ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ আবারও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হামলার শিকার হলেন সাংবাদিকরা। গতকাল মুগদা হাসপাতালে ছবি তুলতে গিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক জয়ীতা রায় ও দেশ রূপান্তরের ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সেখানকার আনসার সদস্যরা।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে হাসপাতাল চত্বরে করোনা পরীক্ষার নমুনা দিতে লাইনে দাঁড়ানো রোগীর সন্তানকে মারধরের ছবি তুলতে গেলে সেখানকার আনসার সদস্যরা এ হামলা চালায়।
তারা ফটো সাংবাদিকের ক্যামেরাও ভাঙচুর করে। এ হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক কাজল হাজরা হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন।
হামলার শিকার জয়ীতা রায় জানান, হাসপাতালে কভিড-১৯ টেস্টের জন্য আসা রোগীদের সিরিয়ালের ছবি তুলছিলাম। এ সময় আনসার সদস্যদের একজন লাইনে থাকা রোগীদের চলে যেতে বলেন। সিরিয়ালে থেকেও টেস্ট করাতে না পারায় একজন রোগী প্রতিবাদ জানান।
এ সময় রোগীর স্বজনরাও কাছে ছিলেন। একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা নারী রোগীর ছেলের কলার ধরে হাসপাতালের ভিতরে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকেন। আমি তখন সেই ছবি তুলতে গেলে আনসার সদস্যরা হামলা চালান। এ সময় রুবেলের ক্যামেরার লেন্সের ফিল্টার ভেঙে যায়। আনসারদের হামলার শিকার আরেক ফটো সাংবাদিক রুবেল রশীদ বলেন, হাসপাতালে কভিড-১৯ টেস্টের জন্য ৪০ জনকে টিকিট দেওয়া হয়। কিন্তু ৩৪ জনের পরীক্ষা করেই আনসার সদস্যরা বলেন আজ পরীক্ষা শেষ। তখন ৩৬ নম্বর সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা শাওন হোসেন নামের এক যুবকের সঙ্গে আনসার সদস্যদের তর্কাতর্কি হয়। একপর্যায়ে আনসাররা তার গায়ে হাত তোলেন। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার ছবি তুলতে যান বাংলাদেশ প্রতিদিনের আলোকচিত্রী জয়ীতা রায়। এ সময় আনসার সদস্যরা অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে জয়ীতাকে মারতে তেড়ে যান।
জয়ীতা এ সময় দৌড়ে নিজেকে নিরাপদে সরিয়ে নেন। আমিও ছবি তুলতে এগিয়ে যাই। তখন আনসার সদস্যরা আমাকে মারধর করেন। ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ফিল্টার ভেঙে ফেলে। আনসার সদস্যরা সাংবাদিকদের গালাগাল করতে থাকে এবং বেঁধে রাখার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে তারা বলেন- এখানে আমাদের রংবাজি চলবে, সাংবাদিকদের কোনো কাজ এখানে চলবে না। পরে কোনো মতে ক্যামেরা উদ্ধার করতে সমর্থ হই।
জানা গেছে, মায়ের করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য মুগদা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছিলেন রাজধানীর মুগদার দক্ষিণ মান্ডা এলাকার বাসিন্দা শাওন হোসেন। ভোর ৫টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও পরীক্ষা করানোর অনুমতি পাননি। এ নিয়ে কর্তব্যরত আনসার সদস্যদের সঙ্গে তার বাগ্বিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে আনসার সদস্যরা তার কলার ধরে হাসপাতালের ক্যাম্পে নিয়ে যান। এ ঘটনার ছবি তুলতে গেলে আনসার সদস্যরা লাঞ্ছিত করেন দুই ফটো সাংবাদিককে।
ভুক্তভোগী শাওন হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত দুইবার মুগদা হাসপাতাল থেকেই করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করিয়ে তিনি মাকে কেমোথেরাপি দিয়েছেন। গত ২০ জুন তৃতীয়বারের মতো বুথে পরীক্ষা করান। কিন্তু সময়মতো ফল না পেয়ে ২৩ জুন তিনি অভিযোগ বক্সে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। তারপরও ফল না পাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী ২৬ জুন তিনি নোটিস বোর্ডে নোটিস দিয়ে যান। পরদিন হাসপাতালে গিয়ে আবারও নোটিস দেন। কিন্তু তাতেও কাজ না হলে বৃহস্পতিবার পুনরায় তার মাকে পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতাল থেকে বলা হয়।