ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অতি সম্প্রতি লাদাখ সীমান্তে চীন-ভারত সংঘর্ষে ভারতের ২০ জওয়ান নিহত হয়েছেন, চীনেরও অন্তত ৪৩ সেনা হতাহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দু’পক্ষ থেকে উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চললেও পান থেকে চুন খসলেই বেঁধে যেতে পারে যুদ্ধ। সীমান্তে দুই পক্ষই মারমুখী অবস্থানে থাকায় সেই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়েও দেয়া যাচ্ছে না।
সত্যিই যদি চীন ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তবে মিত্র হিসেবে কে কোন দেশের সমর্থন পাবে?
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিককালে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েলসহ ইউরোপের দেশগুলো। ভারতের এসব দেশের সামরিক সম্পর্কও বেশ ঘনিষ্ঠ।
কাজেই চীনের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে এই দেশগুলো হয়তো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বা সামরিকভাবে ভারতকে সমর্থন দেবে।
অন্যদিকে, বিশ্বের মধ্যে চীনের তেমন কোনও মিত্র নেই। তবে ভারতবিরোধী দেশ হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো। এছাড়া রাশিয়াও চীনের বন্ধুরাষ্ট্র। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অতীতে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতেরও ভালো সম্পর্ক ছিল। ১৯৬২ সালে যুদ্ধের সময়ও রাশিয়া চীনের বদলে ভারতকেই সমর্থন করেছিল।
সুতরাং, এবার যুদ্ধ শুরু হলে ভারত বা চীনকে সমর্থনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশই আগে নিজেদের স্বার্থটাই দেখবে।
বাংলাদেশের অবস্থান কী হবে?
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে চীন ও ভারত উভয় দেশেরই সুসম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তখন কোনও পক্ষ নেয়ার জন্য কি চাপ বাড়বে বাংলাদেশের ওপর?
তবে বাংলাদেশের সরকার সরাসরি ভারতের পক্ষে অবস্থান নিলেও দেশের সিংহভাগ জনগন চীন-ভারতের সংঘাতে নিঃসন্দেহে চীনের পক্ষেই থাকবে।
বিবিসি বাংলা বলছে, এধরনের চাপ গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের ওপর রয়েছে। যেমন- ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেছিলেন, চীনের সাহায্যে চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে। চীনকে এই প্রস্তাব দিলে তারা সেটি গ্রহণও করেছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও জাপানের চাপে বাংলাদেশকে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার করতে হয়। পরে জাপানের সাহায্য নিয়ে চট্টগ্রামে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে।
তাই এধরনের চাপ বাংলাদেশের ওপর আগে থেকেই রয়েছে। এটি মোকাবিলায় বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেছে।
বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে যথেষ্ট সমরাস্ত্র নিয়েছে। বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তারা চীন থেকে প্রশিক্ষণও পেয়েছেন। আবার ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ, তবে সেটা সামরিক সম্পর্ক নয়। বাংলাদেশ এখনও ভারত থেকে তেমন সমরাস্ত্র কেনেনি। সেক্ষেত্রে এই সম্পর্ক অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি- সব দিক থেকেই বেশ জটিল।
সুতরাং বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যাদের চীন-ভারত দুই দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক, যুদ্ধ শুরু হলে তাদের জন্য বেশ জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে সন্দেহ নেই।
সূত্র: বিবিসি বাংলা