ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ হিমালয় অঞ্চলে ভারত ও চীনের মধ্যে লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) নামে যে কার্যত সীমান্ত রয়েছে সেখানকার পরিস্থিতি বেশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্তগুলোর একটি এই এলএসি পশ্চিম, মধ্য ও পূর্ব সেক্টরে বিভক্ত। ১৯৬২ সালে যুদ্ধের পর এই অস্পষ্ট সীমারেখা টানা হয় কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোন স্থায়ী সমাধান হয়নি।
দুই পক্ষের মধ্যে এবার সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা ঘটে পশ্চিম সেক্টরে। সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ এলএসির নাজুক অবস্থা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কয়েক দিন আগের এই সংঘর্ষে অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। চীনা সেনাদের মধ্যেও হতাহত হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও তার কোন সরকারি ভাষ্য নেই।
উভয় পক্ষের নেতারা কথার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও তাদের কথায় কতটুকু কাজ হয়েছে তা সর্বশেষ ঘটনায় বুঝা যায়।
গত মাসে ভারত এলএসি’র কাছে লাদাখ এলাকায় জঙ্গিবিমানের মহড়া দেয় আর এই সপ্তাহে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) তার জবাব দেয় তিব্বতের কাছে প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকায় মহড়া চালিয়ে।
পিএলএ তিব্বত মিলিটারি রিজিয়নের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৪,৭০০ মিটার উচ্চতায় একটি অজ্ঞাত স্থানে পিএলএ তিব্বত মিলিটারি রিজিয়নের একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন ইনফ্যান্ট্রি-ট্যাঙ্ক কোঅপারেশন ড্রিল চালায়। এর মাধ্যমে সেনাদের টিমওয়ার্ক, দ্রুত সাড়াদানের যোগ্যতা ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করা হয়।
এই মহড়ায় চীনের অত্যাধুনিক নতুন টাইপ-১৫ ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়। গত বছর চীনের জাতীয় দিবসে প্রথম এই ট্যাঙ্ক জনসম্মুখে হাজির করা হয়েছিলো। হালকা ধরনের ট্যাঙ্কগুলো উপত্যকার পার্বত্য ভূমিতে দ্রুত চলাচল করতে সক্ষম। গত জানুয়ারিতে প্রথম এগুলো এলএসি’র কাছাকাছি মোতায়েন করা হয়।
টাইপ ১৫ ট্যাঙ্কের আর্মার কিছুটা পাতলা ও এর মেইন গানও ছোট ১০৫ মিলিমিটার। ফলে পার্বত্য এলাকায় অভিযান পরিচালনার কাজে এগুলো খুবই উপযুক্ত। নরিনকোর তৈরি ৩৩ টনের এই ট্যাঙ্কগুলোর ওজন গতানুগতির মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্কের ওজনের প্রায় অর্ধেক। ফলে এগুলো হালকা বাতাস ও বন্ধুর ভূখণ্ডে সহজে চলাচল করতে পারে। ভারি ট্যাঙ্কের ইঞ্জিন সাধারণত অক্সিজেনের অভাবে এসব এলাকায় চলাচল করতে পারে না।
টাইপ ১৫ ট্যাঙ্কের এক-হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন বন্ধুর এলাকায় চলাচল ও দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যথেষ্ঠ। এর ১০৫ মিলিমিটার গান আর্মার-ভেদকারী গোলা ও গাইডেড মিসাইল ছুঁড়তে সক্ষম।
নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে পার্বত্য ভূমিতে চলতি মাসের গোড়ার দিকে আরেকটি মহড়া চালায় পিএলএর ৭৬তম গ্রুপ, তাতে চীনের টাইপ ৯৯ মেইন ব্যাটল ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হয়। টাইপ ৯৯ ট্যাঙ্ক কিছুটা ভারি। এতে সোভিয়েট টি-৭২ ও জার্মানির লিওপার্ড ২ ট্যাঙ্কের প্রভাব রয়েছে। টাইপ-৯৯ ট্যাঙ্কের গোলাবর্ষণ ক্ষমতা বেশি এবং আর্মার অনেক বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। এগুলো উচ্চভূমির পরিবেশেও চলাচল করতে পারে।
চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য উচ্চ-পর্যায়ে বেশ কিছু বৈঠক হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে দুই পক্ষই শান্তির আশাবাদের পাশাপাশি যুদ্ধের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সূত্র : ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট ও সাউথ এশিয়ান মনিটর