেহে জানেন না। ৬৭ হাজার কোটি টাকা হলো এখন আমাদের বর্তমানে যে স্বাস্থ্য বাজেট আছে তার চেয়ে ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যে বরাদ্দ তার ১৫ গুণ বেশি। আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় যে বরাদ্দ তার তুলনায় ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি। করোনা পরবর্তী সময়ে মন্দা অবস্থার কারণে তারা যদি বলেন ঋণ ফেরত দেবো না। আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ’ বলেন জনতা ব্যাংকের সাবেক এ চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, বড় ঋণগ্রহীতারা যারা এত বড় ঋণ নিয়েছেন তার বিপরীতে তারা কী বন্ধক দিয়েছেন? আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ ব্যাপারে মুখ খুলবেন না। অথবা মুখ খুললেও সত্য বলবেন না। মিথ্যা বললেও কেউ ধরতে পারবে না। আর কেউ ধরতে পারলে তাকে অনেক হেনস্থা হতে হবে। মুখ খুলবেন না এটা রাঘব-বোয়ালরাও জানেন। কেউ কেউ বলেন ওদের এক টাকা ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তির মূল্য ১২ পয়সা। আমরা অর্থনীতি সমিতি বলি এক টাকা ঋণের বিপরীতে ১২ পয়সা নেই, দুই পয়সা আছে। কারণ ইকুইটি যে ১২ পয়সা দেখান হয় সেটা অতিমূল্যায়িত।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বলেন, বড় বড় ঋণগ্রহীতারা কর্পোরেট গ্যারান্টি বলে একটি কাগজ দেন। এ কর্পোরেট গ্যারান্টি কী তা কেউ জানেন না। কর্পোরেট গ্যারান্টি কোনো দিনও কাজে লেগেছে কিনা কেউ জানে না। এটা সাধারণ একটি কাগজ। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে এ ধরনের একটি কাগজ। কিন্তু কৃষককে কৃষি ঋণ দিতে হলে তার দুনিয়ার কাগজ দিতে হয় এবং ঋণ ফেরত দিতে না পারলে মাজায় দড়ি বাঁধা হয়। যেটা সার্টিফিকেট মামলা বলা হয়।
তিনি বলেন, সামনে যখন রাষ্ট্রের খুব প্রয়োজন হবে করোনা আক্রান্ত সমাজ, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য তখন এ ১০ লাখ ১০ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ঋণের কী হবে? তাহলে দাঁড়াচ্ছে এমন সামনে মহা দুর্দিন, ঘোর অন্ধকার।
‘সরকারকে শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে এবং জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে। এ অন্ধকার থেকে আলোর পথে যেতে হলে মানুষকে কাজ দিতে হবে। ক্ষুদ্র বাণিজ্য-ব্যবসা সচল করার শক্তি যোগাতে হবে। অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিকদের দ্রুত কাজ দিতে হবে। কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সামনে এগোতে হবে। জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। মানুষ বাঁচাও কর্মসূচির আওতায় ৮-১০ কোটি দরিদ্রকে অন্ন জোগাতে হবে। শিল্প সেবা খাত উজ্জীবিত করতে হবে’ বলেন আবুল বারকাত।