ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্ট তৈরি করে বিপুল অর্থ আয় এবং হাজার হাজার মানুষের জীবন বিপন্ন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ওরফে সাবরিনা শারমিন হুসাইন ও তার চতুর্থ স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে মুখোমুখি করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ভার্চুয়াল আদালতে আরিফের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। বিকেলে তাকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (ডিবি) মিন্টো রোডের কার্যালয়ে। পরে তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আরিফকে ডিবি কার্যালয়ে দেখেই ক্ষেপে ওঠেন সাবরিনা। বলেন, ‘তোর কারণে আজ আমার এই পরিণতি। আমি তোকে ছাড়ব না।’
গতকাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওভাল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরীর সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে ডিবি। আদালতের বিচারক আবু সুফিয়ান মো. নোমান ভার্চুয়াল কোর্টে শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, করোনার সনদ জালিয়াতির বিষয়ে জেকেজি হেলথ কেয়ার নামের প্রতিষ্ঠান ও ওভাল গ্রুপের সঙ্গে ডা. সাবরিনা নিজের সম্পৃক্ততা এখনো অস্বীকার করছেন। তার দেওয়া বিভিন্ন খুদে বার্তা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার প্রমাণ উপস্থাপন করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এসব প্রশ্নের জবাবে সাবরিনা পুলিশকে বলেছেন, ‘আরিফ আমাকে ফাঁসিয়েছে।’ আরিফকে ডিবি কার্যালয়ে দেখেই ক্ষেপে ওঠেন সাবরিনা। বলেন, ‘তোর কারণে আজ আমার এই পরিণতি। আমি তোকে ছাড়ব না।’ পরে উপস্থিত কর্মকর্তারা তাকে শান্ত করেন।
ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুবর রহমান বলেন, ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্টের বিষয়ে ডা. সাবরিনা বলেন যে তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানের কেউ নন। তখন তার মোবাইল ফোনের মেসেজগুলো তাকে দেখানো হলে বলেন যে ঐ সব মেসেজ আরিফুল তাকে পাঠাতে বাধ্য করেছেন। তিনি আরো বলেন, করোনার সনদ জালিয়াতির বিষয়টি ক্রসচেক করতে দুজনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অন্যদিকে ডিবির জেরায় আরিফুল সনদ জালিয়াতির সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে দায়ী করছেন তার চাকরিচ্যুত কর্মচারী সাবেক গ্রাফিকস ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী জেকেজির নার্সকে। আরিফুল দাবি করেছেন, নানা অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত করার পর তারা ওয়েবসাইট খুলে ভুয়া সনদ দেওয়ার ব্যবসা শুরু করেন। নিজেরা বাঁচতে জেকেজির ওপর দোষ চাপিয়েছেন।
এদিকে অপর এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সাবরিনা ও আরিফের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের কাজ পাইয়ে দিতে যারা সহযোগিতা করেছেন, তারা কেউ এখান থেকে লাভবান হয়েছেন কি না, সেটাও যাচাই করা হচ্ছে। তাদের পেছনের শক্তি কারা, সে বিষয়ে গোপন তদন্ত করা হচ্ছে।
করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ জুন জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয় কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশি তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে করোনার সনদ জালিয়াতিতে ডা. সাবরিনার নাম আসে। গত ১২ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। গতকাল আরিফকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।