DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

মোস্তাকের ভাগ্নে জটিলতাঃ ডা.ফেরদৌসের আমেরিকান পাসপোর্টে জন্মস্থান পাকিস্তান কেন?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে  হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহনকারী আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোস্তাক আহমেদের ভাগ্নের পরিচয় দিয়ে নিউ ইয়র্কের বিতর্কিত ডা. ফেরদৌস খন্দকার পাকিস্তানে থাকার ফলে তার আমেরিকান পাসপোর্টে জন্মস্থানের নাম পাকিস্তান লেখা রয়েছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনা প্রকাশের পর ডা. ফেরদৌস খন্দকারের আসল নাগরিকত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তিনি প্রকৃতপক্ষে  বাংলাদেশি নাকি পাকিস্তানী এ নিয়েও নতুন করে ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

কূটনৈতিক একটি সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিকদের পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকয়ার্ড ফর ট্রাভেল টু বাংলাদেশ’ লেখা থাকার কারণে তাদের বাংলাদেশের জন্য আলাদা করে ভিসা নিতে হয় না। অথচ গত ২৩ জুন বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমকে তিনি নিজেই জানিয়েছেন তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ফলে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যেতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আগামী ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে তিনি আবার ফিরে আসবেন এবং তার সঙ্গে আসা ২০ সদস্যের চিকিৎসক দলটি বাংলাদেশে করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত হবেন।
কূটনৈতিক সূত্রটি আরো জানিয়েছে ডা. ফেরদৌস খন্দকার এর আমেরিকান পাসপোর্টে প্লেইস অব বার্থ এর স্থানে পাকিস্তান লেখা রয়েছে। তাহলে তিনি কি আমেরিকায় পাকিস্তানী পাসপোর্টে ঢুকেছিলেন, যার ফলে লিগালাইজেশনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টকে পাকিস্তানের বার্থ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়েছে। অভিযোগে জানা যায়,নিজের মামার নাম কাকতালীয় ভাবে মোস্তাক হবার কারণে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাকের ভাগিনা সেজে পাকিস্তানি পাসপোর্টে আমেরিকায় পাড়ি দিয়ে ঐদেশের নাগরিকত্ব নেন।
সূত্রটি জানায় আমেরিকায় নাগরিকত্ব নেয়ার আগে তিনি যদি বাংলাদেশী হতেন তাহলে তাঁর পাসপোর্টেও নো ভিসা রিকয়ার্ড সিল থাকতো।

প্রশ্ন উঠেছে যে মা-মাতৃভূমির সেবা করার জন্য তিনি বাংলাদেশ ছুটে গেলেন তিনি কেন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে তার পাসপোর্টে জন্মস্থান পাকিস্তান কেন রয়েছে? ১৯৭১ সালের পূর্বে যাদের জন্ম হয়েছে তারাতো স্বাধীন বাংলাদেশ থেকেই বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েছেন। কেউ তো নিজেদের পাকিস্তানী নাগরিক বলেন না। বিদেশে ১৯৭১ সালের পূর্বে জন্ম হওয়া অসংখ্য বাংলাদেশী থাকলেও কারো পাসপোর্টে পাকিস্তান লেখা রয়েছে এইরকম তথ্য জানা নেই বলে জানালেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক ডেস্কে কর্মরত একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ।
২০ জনের যে দলটির কথা বলছেন ফেরদৌস খন্দকার, তারা কারা সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেননা তিনি যাবার সময় বলেছেন ১২ জন। এখন বলছেন ২০ জন। দেশের মানুষদের করোনা থেকে উদ্ধার করার জন্য চিকিৎসক দল নিয়ে গেছেন অথচ সে দলে কারা ছিলেন কখনোই তিনি জানাননি। আমেরিকার ডাক্তারদের সংগঠন বিএমএও জানেনা কোনর কোন ডাক্তার গিয়েছেন ডাক্তার ফেরদৌস এর সাথে। পাদপ্রদীপের আলোয় শুধু তিনি। নাকি এর অন্তরালে আরো কোন গূঢ় রহস্য রয়েছে সেটি এখন পর্যালোচনা করছে সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ।
এদিকে ৭ জুন বাংলাদেশে পৌঁছার পর ঢাকা শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে দুই সপ্তাহের কোয়ারিন্টনে বনানীতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ফেরদৌস খন্দকার এর ফেসবুক থেকে জানা যায় ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর গত ২২ জুন ছুটে গেলেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্লাজমা দিতে। স্বাভাবিক ভাবেই মহান ডাক্তারের ছবি সমেত পোষ্ট। পোষ্টটি দিয়েছেন সাংবাদিক নামধারী ডাক্তারের পেইড এমপ্লয়ী শামিম আল আমীন এর পরিবর্তে বাংলাদেশে হায়দার আলী। তবে নাম পরিবর্তন হলেও দুজনই একই পত্রিকা কালের কণ্ঠের সাংবাদিক। ফেরদৌস খন্দকার এর ফেসবুকে হায়দার আলীর পোষ্টে দেখা যায়, একই দিন একই সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাৎকার দিলেন। সেই ভিডিওটিও ডাক্তারের ফেসবুকে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে বিভ্রান্ত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এবার দেখা যাক সেই সাংবাদিকের ভাষায় তিনি কি লিখলেনঃ

নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে আসা ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন কালের কণ্ঠকে। পরিবার ছেড়ে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন দেশের সেবা করতে। মনে কষ্ট থাকলেও কোনো অভিযোগ নেই বলে জানালেন আমেরিকা প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকার।” সর্বশেষ খবরও দিলেন সেই সাংবাদিক। হলো ২৩ জুন সকালে কালের কণ্ঠে গিয়েছিলেন নিউইয়র্কের ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার।

এর আগে একটি সূত্র জানিয়েছে-ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকার যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতার কাছে স্বীকার করেছেন, তিনি একজন জামাত নেতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবসা করেছেন। জানা যায়-ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের ব্যবসায়ীক পার্টনারের নাম আতাউল ওসমানী। সে ছিলো চট্টগ্রাম মেডিকেলের জামাতের সেক্রেটারি।
বর্তমানে নর্থ আমেরিকার মুসলিম উম্মা সংক্ষেপে ইকনা’র কালচারাল ডিরেক্টর। ২০১৯ বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন অব আমেরিকার নির্বাচনে ডা. ফেরদৌস বিএনপি- জামাতের প্যানেলের ছিলেন অর্থ যোগান দাতা ছিলেন বলে অভিযোগ করছে তার বিরোধীরা। কারণ, ঐ নির্বাচনে ব্যবসায়ীক বন্ধু আতাউল ওসমানীর পক্ষে নির্বাচনী সভাও করেছেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ফাঁসাবার জন্য এফবিআইএর সাবেক এজেন্ট রবার্ট লাস্টিক এবং বিএনপির রিজভী আহমেদ সিজারসহ যে গ্রুপটির সাজা হয় তাদের সাথেও রয়েছে ডাক্তার ফেরদৌস খন্দকারের ব্যবসায়ীক পার্টনারের নাম আতাউল ওসমানীর সম্পর্ক। নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা দাবী করলেও ২০১৯ সালের আগে নিউ ইয়র্কে ডা. ফেরদৌসকে জাতির পিতার জন্মদিন, মৃত্যুবার্ষিকী, ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চের কোন অনুষ্ঠানে কোনদিন দেখা যায়নি। ডাক্তার ফেরদৌস যে একজন ভণ্ড প্রচারসর্বস্ব পাকি এ বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!