ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবৈধ হাসিনা সরকারের সাবেক একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী। এক সময় বিদেশে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোন করাপশনের অভিযোগ নেই। পড়াশুনা করা লোক। লেখালেখিও করেন। জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংস্থার পদে ছিলেন বিদেশে। তখন শেষ জীবনে থাকার জন্যে ঢাকার বনানীতে একটা বাড়ি কেনেন।
ওপরে নীচে দশ বারোটি রূম। অনেক দিন ধরে বাড়িটি নিজের মতো করে সাজাচ্ছিলেন। বিদেশে থাকা স্বত্ত্বেও বাড়িটি কখনও তিনি ভাড়া দেননি। যখন মন্ত্রী হলেন তখন থাকতেন সরকারি বাংলোয়।
ওই সময় বাড়িটায় থাকতেন তাঁর ছেলে শাহেদ। কিন্তু সরকারি ক্ষমতার বাইরে যাওয়ায় পর এই সাবেক দাপুটে মন্ত্রী পড়লেন ভিন্ন এক সমস্যায়। যে সমস্যা তিনি বাইরে কারও সঙ্গে শেয়ার করতেও পারেননা।
কারন সমস্যা তাঁর ছেলে শাহেদ। বাবা মন্ত্রী থাকতে বাবার নাম ভাঙ্গিয়ে নানাকিছু করেছে। কিন্তু এখন বাবার মন্ত্রিত্ব নাই দেখে সে বাবাকে অচ্ছুত ক্ষমতাহীন ভাবতেও শুরু করে দেয়! বাবাকে তাঁর নিজের বাড়িতে উঠতে দিতে চায় না।
তার বক্তব্য, দশ বছর ধরে বাড়িটায় ফ্যামিলি নিয়ে থাকতে থাকতে সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কাজেই বাবা-মা তথা বুড়োবুড়ির এখন আর এ বাড়িতে আসার দরকার নেই! দরকার হলে সে বাবাকে অন্য কোথাও বাড়ি ভাড়া করে দেবে।
আলীশান বাড়ি হবে সেটি। বাবা-মা’কে দেখাশুনা রান্না করে খাওয়ানোর জন্যে রেখে দেবে দু’জন কাজের লোক। এরপরও বুড়ো-বুড়ি যাতে এ বাড়ির দিকে না আসেন। এ নিয়ে মানসিক বিড়ম্বনায় পড়েন সাবেক মন্ত্রী।
না কিছু কইতে পারেন। না কিছু সইতে পারেন। অন্যদিকে তিনি যে সরকারি বাংলোয় থাকতেন সে বাড়ি অন্য মন্ত্রীর জন্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সে বাড়িতে নতুন মন্ত্রীর পরিবার উঠবে। তারা তাগাদা দিচ্ছে।
অথচ সাবেক মন্ত্রীর বড় আশা ছিল ছেলে-ছেলের বউ, নাতি-নাতনি নিয়ে এক বাড়িতে থাকবেন। এরজন্যে তিনি এত বড় বাড়ি করেছিলেন। কিন্তু ছেলে তাঁকে তাঁর স্বপ্নের নিজের বাড়িতে উঠতে দিতে চায় না!
উল্টো তাঁকে পাঠাতে চায় এক রকম বৃদ্ধাশ্রমে! সাবেক মন্ত্রী তাঁর ছেলেবেলা, বাবা-মা’র সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক, তাদের যৌথ পরিবারের আনন্দময় জীবনের কথা ভাবেন আর চোখ মোছেন। আগে সবাই কি আনন্দে দিন কাটাইতেন।
বাড়িতে তার বাবা, দাদা সবাই মিলে এক সঙ্গে পাটি মিলিয়ে বসে খেতে বসতেন। তাঁর মা, বড় বোন, ভাবী কত যত্মে আদর করে তাদেরকে খাওয়াতেন। প্রথমে দাদা’র, এরপর বাবা’র প্লেটে খাবার দেয়া হতো।
পরিবারের পুরুষ মুরব্বিদের সিরিয়াল আগে। বড়মাছের মাথাটাও দেয়া হতো তাদের প্লেটে। মুরব্বিরা পরে সেটি সবাইকে ভাগ করে দিতেন। আগের সম্পন্ন পরিবারের নানান রেওয়াজও ছিল ভিন্ন।
প্রতিদিন রান্নার আগে বাড়ির বৌ অনুমতি নিতেন পরামর্শ করতেন শাশুড়ির সঙ্গে। কী পরিমান ভাত রান্না করবেন। কী কী তরকারি থাকবে। আর এখনকার সমাজ সংসার কেমন বদলে গেলো!
শাহেদকে বড় আদরে তারা বড় করেছেন। পড়াশুনা করিয়েছে ইংরেজি মাধ্যমে। বিদেশেও পড়িয়েছেন। সে ছেলের বয়সও এখন প্রায় পঞ্চাশ। বাবা মন্ত্রী থাকতে সে ধানমন্ডির বাড়িতেই ছিল।
মন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়াবার পর যখন নিজের বাড়িতে উঠতে বাধা পেলেন ছেলের তখন বাধ্য হয়ে তিনি এক শীর্ষ কর্মকর্তার স্মরনাপন্ন হন। তারা ঠিক করলেন বিষয়টি গোপন রাখতে হবে।
সাবেক মন্ত্রী কান্না জড়িত কন্ঠে সেই কর্মকর্তাকে বলেন, "আমি এখন অবসরে। দলে কোন পদেও নেই। আমার আর বাকি জীবনে, কোন পদে যাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তাই তুমি যদি পারো আমাকে আমার বাড়িতে উঠিয়ে দাও।"
পরিকল্পনা মাফিক গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন সাদা পোশাকে বাড়িটায় যান। সেখানে গিয়ে তারা শাহেদকে তাদের পরিচয় দেন। এরপর তারা তার বাবা সাবেক মন্ত্রীর জিনিসপত্র তাদের রূমগুলোয় গুছিয়ে তাদের তুলে দেন নিজের বাসায়।
ওই সময়ে সেখানে সেই কর্মকর্তার ফোন যায়। ফোনটি তাঁর, যিনি পুরো আয়োজনটি সাজিয়েছেন। লাউড স্পিকারে ফোনের কথাবার্তা শাহেদকে শোনানো হয়। "সব ঠিক আছে, তারপর বললেন আচ্ছা আচ্ছা, কোন ঝামেলা হয়নিতো,
না স্যার। ঠিকমত নিজের রুমে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছেন?। তারপরে বললেন, আচ্ছা তুমি আমাকে চিন্তা থেকে মুক্ত করলে, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ব্যাপারটি যেন বাহিরের লোক না জানে।"
মিশন সাকসেসফুল হবার পরপরই আরেকটা টেলিফোন আসলো, এবার লাউডস্পিকারে ওপাশ থেকে শোনানো হয়, স্যার মিনিস্টার স্যারকে দোতালার মাস্টার বেডরুমে উনার সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে দিয়ে এসেছি।
ওনার জন্য একটা রিডিং রুম রেডি করে ওনার যাবতীয় বইপত্রসহ সবকিছু গুছিয়ে দিয়েছি, স্যার এইমাত্র ঘরে এসে ঢুকেছেন। আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি এখন চলে আসছি।
যে কর্মকর্তা এই কাজটি করেছেন তিনিও এখন একজন সাবেক আমলা। মিশন সাকসেসফুল হবার পর তিনি বলেছেন, এই জীবনে এই প্রথম সরকারের প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করে, একটু ক্ষমতা দেখালাম’।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছিলাম, স্যারের ছেলে জানবে তোমরা কারা, কোন কিছু বলতেও পারবেনা আর সহ্য করতেও পারবে না। আর ছেলে যদি কিছু বলে, তাহলে শক্তি প্রয়োগ করবে।
তাকে কোন একটা ঘরে নিয়ে জানালা দরজা বন্ধ করে দিয়ে, জবাব দিয়ে দিতে বলবা যে, এটা তোর বাবার আশ্রয় ।" এরপর ওনির্বাক মুখোমুখি কিছুক্ষণ পরষ্পরের দিকে তাকিয়ে থাকা। সাবেক মন্ত্রী আস্তে আস্তে বললেন, জীবনের এই পর্যায়ে নিজের মাথা গোঁজার স্বপ্নের শেষ আশ্রয়ের দখল নিতে হলো।
আমাদের এই সাবেক মন্ত্রীর নাম আবুল মাল আব্দুল মুহিত। যিনি তাঁকে সহায়তা দিয়েছেন তিনি সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা জনাব নজিবুর রহমান।