DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

মেডিকেল ইক্যুপমেন্টের নামে খালি বাক্স সাপ্লাই দিয়ে ৯০০কোটি টাকা হরিলুট।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে বিভিন্ন জরুরী ডাইগনোস্টিক মেশিন সরবরাহ না করেই  ৯০০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চেয়ারম্যান ও লেক্সিকোন মার্চেন্ডাইজ ও টেকনোক্র্যাট লিমিটেডের মালিক মো. মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।

২০০৯/১০ অর্থ বছর থেকে শুরু করে ২০১৯/২০ অর্থবছর পর্যন্ত সময় এই টাকা তুলে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সাম্প্রতিককালে দেশে বালিশ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। বালিশের দাম অস্বাভাবিক পরিমান বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে বালিশটা দেওয়া হয়েছে। পর্দা কেলেঙ্কারিতেও পর্দার দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পর্দাটাও দেওয়া হয়েছিল।

তবে মিঠুর অভিনব দুর্নীতি যেখানে এমআরএই, এক্সরে, ক্যানসার রেডিয়েশনের মতো অত্যন্ত দামী মেশিন দেওয়ার নামে কোন মেশিনই দেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র খালি বাক্স মোড়কজাত করে দেওয়া হয়েছে।

২০১১ সালে সাতক্ষীরার সদর হাসপাতালে কাগজে কলমে একটা এমআরআই মেশিন সাপ্লাই দেওয়া হয়।

কিন্তু সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, সেখানে কোনদিনই এমআরআই মেশিন যায়নি। এমআরআই মেশিন নাম করে সেখানে একটি বাক্স গিয়েছিল। সেই বাক্সের মধ্যটা ছিলো ককশিটে ভরা।

হাসপাতালের সিভিল সার্জন সেটা রিসিভ করছেন, বিলও পাস হয়েছে। ২০১২ অর্থবছরে বকেয়া বিল হিসেবে এই বিলের টাকা তোলা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকাশ হলো এমন কোন মেশিন সেখানে যায়নি কখনো। এন ৯৫ এর মাস্কের ক্ষেত্রে একই কাণ্ড করেছিল জেএমআই। এখানে মোড়কের ভিতর কিছু ককশিট ঢুকিয়ে এটাকে ভারি করা হয়েছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি বকেয়া বিল সংস্কৃতি চালু করার অভিযোগ রয়েছে মিঠুর বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে একটা যোগসাজশ করে এই সংস্কৃতি চালু করেন তিনি। মিঠুর কোম্পানিটি ২০১১-১২ অর্থবছরে বকেয়া বিল নিয়েছে ১৭০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ সালে বকেয়া বিল তুলেছে ২৬৩ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ সালে ১১৯ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ সালে তোলা হয়েছে ২০৯ কোটি টাকা- এভাবে বকেয়া বিল তুলেছে মিঠুর কোম্পানি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেউ বলতে পারে না এই বিল কিভাবে এবং কোথায় থেকে দেওয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি গ্রুপের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোথাও মেশিন সাপ্লাই না দিয়েই চালান সংগ্রহ করেছে। শুধু চালানের কাগজপত্রেই ছিলো মেশিন। বাস্তবিক কোন মেশিন সেখানে সাপ্লাই দেওয়া হয়নি। মিঠু এমন অনেক হাসপাতালে মেশিন সাপ্লাই দেওয়ার বিল তুলেছেন, যেখানে ওই মেশিনগুলোর কোন দরকারও নেই।

কুমিল্লার একটি হাসপাতালে এক্সরে মেশিন সরবারহ করার বিল তোলা হয়েছে। বাস্তবে দেখা গেছে সেখানে কোন এক্সরে মেশিনই নেই। ঢাকার একটি হাসপাতালে ক্যান্সারের মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে, বাস্তবে দেখা গেছে সেখানে পুরনো একটা মেশিন দেওয়া হয়েছে নামকাওয়াস্তে। যেটা কোনদিন কোন কাজে আসবে না। মেশিনটি পুরনো পরিত্যাক্ত। আর এভাবেই মিঠু মেশিন না দিয়েই শত শত কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন।

এছাড়াও  মিঠুর কোম্পানি থেকে যে মেশিনগুলো দেওয়া হয়েছিল, সেসব মেশিনও কাজ করছে না। একটা সময় পর্যন্ত মিঠুর সঙ্গে আবজাল ছিলো বিজনেস পার্টনার। দুজন মিলে এমন দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি গড়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি সূত্র বলছে, মেশিন না দিয়েই টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে। মিঠুকে আগামী ৯ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে রেকর্ডপত্রসহ বক্তব্য দেওয়ার জন্য তলব করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই বলে গণ্য করা হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!