ক্যাপ্টেন মারুফ রাজুঃ অবৈধ হাসিনা সরকারের অন্যতম ভাগীদার,হাসিনা পূত্র জয়ের ঘনিষ্ট বন্ধু, সুচিন্তা ফাউন্ডেসনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত অতি সম্প্রতি এই নিবন্ধটি লিখেছেন। দেশের জনগন এবং গনতন্ত্রের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ থাকলে তিনি একথ্যভাষায় ভাব প্রকাশ করতেন না। স্বভাবতই এই নিবন্ধ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলিতে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। অবৈধ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে চরম সুবিধা ভোগী এই সব আওয়ামী বুদ্ধিজীবির কাছ থেকে এধরনের কুরুচিপূর্ন লেখা আসবে এটাই তো স্বাভাবিক। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর অন্যতম এজেন্ট এই আরাফাতের মায়া-কান্না বিজরিত লেখাটি নীচে দেয়া হলো।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু ও রাজাকার ‘শাবক’দের ‘উল্লাস’- মোহাম্মদ এ আরাফাতঃ
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন যখন করোনা আক্রান্ত হলেন, এদেশের পাকি প্রেতাত্মাগণ ‘উল্লাস’ প্রকাশ করলো। রাজাকার শাবকদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মুক্ত পাতায় প্রকাশ্যে তার মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করলো। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, তার মতো একজন অজাতশত্রু নিষ্পাপ মানুষের মৃত্যু নিয়েও ‘উল্লাস’ প্রকাশ করলো রাজাকার ছানাগুলো।
রাজাকার শাবকগুলো সার্বক্ষণিক মুহম্মদ জাফর ইকবালেরও মৃত্যু কামনা করে। এরাই তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণও করেছিল হত্যার উদ্দেশ্যে। আক্রান্ত হয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল যখন হাসপাতালে তখন রাজাকার শাবকগুলো প্রতিনিয়ত তার মৃত্যু কামনা করেছে।
সৈয়দ আশরাফের মতো সজ্জন রাজনীতিবিদের মৃত্যুতেও তাদের ‘উল্লাস’ দেখেছি! অথচ, তারা পাকি আফ্রিদির করোনা পজিটিভে শোকে কাতর!
আমার যেকোনও লেখা বা বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজাকার শাবকগুলো তাদের মন্তব্যে যেরকম ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটায় তাতে মনে হয় ওরা আমার মৃত্যু কামনা করে এবং আমার মৃত্যুতে ওরা ‘উল্লাস’ প্রকাশ করবে। আমার অপরাধ কি ওদের কাছে? আমি কি ওদের পাকা ধানে মই দিয়েছি? হ্যাঁ, দিয়েছি। আমি প্রগতিশীলতার কথা বলি, আমি অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলি, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলি। বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই আমি, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ওদের মিথ্যা অপপ্রচারের জবাব দেই। আর এই জন্যই ওরা আমাকে ঘৃণা করে। একই কারণে ওরা অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মৃত্যু কামনা করে, অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে ‘উল্লাস’ প্রকাশ করে।
লুকিয়ে থাকা পাকি প্রেতাত্মা-রাজাকার-দালাল গং বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর বিজয় মিছিল করেছিল ঢাকা শহরের অলিতে-গলিতে। ১৫ আগস্ট ছিল ওদের জন্য উৎসবের দিন। এরাই ১৫ আগস্টে কেক কেটে মিথ্যা জন্মদিন পালন করার নামে আসলে করে ‘উল্লাস’। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে এদের উল্লাসের মূল কারণ কিন্তু একই। শুধু আমাদের কেউ কেউ না বুঝেই পা দিয়েছে ওদের ফাঁদে।
একই ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে ওরা গ্রেনেড ছুড়ে মেরেছিল শেখ হাসিনার দিকে, কেড়ে নিয়েছিল ২৪টি নিষ্পাপ প্রাণ। ওদের ঘৃণার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। ওরা চায় প্রগতিশীল রাজনীতির মৃত্যু। ওরা চায় বাংলাদেশে পাকিতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখ লাখ ফেক আইডি ব্যবহার করে ‘উল্লাস’ প্রকাশের প্লাবন তৈরি করে ওরা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। ওরা দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ ঘৃণিত দল। ঠিক যেভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের ডালা সাজিয়ে ১৯৭২-৭৫ সালে আওয়ামী লীগকে তারা ঘৃণিত করে তুলতে চেয়েছিল সাধারণদের মনে। অনেকখানি সফলও হয়েছিল তারা।
ধর্ষক-ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বিচার প্রক্রিয়া বল প্রয়োগ করে এদেশীয় পাকি দালাল গং, রুদ্ধ করে রেখেছিল বছরের পর বছর। ন্যায্য বিচারের প্রত্যাশায় বুক বেঁধে ছিল দীর্ঘদিনের ডুকরে ডুকরে কান্না। তাই বিচার প্রক্রিয়া সমাপ্তি ও সাজা বাস্তবায়নের পরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির যে ‘উল্লাস’ ছিল, তা ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিচার পাওয়ার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। অথচ, পাকি দালাল-রাজাকার শাবকগুলো তা মেনে নিতে পারেনি। ওরা ইসলামের নামে ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, শিশু হত্যা—সবকিছু জায়েজ করবে, আর তার বিচার করলে ওদের ঘৃণা আরও বাড়বে।
আমাদের প্রতি তাদের সকল ঘৃণা উড়ে যাবে এবং প্রেম চুইয়ে পড়বে এখনই, শুধু আমরা যদি প্রগতিশীলতা-অসাম্প্রদায়িকতাকে পরিত্যাগ করে মৌলবাদী পাকিতন্ত্রকে আলিঙ্গন করে নেই।
কিন্তু আমরা ওদের মতো বন্য নই। আমরা ওদের মতো অসভ্য নই। আমরা আছি ন্যায্য লড়াইয়ে। আমরা দীর্ঘদিনের রুদ্ধ মহা অন্যায়ের বিচারের রায়ে ‘উল্লাস’ প্রকাশ করি, কারও মৃত্যুতে নয়। আমরা ডা. জাফরুল্লাহর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হলেও তার প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কারকে স্বাগত জানাই, তার সাফল্যকে তরান্বিত করতে অবদান রাখি। তিনি অসুস্থ হলে, ‘উল্লাস’ নয় উদ্বেগ প্রকাশ করি। মনেপ্রাণে তার সুস্থতা কামনা করি।
কারণ, আমরা প্রগতিশীল। আমরা ইতিবাচক রাজনীতির পক্ষে। আমরা সহনশীলতার পক্ষে। আমরা ঘৃণার বিপক্ষে।
এখন বলুন, গণতন্ত্র চান? বন্য পশুদের দিয়ে পশুতন্ত্র হয়, গণতন্ত্র নয়। গণতন্ত্রের জন্য লাগে ‘গণ’, পশুদের দিয়ে গণতন্ত্র হয় না। অন্তরে যাদের এতো ঘৃণা, মানুষের মৃত্যুতে যারা ‘উল্লাস’ প্রকাশ করে। যারা ধর্মের নামে নারী ধর্ষণ করে, রাজনীতির নামে শিশু হত্যা করে, কৌশলের নামে গ্রেনেড ছুড়ে মারে, তাদের দিয়ে আপনি ‘গণতন্ত্র’ ‘গণতন্ত্র’ খেলবেন? হবে না। এরা পাশবিক, এদের গণতন্ত্র দিলে এরা গণতন্ত্রকে ছিঁড়ে খাবে। এরা গণতন্ত্রের যোগ্যই না। এরা গণতন্ত্র চায় মানুষের ওপর পশুতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য।